গত ২১ মার্চ (২০২২) তারিখ দিবাগত রাতে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী প্রশিকার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহম্মদকে গ্রেপ্তারের জন্য মানিকগঞ্জের কৈট্টায় প্রশিকার ট্রেনিং সেন্টারে অভিযান চালায় পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন পল্লবী থানার ওসি ও তার বাহিনী বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার সহযোগিতায় মানিকগঞ্জের কৈট্টায় প্রশিকার মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে (প্রশিকার ট্রেনিং সেন্টার) এ অভিযানটি চালায়। পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে কাজী ফারুক আহম্মদ তার দেহরক্ষীর সহযোগিতায় লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে রাতের আধারে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, কাজী ফারুক আহম্মদ ২০০৯ সালের ২৪ মে প্রশিকার গভার্নিং বডি কর্তৃক প্রশিকার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন। নিজের রাজনৈতিক উচ্চবিলাস চরিতার্থে প্রশিকার কর্মীকল্যাণ তহবিলের অর্থের অপচয়, তসরুপসহ আরো অন্যান্য অনেক অভিযোগের ভিত্তিতে কাজী ফারুককে প্রশিকার চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়। কাজী ফারুক আহম্মদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা ও ১২ টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এসব গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও পাঁচ বছরের জেল হওয়া সত্ত্বেও তিনি গত কয়েক বছর ধরে আইনকে তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাফেরা করছিলেন। এছাড়াও ২০১৯ সালের ২৪ মে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে চেক জালিয়াতি ও ঋণ পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলায় পাঁচ বছরের জেল হয়। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে আইনের উর্ধ্বে ভেবে চলমান প্রশিকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সর্বত্র বাঁধার সৃষ্টি করে আসছিলেন। মানিকগঞ্জের কৈট্টায় প্রশিকার সম্পদ নিজের অধীনে কুক্ষিগত করে রেখে শুধু তার ব্যক্তিগত আরাম আয়েশের ও অবকাশ যাপনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
মানিকগঞ্জের কৈট্টায় অবস্থিত প্রশিকার এই ট্রেনিং সেন্টার থেকে পূর্বে প্রতি মাসে সকল স্টাফদের বেতন ভাতা পরিশোধ করার পরও কয়েক কোটি টাকা আয় হত। অর্থনৈতিকভাবে সচল এমন একটি স্থাপনাকে শুধুমাত্র নিজের প্রতিহিংসা চরিতার্থে অচল করে রেখেছেন এবং নিজের ভোগবিলাসের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। দেশের সাধারণ জনগণ ও প্রশিকার স্টাফরা এই অর্থনীতির সাথে জড়িয়ে তাদের তথা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সচল রেখেছিলেন৷ কাজী ফারুক নিজেকে সর্বক্ষেত্রে আইনের উর্ধ্বে ভেবে এরকম একটি অর্থনৈতিকভাবে সচল স্থাপনাকে স্থবির করে রেখেছেন এবং কাজবিহীন, বেতনবিহীন কয়েকশত স্টাফ আজকে এজন্য মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঠিক একইভাবে মিরপুর ২ নম্বরে অবস্থিত প্রশিকার ১৪ তলা ভবনটিকেও নিজের ইচ্ছেমতো যেনতেনভাবে ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু বৈধ গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগকৃত বৈধ প্রধান নির্বাহী জনাব সিরাজুল ইসলাম এই ভবনে প্রায় দুই হাজার স্টাফকে নিয়ে কাজী ফারুক কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রশিকাকে পুনর্গঠন করে দেশের অন্যতম এনজিওগুলোর একটি করে গড়ে তুলেছেন। এই ১৪ তলা ভবনের স্টাফদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাজী ফারুক কিছু ভাড়া করা লোককে কর্মী পরিচয় দিয়ে নিয়োগ দেন, যাদের কাজ হচ্ছে প্রশিকার বৈধ কর্মীদের নানানভাবে হেনস্তা করা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র দেশের অন্যতম এনজিওগুলোর একটি। বর্তমানে জনাব সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমগুলো দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান যেন কিছুতেই একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও স্বেচ্ছাচারীর ক্ষমতার অপব্যবহারে বিনষ্ট না হয় এবং কাজী ফারুক আহম্মদ যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, তিনিও যে আইনের উর্ধ্বে নয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ প্রশাসন গত ২১ মার্চ ‘২২ তারিখে এরই প্রমাণ রেখেছেন। আশা করা যাচ্ছে খুব শীগ্রই কাজী ফারুক আহম্মদকে গ্রেফতার করতে তারা সক্ষম হবেন।
প্রেসবিজ্ঞপ্তি
পাঠিয়েছেন প্রশিকার তথ্য নথিবদ্ধকরণ ও গণসংযোগ বিভাগে কর্মরত জুয়েনা ইয়াছমিন