অভাবের তাড়নায় ২০১২ সালে ১৫ বছর বয়সী মেয়ে পারভীন আক্তার সুমিকে কাজের জন্য ননদের মেয়ে ফাতেমা আক্তারের কাছে দিয়েছিলেন মা খোদেজা বেগম। তারপর পেরিয়ে গেছে দশটি বছর। এই দশ বছরে মেয়ে সুমির সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি খোদেজা। মেয়ের খোঁজ নিতে ফাতেমার বাড়িতে গেলে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয় ফাতেমা ও তার স্বামী শের আলী। পাগলপ্রায় খোদেজা বেগম যাকেই পাচ্ছেন আকুতি-মিনুতি করছেন মেয়েকে ফিরে পেতে। বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া গ্রামের আবুল খা’র স্ত্রী খোদেজা বেগমের অভিযোগ তার মেয়েকে ভারতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
খোদেজা বেগমের প্রতিবেশি নাঈম হাওলাদার বলেন, মেয়ের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা এ মহিলা। দরিদ্রতার কারণে তিনি একসময় মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও এখন আর কাজ করতে পারেন না। সারাদিন শুধু মেয়ের জন্য বিলাপ করেন। আর পরিচিত কোনো মানুষের সাথে দেখা হলেই মেয়েকে ফেরানোর জন্য সহযোগিতা চান।
ষাটোর্ধ খোদেজা বেগম জানান, সুমি ছাড়াও তার আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলে আল আমিন ও স্বামী আবুল খাঁ ভ্যান চালায় এবং দুই মেয়ে স্বামীর বাড়িতে। খোদেজা ও তার পরিবারের দাবি বর্তমানে ফতেমা স্বামী শের আলীর সাথে খুলনা শহরের সেনহাটি ২নম্বর ঘাটে বসবাস করেন। খোদেজা অভিযোগ করে বলেন, ফাতেমা ও তার স্বামী সুমিকে ফরিদপুরের জাকির ও খুলনার আজমলের মাধ্যমে ভারতে দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। ফতেমার কাছে মেয়ের খোঁজ নিতে গেলে আমাকে গালিগালাজ করে, বলে বিয়ে করে তোমার মেয়ে ফিরে আসবে। বেশি জ্বালাবা না। তাইলে কিন্তু মেয়েকে কখনো ফিরে পাবা না। তবে দশ বছরেও ফাতেমার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোথাও কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি বলে জানান খোদেজা ও তার পরিবার।
খোদেজার প্রতিবেশী সাফিয়া বেগম বলেন, ফাতেমা এসে সুমিকে নিয়ে গেল। আর ফিরে আসেনি। শুনেছি ভারতে পাচার করে দিয়েছে। দশ বছরে কাউকে কখনো একটা ফোনও করেনি মেয়েটা। সুমির বাবা আবুল খাঁ বলেন, ফাতেমা বেগম আমার বোনের মেয়ে। মামা হয়ে আমি ওর পা ধরে কান্না করেছি মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য। তারপরও সে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেয়নি। বরং এখন গেলে আমাদের গালিগালাজ করে ফাতেমা ও তার স্বামী শের আলী।
এ বিষয়ে গোটাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী বলেন, আবুল খাঁ’র পরিবারটি খুবই দরিদ্র। মানুষের বাড়ীতে কাজ করে কোনোমতে দিনপার করে। বেশ কিছুদিন আগে মেয়ের খোঁজ পেতে আমার কাছে খোদেজা বেগম ও আবুল খাঁ এসেছিলো। আমি তাদের লিগ্যাল এইডের একজন আইনজীবীর সাথে যোগোযোগ করিয়ে দিয়েছি, যাতে দরিদ্র পরিবারটি বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা পায়।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে কখনো কেউ আসেনি। আপনার কাছ থেকেই জানলাম বিষয়টি। তবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসলে অবশ্যই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এসএম আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারটি আমাদেরকে বিষয়টি জানায়নি। পরিবারটি যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খোদেজা বেগমের দেওয়া নাম্বার— ফাতেমা বেগম (০১৯৩৪-৭৪৫৫২২) ও আজমলকে (০১৮৭৫-৮১৫৩৭৬) ফোন করা হলে তাদের মুঠোফোন দু’টি বন্ধ পাওয়া যায়।