Headlines

নগরাঞ্চলের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প ও ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন

বাংলাদেশে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। এর মধ্যে বন্যা, নদীভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বজ্রপাত, খরা, ভূমিধ্বস ও ভূমিকম্প অন্যতম। বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প না হলেও বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপ্রবণ। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, রংপুর ও চট্টগ্রাম শহর ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সাড়াপ্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে অদ্য ১১/১১/২০১৭ ইং রোজ শনিবার সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এর জন্য ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং প্রকল্প অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত সভার আয়োজন করেছেন পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)। বক্তব্য দিয়েছেন, ৩৩ নং ওয়ার্ড এর মহিলা কাউন্সিলর নাছরিন রশিদ পুতুল, তিনি সকলকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ভূমিকম্প ও দুর্যোগ মোকাবেলায় নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। ৩৩ নং ওয়ার্ডের বিচার ও শালিস পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি/প্রধান সমন্বয়কারী নাজির আহম্মদ বলেছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে দক্ষ ট্রেইনার দরকার। দুর্যোগ শুধু প্রাকৃতিক নয়, মনুষ্যসৃষ্ট অনেক দুর্যোগও রয়েছে। আগাসাদেক রোডে অনেক জুতার কারখানা, উক্ত কারখানার লোকেরা যখন জুতোতে সলিয়শন বা পেষ্টিং ব্যবহার করে প্রায় সময় দেখা যায় ধূমপান অবস্থায় পেষ্টিং করে এটি এমন একটি ক্যামিক্যাল যা আগুনের সংস্পর্শে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। অতীতে নিমতলী ট্রাজেডি থেকে তার প্রমাণ মিলেছে যে একটি ক্যামিক্যাল থেকে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে।

তাই তিনি সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কিছুদিন আগে ৩৩ নং ওয়ার্ডের এক ব্যক্তি চাবি নিক্ষেপ করলে চাবিগুলো বিদ্যুৎ এর তারে আটকে যায়, তখন সেই ব্যক্তি একটি লোহার রড দিয়ে চাবিগুলো নামাতে গিয়ে বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে মারা যান। যা মর্মান্তিক ঘটনা। আরও বলেছেন, মানুষ নির্দিষ্ট স্থানে পলিথিনগুলো ফেলে না; তা ড্রেনে জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিস অফিসার রওশন জামিল বলেছেন, যখন বাড়ী-ঘরে আগুন লাগবে সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিস অফিসে ০২-৯৫৫৫৫৫৫ (কণ্টোল রুম) নম্বরে ফোন দিলে ৩৩ সেকেন্ড এর ভেতরে গাড়ীতে উঠে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রওনা হন, জীবন বাজি রেখে কাজ করেন। একইসাথে তিনি সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ওয়ারী থানা শাখার সভাপতি প্রাণতোষ তালুকদার বলেছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যাদের নেয়া হবে তাদের অতীত জেনে নিতে; সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন তিনি। সচেতন ব্যক্তিরাই পারবে সকল জনগণকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, নদীভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বজ্রপাত, খরা, ভূমিধ্বস ও ভূমিকম্পের মোকাবেলার সঠিক পথ দেখাতে। যদি কমিটিতে অসচেতন লোক ঢুকানো হয়। তাহলে কিছুই করা সম্ভব হবে না।

পিএসটিসি এর কর্মকর্তাগণ বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে অনেক পুরাতন ভবন ও সরু সড়ক। বেশিরভাগ নতনু বহুতল ভবনগুলোও সঠিকভাবে ভূূমিকম্প সহনশীল করে নির্মাণ করা হয়নি। রয়েছে নানা রকমের ঝুঁকি, বিপদাপন্ন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে বেশিরভাগ মানুষ। ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগের ঝুঁকি নিরুপণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উক্ত ঝুঁকিহ্রাস কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কোনো বরাদ্দ না থাকার পাশাপাশি জনসাধারণ পর্যায়ে দুযোগ সচেতনতার অভাব রয়েছে। এলাকাসমূহের স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভূমিকম্প সচেতনতায় তেমন কোনো পদক্ষেপ না থাকায় জনসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা বেশি।
একটি দুর্যোগ সহনশীল নগর নির্মাণে প্রয়োজন রয়েছে সমন্বিত উদ্যোগ, বিদ্যমান আইন ও নীতি কাঠামোর আলোকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়। ভূমিকম্পসহ নগরাঞ্চলের অন্যান্য দুর্যোগ যথা অগ্নিকান্ড, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি), প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ এর সহযোগিতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত ৪টি ওয়ার্ডে “নগরাঞ্চলের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি” প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন আর্থিক সহায়তা করছে ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হিউমেনিটারিয়ান এইড এন্ড সিভিল প্রটেকশন’ বিভাগ। প্রকল্পটি ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, জোনাল অফিস, সিটি কর্পোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, ওয়ার্ড পর্যায়ে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। প্রকল্পটি এলাকার বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী তথা নারী, পুরুষ, শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে।
প্রকল্পটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০২১-এ সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত যার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ সহনশীলতা তৈরী হবে। এ প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আওতাধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত; এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, এসওডি এবং নীতিমালাসমূহের আলোকে পরিচালিত হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে পিএসটিসি এবং প্লান ইন্টারন্যাশনাল-এ একদল অভিজ্ঞ কর্মীদল আছেন, যারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী। এছাড়াও নিয়মিতভাবে ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিদর্শন করা হবে এবং পরিদর্শন পরবর্তী সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে পিএসটিসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রকল্পের অগ্রগতি কর্ম এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিস, জোনাল অফিস, সিটি কর্পোশেন এবং জেলা প্রশাসকের অফিসে মাসিক/ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রেরণ করার কথা বলেছেন।

রাজধানী ঢাকার ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে নগরাঞ্চলের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প ও ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং প্রকল্প অবহিতকরণ সভায় বক্তব্য দিয়েছেন, ৩৩ নং ওয়ার্ড এর মহিলা কাউন্সিলর নাছরিন রশিদ পুতুল, ৩৩ নং ওয়ার্ডের বিচার ও শালিস পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি/প্রধান সমন্বয়কারী নাজির আহম্মদ, ফায়ার সার্ভিস অফিসার রওশন জামিল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ওয়ারী থানা শাখার সভাপতি প্রাণতোষ তালুকদার, মন্দিরের পুরোহিত ও মসজিদের ইমাম সাহেবগণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনে পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এর প্রকল্প সমন্বকারী মোঃ ইকবাল হাসান, প্রজেক্ট অফিসার তাহমিনা আক্তার, মনিটরিং অফিসার উর্মিলা নখরেট, ফিল্ড এ্যাসিট্যান্ড সুবর্ণা রাণী ভৌমিক, সাহিদুন নাহার, নাজমুল হক, মেহেদী হাসান প্রমুখ।


প্রাণতোষ তালুকদার