জোর-জুলুম লুট-পাটের মাধ্যমে শীর্ষ ধনী হওয়া যায়, দানবীর হওয়া যায় সে নজির এদেশে কম নেই, রাগীব আলী তাদের মধ্যে অন্যতম।
দেবোত্তর সম্পত্তি দখল, নিজের জন্মগ্রামের নাম বদলে নিজের নামে করে ফেলাসহ নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন রাগীব আলী। সর্বশেষ দখল করা দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর
চা বাগান ফিরিয়ে দিতে আদালতের রায় ঘোষণার ফলে ফের আলোচনায় উঠে আসেন এই রাগীব আলী।
সিলেট অঞ্চলে রাগীব আলীকে শুধু রাগীব আলী নামে কেউ চেনে না, চেনে দানবীর রাগীব আলী নামে। এর বাইরেও নানান বিশেষণ রয়েছে তার নামের সাথে। তার নিজ মালিকানাধীন পুত্রের সম্পাদিত পত্রিকায় এসব বিশেষণের ছড়াছড়ি থাকে। এমনকি তাকে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিল বলেও পরিচয় করে দেওয়া হয়, যদিও তিনি রাজাকার ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নামের আগে কখনো ‘ড.’ কখনো ‘সৈয়দ’ এরকম নানান পদবী তাদের ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ পত্রিকায় দেখা যায়। যদিও সত্য যারা জানে তাদের কাছে তার মূল পরিচয় দখলকারী এবং লুণ্ঠনকারী হিসেবে।
তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার ভূমি আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলার পলাতক আসামি শিল্পপতি রাগীব আলী শেষ পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
প্রসঙ্গত রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি ভূমি জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে দখল করার দুটি মামলা এ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। জিআর মামলা নং ৭৭৪/২০০৫ ও ১১৪৬/২০০৫। রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা দুটি ২০০৫ সালে দায়ের করে সিলেট সদর উপজেলার তদানীন্তন ভূমি কমিশনার। এছাড়াও রাগীব আলীর বিরুদ্ধে পলাতক থাকা অবস্থায় তার প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকার প্রকাশক পদ ধারণের জন্য আরেকটি মামলা (সিআর ১১১০/২০১৬) পরিচালিত হচ্ছে।
ভূমি সংক্রান্ত দুটি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলেসহ অভিযুক্ত ৬জনের বিরুদ্ধে গত ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলে ওইদিনই ভারতে পালিয়ে যান রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই। পরে সিলেটে প্রবেশকালে গত ১০ অক্টোবর আবদুল হাইকে আটক করে পুলিশ। পরে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। এ মামলার আরেক আসামী ও তারাপুর বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এছাড়াও মামলায় রাগীব আলীর মেয়ে রোজিনা কাদির, মেয়ের জামাই আবদুল কাদির ও আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদ এখনো পলাতক রয়েছেন।
গতকাল ভারতের ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসার মেয়াদ বাড়াতে গেলে আলীকে গ্রেফতার করে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারত থেকে বাংলাদেশে হস্তান্তরকালে পুলিশ রাগীব আলীকে হাতকড়া পরায়। এ সময় তিনি পুলিশকে হাতকড়া না পরানোর জন্য অনুরোধ করেন। হস্তান্তরকালে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজেও রাগীব আলীকে হাতকড়া পরতে অস্বীকৃতি জানাতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।