পিছনে পাহাড় সমান অপরাধের বোঝা ধামাচাপা দিয়ে দু’টো উপজেলায় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে আছেন অনিন্দ্য দাস

রূপশা উপজেলা

অনিন্দ কুমার দাশ, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে খুলনার দাকোপ উপজেলায় কর্মরত। একইসাথে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন রূপসা উপজেলায়। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একটি ব্যস্ত পদ। প্রশ্ন উঠেছে— যেখানে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে এরকম একটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করাই কঠিন, সেক্ষেত্রে কীভাবে তিনি খুলনার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন? দাকোপ থেকে রূপসা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। রূপসা খুলনা জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে কাছের উপজেলা। সেক্ষেত্রে কীভাবে দাকোপ উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক রূপসা উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক হতে পারে বুঝতে পারছে না সচেতন নাগরিক সমাজ।

এ বিষয়ে অনিন্দ দাশের সাথে কথা বললে তিনি রূপসা উপজেলায় মাত্র দুই মাস দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান। এর বেশি কিছু জানতে চাইলে ফলোআপ নিউজ-এর সাংবাদিককে তার কর্মস্থলে যেতে বলেন।

রূপসা উপজেলা
তিনি ২ মাস বললেও ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, তিনি রূপসা উপজেলাতে দায়িত্বে আছেন গত বছরের জুলাই থেকে। ছবিঃ উপজেলা ওয়েবপোর্টাল থেকে নেওয়া।

ফলোআপ নিউজ অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে— খাদ্য পরিদর্শক অনিন্দ দাশের প্রভাব অনেক। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হলেও কেউ তার কিছু করতে পারেনি। বরং নিজের পছন্দের লোকদের সাথে নিয়ে পদায়ন নিয়েছেন। যেমনঃ দাকোপ উপজেলায় তার সাথে কর্মরত রয়েছেন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে দিবাকর দেবনাথ এবং খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে পল্লব ঘোষ। রূপসা উপজেলায় তার সাথে কর্মরত অফিসারদের নাম ওয়েবসাইটে উল্লেখ নেই।

আশ্চর্য হলেও সত্য— অনিন্দ কুমার দাশের নাম আরো এক জায়গায় রয়েছে। তিনি রূপসা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তাও? ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী একজন কর্মকর্তা কীভাবে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা হতে পারেন?

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক
অনিন্দ দাশ, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস, রূপশা, খুলনা।

 

এ বিষয়ে জানতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন-এর টিএনটি নম্বরে (কোনো মোবাইল নম্বর ওয়েব সাইটে দেওয়া নেই) ১০ এপ্রিল ফোন করা হলে তিনি ফোন তোলেননি। এরপর সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক বনী আমিনকে ফোন করা হলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন রাখতে বলেন। প্রশ্নের উত্তর হোয়াটসঅ্যাপে না পেয়ে আবার তাকে ফোন করা হলে তিনি অফিস টাইমে (আগামী রবিবার) জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে ফোন করতে বলেন। বিভিন্নভাবে বুঝালে তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নম্বরটি দিতে রাজি হন, এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বরাত দিয়ে বলেন তাকে যাতে ১১ এপ্রিল ফোন দেওয়া হয়।

খুলনা
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খুলনা। ছবিঃ জেলা ওয়েব পোর্টাল থেকে নেওয়া।

১১ এপ্রিল (২০২৫) খুলনা জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন-এর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, কিছুদিন  হলো তিনি খুলনায় যোগদান করেছেন। অনিন্দ দাশকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন পূর্বের ডিসি-ফুড মোঃ তাজুল ইসলাম। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। মোঃ তাজুল ইসলাম, যিনি গোপালগঞ্জের খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার চর্চা খাদ্য অধিদপ্তরে রয়েছে। লোকবল সংকটের কারণে এভাবে দায়িত্ব দিতে হয় বলে তিনি জানান।

গোপালগঞ্জ
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, গোপালগঞ্জ। ছবিঃ জেলা ওয়েব পোর্টাল থেকে নেওয়া।

ফুড অফিসার অনিন্দ দাস, যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে, তিনি কীভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দূরবর্তী আরেকটি উপজেলায় দায়িত্ব পান এ বিষয়ে খুলনাবাসীর মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে মেলেনি।

সম্পর্কিত সংবাদঃ

নিজের পদোন্নতি আটকাতে মামলার আশ্রয় নিলেন খাদ্য কর্মকর্তা

বগুড়ায় চালের দাম নির্ধারণ করল প্রশাসন, বেশি নিলেই ব্যবস্থা

খুলনায় তিন প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ বন্ধের নির্দেশ

অনিয়ম দুর্নীতির প্রশ্রয় দিচ্ছে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ