চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বেশিরভাগ ওষুধের দোকানে নেশাজাতীয় দ্রব্য বা ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে গোপনে সহজলভ্য এবং দামে কম হওয়ায় অনেকেই এসব নেশা জাতীয় ট্যাবলেট বা তরল কিনছে।
অভিযোগ উঠেছে কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, দারোগারহাট, বাড়বকুণ্ড, সোনাইছড়ি, জঙ্গল সলিমপুরে কিছু অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ এসব ট্যাবলেট বিক্রি করছে। শুধু তাই নয়, ঘুমের ওষুধের সঙ্গে নানাধরনের দ্রব্য মিশিয়ে ঝাটকা, ফুটুস, ঝাঁকি নামে তরল ওষুধও বিক্রি হচ্ছে। তথ্যানুসারে, এ অঞ্চলের গ্রাম এবং শহর এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু-কিশোর কোনো-না-কোনোভাবে মাদকাসক্ত।
এলাকাবাসী হিসেবে কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডার জামাল উদ্দিন বলেন, ওষুধের দোকান থেকে মাদক হিসেবে কেউ ওষুধ কিনলে সেটি শুধু সংশ্লিষ্ট দোকানদার বলতে পারবেন। আমাদের নজরে এমন কিছু আসেনি। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ২৭ ধরনের ওষুধ দিয়ে থাকি। আমাদের এখান থেকে কোনো প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয় না।
সীতাকুণ্ডে আলী ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাসান বলেন, এটি একটি বানোয়াট সংবাদ। আমার জানামতে এমন কিছু হয় না। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন আমাদের নিয়মিত তদারকি করেন। দুই মাস আগেও উপজেলা প্রশাসন আমার দোকানে অভিযান চালিয়েছেন। ঘুমের ওষুধ বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া আমরা কোনো ঘুমের ওষুধ বিক্রি করি না।
তবে ফলোআপ নিউজের জরিপ বলছে— দেদারসে ওষুধের দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। কাশির সিরাপের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এক ধরনের মাদক তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি গ্রহণে মৃত্যুও হতে পারে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সাথে কথা বলেছে ফলোআপ নিউজ। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ বলছে, তথ্য বা অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। তবে বিষয়টি দেখার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রয়েছে। তারা ঔষধের দোকানগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার কথা।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বায়োকেমিস্ট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের শাখা অফিসের (বর্তমানে ৫৫টি জেলায় শাখা অফিস রয়েছে) মাধ্যমে সরাসরি বিষয়গুলো দেখভাল করে। আমরা মামলা করতে পারি। জরিমানা করার একটি আইন আসছে, তবে সেটি এখনো কার্যকর হয়নি। তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে উপজেলা প্রশাসন নিতে পারে, তবে কাজটি আমরাই করে থাকি। ইউনিয়ন পর্যন্ত আমাদের নজরদারি আছে। ঘুমের ওষুধ বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ সচেতন না হলে এগুলো রোধ করা কঠিন। এক্ষেত্রে ওষুধ বিক্রেতাকে বুঝতে হবে— তিনি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী নন, তিনি নিজ দায়িত্বে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি করবেন না, প্রেসক্রিপশনটিও হতে হবে কোনো স্বীকৃত চিকিৎসকের। কতক্ষণ কাউকে নজরদারি করা যায়? আমাদের ওষুধ ব্যবহারের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। তবে আইনের কোনো লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণে আসলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
…
সংবাদসূত্রঃ মানবজমিন। ফলোআপ, পরিবর্ধন এবং পরিমার্জনঃ ফলোআপ নিউজ