মুন্সীগঞ্জে ভূমি অফিস যেন দুর্নীতির আখড়া। স্থানীয়রা বলছেন, বেতকা ভূমি অফিসে টাকা দিয়ে সব অসম্ভবই সম্ভব। অনিয়মের কারণে অফিসটির কর্ণধারকে যোগদানের শুরুতেই বরখাস্ত করা হলেও ফিরেছেন বহাল তবিয়তে। আর এখন অফিসটিতে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না।
পাইকপাড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন মোল্লা বলেন, বেতকা চৌরাস্তার কাছে উত্তর বেতকা মৌজায় সাড়ে ২৪ শতাংশ জায়গা দীর্ঘদিন ধরে লিজ নিয়ে ভোগদখল করছি। ২০১৩ সালে ৭ লাখ টাকা দিয়ে নামজারি করেছিলাম। পরবর্তীতে যখন দেখছি বিষয়টি অনৈতিক, তখন তৎকালীন ইউএনও হাসিনা আক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। বলার পরে আমি কিন্তু জায়গাটা ছেড়েও দিয়েছি। পরে ইউপি চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান শিকদার রিগ্যান ১৫ লাখ টাকা দিয়ে নামজারি করেছে এবং নামজারির করার ৪০-৪৫ দিনের মাথায় সেই নামজারি বাতিলও করেছে।
এ ব্যাপারে বেতকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান শিকদার রিগ্যান বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তারাই নামজারি করে দিল, তারাই যাচাই-বাছাই করল, দখলে আছে কিনা প্রতিবেদন দিল তারাই আবার নামজারি কয়েক দিনের মাথায় নামজারি বাতিল করল। এটা আমার মাথায় ধরে না। কোনো যোগসূত্রের কারণেই নামজারিটা বাতিল করে দিয়েছে।
এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, নীলমনি দত্তের রেকর্ড উত্তর বেতকা মৌজার আরএস ৬০৫, ৬০৬ ও ৬০৭ দাগের সম্পত্তি তার পুত্র প্রদীপ দত্তের নামে ৪৯ শতাংশ নামজারির পরই আমার কাছে রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করে দেন। সেখানে সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। সামনের দোকান সবই আমার দখলে। এরপরও দখলে নেই বলে নামজারিটি বাতিল করে দেয়া হয়। ভোগ দখলে থাকাকালীন আমি নামজারি করেছি। সেই অবস্থায়ই আছে। কিন্তু এরপরও নামজারি বাতিল করা হয়েছে, এটি অবিশ্বাস্য ঘটনা।
বেতকা ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক জাল দলিল করে ভূমি নামজারি করেছে। ভূমি অফিস তা জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি।
বেতকা ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বলেন, জাল দলিল প্রমাণ করা সময়সাপেক্ষ।
তিনি চেয়ারম্যানের কেনা জমির নামজারি বাতিল প্রসঙ্গে বলেন, আমি যখন প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তখন তো জেনেছিলাম নীলমনি দত্তের পুত্র প্রদীপ দত্ত ভোগদখলে আছেন। তারপর যখন আমি সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখে সম্মিলিতভাবে তদন্তে আসি তখন আবার দেখি প্রকৃতপক্ষে প্রদীপ দত্তের দখলে নেই। আমি তো সেটাই লিখেছি।
তিনি বলেন, আমার প্রথম তদন্তে আমার প্রস্তাব সঠিকই ছিল। তবে নানা কারণেই পরের যৌথ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে হয়েছে। এই কর্মকর্তা অফিসটিতে যোগদানের পরপরই সাসপেন্ড হওয়ার প্রসঙ্গে দায় চাপাতে চান পরবর্তী কর্মকর্তার ওপর। শুধু প্রধান শিক্ষক আর চেয়ারম্যানই নন এই ভূমি অফিসের হয়রানির শিকার এখনকার শত শত মানুষ। তাদের অভিযোগের যেন নেই শেষ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনলাইনে নামজারি ও খাজনার বিধান সত্ত্বেও শুধু বেতকা ভূমি অফিসই নয়, মুন্সীগঞ্জের অধিকাংশ ভূমি অফিসেই রয়েছে নানা অনিয়ম।
এক যুবক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন তার বাবার নামে ফ্রড নামজারি করা জমি মায়ের নামে হস্তান্তর করার পর মায়ের নামে নামজারির করতে ১৬ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তহসিলদারকে।
নবনিযুক্ত টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, যেহেতু বিষয়টি শুনলাম, এ ব্যাপারে আমি খতিয়ে দেখবো। যদি এর সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে টাকা গ্রহণ অনৈতিক। অতএব, এ ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।
মুন্সীগঞ্জের এপিপি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান কনক জানান, সব কাগজপত্রসহ নামজারির জন্য আবেদন করে চার মাসেও নামজারি হয়নি।
মুন্সীগঞ্জ জেলার আয়তন ১ হাজার ৪ বর্গকিলোমিটার। ভূমির সুচারু ব্যবস্থাপনা ও খাজনা আদায়ে জেলায় ৬টি উপজেলায় এমন ছয়টি ভূমি অফিস ছাড়াও ৬৮টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভা পর্যায়ে রয়েছে আরও ৫১টি ভূমি অফিস রয়েছে।
১৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে সময় নিউজে প্রকাশিত।