সত্যনারায়ণ মন্দিরের জায়গা শুধু ভোগদখল নয়, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হাতবদলও হয়!

খুলনা

শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দির খুলনার সাথে জড়িয়ে রয়েছে খুলনা শহর হয়ে ওঠার ইতিহাস। দেশভাগ এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার যন্ত্রণার ইতিহাস।

গোপীকিষণ মুন্ধড়া সম্পাদিত স্মরণিকা থেকে জানা যায়— ১৯৭১ সালে মন্দিরের কাগজপত্র এবং বিগ্রহ সবকিছু নষ্ট করে ফেলা হয়েছিলো।

মুখস্মৃতি এবং কতিপয় ব্যক্তিবর্গের নিকট সংরক্ষিত কিছু পুস্তিকা থেকে পরবতীতে কিছু ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয় বলে জানা যায়।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনার এ অঞ্চলের একজন প্রবীণ ব্যক্তি ‘৭১-এ মন্দিরের তথ্যালয় বিনষ্ট হওয়ার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

সত্যনারায়ণ মন্দির দীর্ঘকাল ধরে ট্রাস্টের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে ১৯১৭ সাল থেকে। ফলে প্রাসঙ্গিকভাবেই এ তথ্য সামনে এসেছে যে, সামান্য ভাড়া দিয়ে ব্যবসায়ীক কাজে ভোগ দখল করার পাশাপাশি মোটা অংকের টাকায় হস্তান্তর কীভাবে হচ্ছে?

হস্তান্তরের ইতিহাস জিজ্ঞেস করলে সোনালী এন্টারপ্রাইজ-এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী এবং সত্যনারাণ ট্রাস্টের সম্পত্তির অবৈধ ভোগদখলকারী প্রদীপ সাহা রীতিমতো খেপে গিয়ে ফলোআপ নিউজ-এর সাংবাদিকদের তার দোকান থেকে বের করে দিলেন। বের হয়ে না আসলে লোক ডেকে শায়েস্তা করার হুমকিও দিলেন প্রদীপ সাহা।

প্রদীপ সাহা
সত্যনারাণ ট্রাস্টের সম্পত্তিতে দাবী মতে মৌখিক চুক্তিতে পজেশন কিনে সোনালী এন্টারপ্রাইজ দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা করে আসছে।

ট্রাস্টের সম্পত্তিতে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাবেয়া এন্টারপ্রাইজে কথা বলতে গেলে তারা বললেন, আমরা ভাড়া দিই বাগদাদ ট্রডিং-কে। বাগদাদ ট্রেডিং-এর নাকি পজেশন কেনা। বাগদাদ ট্রেডিং ভাড়া দেয় মন্দির কমিটিকে।

সত্যনারায়ণ মন্দির কমিটির, অর্থাৎ ট্রাস্টিবোর্ডের অন্যতম সদস্য গোপীকিষণ মুন্ধড়া বললেন, ১৯৭১ সালের আগে এসব ঘরে পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা ছিলেন। এরপর সরকার থেকে বণ্টন করা হয়েছিলো। আইনি লড়াইয়ে পাওয়ার পরে আমরা বণ্টন করছি।

দেবোত্তর সম্পত্তির হাত বদল কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মৌখিকভাবে হয়। তবে নাম পত্তনের জন্য মন্দির একটা কমিশন পায়।

আইনত দেবোত্তর সম্পত্তি এভাবে হস্তান্তর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মন্দিরের সম্পত্তি ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় ব্যবহার করে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরী করেছেন বলে খুলনার বড় বাজারের অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন।

ভাড়ার রশীদ
এ ধরনের একটি রশীদে নামমাত্র ভাড়া আদায়ের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

খুলনা নাগরিক সমাজ (খুনাস)-এর দাবী মন্দিরের সম্পত্তি মন্দির ন্যায্য মূল্য ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত আয় জনকল্যাণে ব্যবহার করবে। কিন্তু যেভাবে শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দিরের সম্পত্তি দীর্ঘদিন যাবত কয়েকজন ব্যবসায়ী ভাগবাটোয়ারা করে ভোগ করছেন, সেটি ভয়ানকভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। দেবোত্তর সম্পত্তির পজেশন কিনেছেন বলে যারা দাবী করছেন তাদের সকলের নাম সামনে আসলেই বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে।


সত্যনারায়ণ ট্রাস্টের সম্পত্তি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম কিস্তি আজ প্রকাশিত হলো।

সম্পর্কিত সংবাদঃ

প্রকৃতিপ্রেমের নিদর্শন প্রেমকানন

কালের সাক্ষী খুলনার জোড়া শিব মন্দির

প্রেম কাননে এখন আর জমে না প্রেম!

খুলনায় ৩ দোকান থেকে ২ লাখ ২২ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দ