Headlines

পোশাক কারখানায় নামাজ বাধ্যতামূলক করা বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী // আইনমন্ত্রী

নামাজ বাধ্যতামূলক

বাংলাদেশে একটি পোশাক কারখানায় সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য অফিস চলাকালীন প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে যোহর, আসর ও মাগরিবের নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিবিসির কাছে এ ধরণের নির্দেশনাকে বাংলাদেশের সংবিধান বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

 মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আইন কেন সংবিধানেই তো বলা আছে ধর্ম কারো উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কোনোভাবেই এই বাধ্যবাধকতা দেওয়া যায় না। ইসলাম ধর্মও বলে না কারো ওপরে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে। আপনি যেমনটি বলছেন, তেমনটি হলে তো এটা খতিয়ে দেখতে হবে।

জানা যায়, ঢাকার কাছে গাজীপুরে অবস্থিত মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের ফ্যাক্টরিতে নোটিশ জারি করা হয়েছে যাতে বলা হয়েছে, সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য অফিস চলাকালীন প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে যোহর, আসর ও মাগরিবের নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। যদি কোনো স্টাফ মাসে সাত ওয়াক্ত পাঞ্চ করে নামাজ না পড়েন তবে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির বেতন হতে একদিনের সমপরিমাণ হাজিরা কর্তন করা হইবে।

নির্দেশের কারণ হিসাবে ফ্যাক্টরিটির অপারেশন্স বিষয়ক পরিচালক মেসবাহ ফারুকী বলেছেন, “সবাই আমরা নামাজ পড়ি। আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আমাদের নামাজ পড়া ফরজ। এখানে মুসলমান যারা আছে তারা সবাই নামাজ পড়ে। কিন্তু তারা নামাজ পড়ে বিক্ষিপ্তভাবে।”

তাছাড়া, তিনি আরও বলছেন, কর্মীদের মধ্যে মতভেদ-দূরত্ব কমানোর একটি উপায় হিসাবে কারখানায় নামাজ বাধ্যতামূলক করার এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।

“আমাদের এখানে বিভিন্ন মতভেদের লোক আছে। এখানে একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হয়। এখানে ফেব্রিক ডিপার্টমেন্টের সাথে নিটিং সেক্টরের হয়ত একটা সমস্যা থাকে। একেকজন একেকজনের ওপর দোষারোপ সারাদিন চলতেই থাকে। তো আমি এটার সমাধান হিসেবে চিন্তা করলাম তাদের যদি একসাথে বসানো যায়, একসাথে কিছু সময় যদি তারা কাটায়, তাদের মধ্যে দূরত্বটা কমবে।”

তিনি বলছেন, তার কাছে মনে হয়েছে মসজিদ ছাড়া একসাথে বসানোর কোনো পন্থা তিনি খুঁজে পাননি।

ফারুকী তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাস্থ্যগত একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলছেন, সারাদিন বসে বসে কাজ করায় কোলেস্টেরল বাড়ছে, ডায়াবেটিস বাড়ছে। “মসজিদ চারতলায় হওয়াতে কিছুটা ব্যায়ামও হচ্ছে।”

নোটিশে যেভাবে একদিনের বেতন কাটার কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলছেন, “এ পর্যন্ত কারোর বেতন কাটা হয়নি।”

রপ্তানির জন্য সরকারের দেওয়া জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জাপান, রাশিয়া ও আমেরিকা অঞ্চলের বেশ কিছু দেশে তাদের ব্যবসা। ২০১৬ সালে তাদের রপ্তানি আয় ছিল ৯০ মিলিয়ন ডলার।

মূলত গেঞ্জি কাপড়ের নানা ডিজাইনের পোশাক তৈরি হয় এখানে। প্রতি মাসে তাদের রপ্তানি ১৮ লাখ পিস পোশাক। মেসবাহ ফারুকী বলছেন, বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তারা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীকে নামাজ পড়তে বাধ্য করছেন না।

এ বিষয়ে লেখক-প্রকাশত মতিন বাঙালির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেছেন, বিষয়টি বেআইনি তো অবশ্যই, পাশাপাশি এর মধ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়।  

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত উগ্রবাদী মানসিকতা থেকে আসতে পারে। বিষয়টি সরকারের উচিৎ বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা। 

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা