ফেনীতে এক শিশু গৃহকর্মীর পুরো পিঠ আগুনে ঝলসে নির্যাতনের পর গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গুরুতর আহত ১০ বছর বয়সী আমেনাকে ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার শরীরের পেছনের প্রায় পুরোটাজুড়ে গভীর ক্ষত দেখা গেছে। তার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
ফেনী পৌরসভা চত্বর এলাকার আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের মালিক শমছু মিয়ার স্ত্রী আফরোজা ও তার মেয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ও সাংবাদিকরা গিয়ে বাড়িতে কাউকে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
হাসপাতালের চিকিৎসক অসীম কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, রোববার দুপুরে ভর্তির পর থেকে তাকে সব রকম চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
“তার পিঠসহ পেছনের প্রায় পুরোটাজুড়ে গভীর ক্ষত রয়েছে। ক্ষতস্থান তিন-চার মাস আগের হওয়ায় ইনফেশন হয়ে গেছে। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার আমেনা কিছুটা অসংলগ্ন আচরণ করছে। তার শারীরিক অবস্থা নাজুক।”
আমেনার কোনো স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সে পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলোনিয়া এলাকার আবুল কালেম ও শেফালির মেয়ে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে।
আমেনা বলছে, বছর কয়েক আগে তার মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হলে এক আত্মীয় তাকে ফেনী শহরে নুরিয়া মসজিদের পেছনে আফরোজা ম্যানশনে গৃহকর্মীর কাজ দেন।
“কিছুদিন পর গৃহকর্ত্রী আফরোজা আমাকে ঢাকায় তার মেয়ের বাসায় পাঠান। ওই বাসায় নির্যাতন চালান তার মেয়ে। ঠিকমতো কাজ না করার অজুহাতে একপর্যায়ে চুলার আগুন দিয়ে আমার পিছনের অংশ ঝলসে দেন।”
পরে তাকে আবার ফেনীর আফরোজা ম্যানশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জানিয়ে আমেনা বলছে, এখানে আফরোজা তার ওপর আরও নির্যাতন চালান।
“কিছুদিন পর আফরোজা আমাকে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের করে দেন। এরপর আমি ফেনী রেলস্টেশনে থাকতাম।”
তাকে উদ্ধার করেন শহরের তাকিয়া রোডের বাসিন্ধা মিজানুর রহমান।
মিজান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার রাতে তিনি বাসায় ফেরার সময় তাকিয়া রোড এলাকায় আমেনাকে দেখতে পান। তাকে তিনি বাসায় নিয়ে যান। পরদিন হাসপাতালে ভর্তি করান।
রোববার রাতে পুলিশ ও সাংবাদিকরা আমেনাকে নিয়ে আফরোজা ম্যানশনে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পায়।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ আমেনার দেওয়া তথ্যানুযায়ী আফরোজা ম্যানশনে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তার আগেই তারা সবাই পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করায় যায়নি।”
আফরোজা ফেনী শহরের পৌরসভা চত্বর এলাকার আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের মালিক শমছু মিয়ার স্ত্রী।
এ ঘটনায় নির্যাতিত আমেনার পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম।
মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন বা বাড়ি সম্পর্কে আমেনা ঠিকমতো কিছু বলতে পারছে না।