বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন, এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই- বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
শুক্রবার সিলেট নগরীর মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়াম হলে বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর প্রজেক্ট ‘লন্ডন-১৯৭১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি মানিক। নিজেও বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিলেতে সে সময়ে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ন আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন সময়ে যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী তরুণ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সেসব দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কথা উল্লেখ করেন বিচারপতি মানিক। মোশাররফ হোসেনও বিলেতে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এবং সেসময়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তৎকালীন সময়ে মোশাররফ হোসেনের সংগ্রামী ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে তাঁর বর্তমান অবস্থান নিয়ে আফসোসও করেন মানিক। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, একাত্তরে আমরা একবার জয় বঙ্গবন্ধু বললে মোশাররফ বলতেন তিনবার। অথচ এখন তিনি জয় বঙ্গবন্ধু দূরে থাক, জয় বাংলাও বলেন না।
কারণ তিনি জিয়াউর রহমানের দলে যোগ দিয়েছেন। এই জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের স্পষ্ট হাত ছিলো।
বিচারপতি মানিক বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর রাষ্টপ্রতিসহ মন্ত্রীসভায় রাজাকারদের ঠাঁই দিলেন। তখনও খন্দকার মোশাররফ হোসেন এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি। জিয়াউর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন তিনি। অথচ কিছুদিন পরই জিয়ার দলে যোগ দেন মোশররফ। এখন জয় বাংলা বলা তাদের কাছে হারাম।’
নিজে বিচাপতি থাকাকালে মোশররফ হোসেনের একটি মামলা তাঁর আদলতে আসলে তিনি বিব্রত হন উল্লেখ করেন বিচারপতি মানিক বলেন, ”ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব আবার কোর্টে এই মামলা নিয়ে আসেন। তখন আমি তাকে বলেছি, ‘একাত্তরে মোশাররফ সাহেব আমার সহযোদ্ধা ছিলেন। আমি তার মামলা চালাতে পারবো না’।”
‘লন্ডন-১৯৭১’ আলোকচিত্র প্রদর্শনী সম্পর্কে তিনি বলেন, ’এতে আমাদেরও উপকার হয়েছে। আমরা সেসব দিনের অনেক স্মৃতি ভুলে গিয়েছিলাম। এসব ছবি দেখে তা নতুিন করে মনে পড়বে। আর উপকৃত হবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। পাকিপ্রেমী জিয়াউর রহমান আর পাকিপ্রেমী খালেদা জিয়া সরকার যাদের ভুল ইতিহাস শিখিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এইসব পাকিপ্রেমী সরকারগুলো নতুন প্রজন্মকে শিখেয়েছে পাকিস্তান আমাদের বন্ধু, আর ভারত শত্রুু। তাই পাকিস্তানের খেলা হলে বাংলাদেশের তরুণদের অনেকে দেখি গানে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে মাঠে যায়। পাকিস্তানের অনেক খেলোয়াড়ের জন্য বাংলাদেশের মেয়েরা উন্মাদ। এগুলো খুবই লজ্জ্বার ব্যাপার। ‘
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য এবং পাকিপ্রেমীদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছিলো। কিন্তু এখন তা থেমে গেছে। আমরা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্নের দাবি জানাচ্ছি।
এসময় মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সরানো নিয়ে প্রধান বিচারপতিরও সমালোচনা করেন সাবেক এই বিচারপতি।
তিনি বলেন, আজকে দেশে যে সন্ত্রাস হচ্ছে তার পেছনে জামায়াতের অর্থ। জামায়াতের সবচেয়ে বড় ধনকুবের মীর কাসেমের ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু তার সম্পদ রয়ে গেছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সম্পদ রয়ে গেছে। এই সম্পদ দিয়েই তারা দেশে সন্ত্রাস করছে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয়েছে যুক্তরাজ্যে। আর সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নব্বই শতাংশ লোকই ছিলেন সিলেটের।
যুক্তরাজ্যসহ দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই আন্দোলন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সহযোগীতা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক দেশই আছে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে কিন্তু আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বীকৃতির অভাবে স্বাধীনতা পাচ্ছে না।
এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত, প্রফেসর এমেরিটাস ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সকলের জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনী প্রতিদিন বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৮টায় শেষ হবে। চলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ছবি ও সংবাদ: সিলেটটুডে