Headlines

বিজ্ঞান ক্লাসে সৃষ্টিতত্ত্ব পড়ানোয় মোবাইল কোর্টে দুই শিক্ষককে সাজা দিয়েছিল ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আদালতও একজনকে সাজা দেয়!!

মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক।

ঘটনাটি ঘটেছিল বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক অশোখ কুমার ঘোষাল ক্লাসে সৃষ্টিতত্ত্ব পড়াতে গেলে জন্ম নেয় অপ্রিতীকর এ ঘটনাটি।

মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক।
ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মহলী (ডানে) এবং বিজ্ঞান শিক্ষক অশোখ কুমার ঘোষাল।

এক বা দুজন শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিভাবকরা একত্রিত হয়ে স্কুলটিতে আক্রমণ করে, যাতে সেদিন অশোখ কুমার ঘোষাল এবং প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মহলী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

অভিযোগ অনুযায়ী স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক গত ২৪ এপ্রিল ক্লাসে ধর্ম সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলে প্রধান শিক্ষকের কাছে। পরে প্রধান শিক্ষক বিজ্ঞান শিক্ষকের পক্ষ নেয় বলে জানায় তারা। এরই প্রেক্ষিতে অভিভাবকরা ২৫ এপ্রিল স্কুলটিতে আক্রমণ করে। অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন জানালেন বিষয়টিতে ম্যানেজিং কমিটির মদদ ছিল, বিশেষ করে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কথা তারা বলেছেন।

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে যান এবং কার্যত তিনি আইন এবং তার একতিয়ার বহির্ভূতভাবে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ঐ দুজন শিক্ষককে সাজা প্রদান করেন। পরবর্তীতে আদালত প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মহলীকে বেকসুর খালাস দিলেও বিজ্ঞান শিক্ষক অশোখ কুমার ঘোষালকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং অনাদায়ে দশ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মহলী বলেন, “এই যে অকারণে মোবাইল কোর্টের সাজায় সতেরো দিন জেল খাটলাম এর কৈফিয়ত কে দেবে? চাইলে আমি তো মানহানির মামলা করতে পারি। চলতে ফিরতে এখন আমার অসুবিধা হয়। মানুষ তো আমার দণ্ডের বিষয়টি জানে, কিন্তু আমি যে আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি সেটি তো মানুষ জানে না। আমাদের কাছে এসে তো কেউ দুঃখ প্রকাশও করেনি।” 

আদালতের রায়ে পাঁচ হাজার টাকা দণ্ড দেওয়া হয় বিজ্ঞান শিক্ষক অশোখ কুমার ঘোষালকে, তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কোনো মতামত করতে রাজি হহনি। পরে বলেছেন, তিনি নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি কোথাও আর আস্থা রাখতে পারছেন না।

আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি স্কুলটির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে। তারা সমস্বরে মনে করে যে বইতে যেভাবে সৃষ্টিতত্ত্ব লেখা আছে সেভাবেই পড়ানো উচিৎ এবং এটা পড়াতে গিয়ে শিক্ষকের স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ থাকা উচিৎ। “মানুষ কোথা থেকে এল।” এরকম একটি প্রশ্ন তাদেরকে করা হলে যে কয়জন শিক্ষার্থী উত্তর দিতে পেরেছে তারা বলেছে যে তারা বিজ্ঞানের আলোকে সৃষ্টিতত্ত্ব যেভাবে বইতে লেখা অাছে সেটি তারা বিশ্বাস করে।