সুপ্রতিবেশী: গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী মহতী উদ্যোগ

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন

একটি পরিবার আগামীকাল কি খাবে সে জোগাড় নেই, রান্নার খাদ্য সামগ্রী নেই, ক্রয়ের সামর্থ্যও নেই। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তালিকায়ও হয়তো তাদের নাম উঠে নাই, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এমন সব পরিবার খুঁজে তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন



করোনাভাইরাসে ঘরবন্দি অসহায় শ্রমজীবী মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এক মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোগটির নাম “সুপ্রতিবেশী”। এই কর্মসূচির মাধ্যমে করোনা মহামারীতে সমাজের এক ধনী পরিবার অন্য এক দরিদ্র পরিবারের খাদ্য সামগ্রীর দিয়ে সহায়তা করবে।

জেলা প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমাজের সামর্থবান যেকোনো ব্যক্তি এক বা একাধিক পরিবারে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার দ্বায়িত্ব নিতে পারবেন। ওই ব্যক্তির দেওয়া অর্থ দিয়ে জেলা প্রশাসন চাল, ডাল, তেল, লবণসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী কিনে ঘরবন্দি অসহায় পরিবারের বাড়িতে পৌঁছে দিবে। ইতিমধ্যে এই মহতি উদ্যোগ থেকে সহায়তা পেয়েছেন গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৮০৭টি পরিবার।

জেলা সদরের বিল্পব রায় নামে এক কাঠ মিস্ত্রির হেলপারের সঙ্গে ত্রাণ নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করে মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই সালাম জানালেন। তার পর বললেন আপনি কি বিল্পব রায়। আমি বললাম হ্যাঁ। তখন ওপাশ থেকে বললেন আমরা আপনার বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছি। বের হয়ে নিয়ে যান। আমি অনেকটা খুশী মনে রাস্তায় যেয়ে দেখি একটি গাড়ি। পাশে দাড়ানো এক ভদ্রলোক। তিনি খাবারের ব্যাগ হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আমাকে বললেন আমি ডিসি অফিসের খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আপনাকে দিতে এসেছি। পরে আমি ব্যাগটি নিয়ে ঘরে এসে খুলে দেখি তার মধ্যে অনেক খাদ্য সমগ্রী। যা আমার পরিবারের প্রায় ১০ দিনের খাবার। আমি সামান্য কাঠ মিস্ত্রির হেলবার। এই খাদ্য না পেলে ছেলে মেয়ে আমার না খেয়ে থাকতে হতো। এই সময় কেউ কাউকে সাহায্য সহযোগিতা করছে না। হাওলাদ বরাত ও পাওয়া যায় না। ডিসি সাহেব আমাকে যে উপকার করেছেন তার ঋণ কোনোদিনও শোধ করতে পারবো না।

একই উপায়ে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন, গোপালগঞ্জ পৌর এলাকার দরিদ্র শ্রমিক, আনিসুর রহমান, মেরি বৈদ্য, সলাম মোল্লা, রফিক হোসেনসহ গোপালগঞ্জ পৌর এলাকা ও আশপাশ ইউনিয়নের প্রায় ৮০৭টি পরিবার।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) মাহাবুবুল আলম জানিয়েছেন, জেলায় গত ৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রশাসনের সুপ্রতিবেশী কর্মসূচিতে গোপালগঞ্জের ৩৩ জন বিত্তবান ৬ লক্ষ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিয়েছেন। সেখান থেকে ৬ লক্ষ ২৬ হাজার ৯২৫ টাকা খরচ করে ৮০৭টি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই ফান্ডে ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।

তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাস সংক্রামণে যেসব কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, ত্রাণ বিতরণ কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকগণ মাঠে ময়দানে কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন এলাকা ঘোরেন এবং কারা ত্রাণ পেয়েছে বা পায়নি এমন খবর রাখেন। অনেক পারিবার তাদের কাছে ত্রাণ পায়নি বা পরিবারের অভাব অনটনের ঘটনা বলেন। সেসব ব্যক্তিরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানালে আমারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সেসব বাড়িতে সুপ্রতিবেশী কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে থাকি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, জেলায় অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা তাদের দান সমাজে গোপন রাখতে চান। আবার অনেকে পরিবেশনের ঝামেলা এড়াতে গোপনে অসহায় মানুষকে খাদ্য সামগ্রী দিতে চান। কেউ আছেন সহায়তা চাইতে জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাইতে লজ্জাবোধ করেন। এসব বিষয় চিন্তা করে আমরা “সুপ্রতিবেশী” উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে আমরা ৩৩টি পরিবার পেয়েছি, যারা ৮০৭টি পরিবারের দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। এই ৩৩ জনের দেয়া অর্থ দিয়ে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করে কর্মহীন অসহায় পরিবারের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

তিনি সুপ্রতিবেশীর মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের ঘরবন্দি অসহায় পরিবারে খাদ্য সামগ্রী প্রদানের দয়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। তাহলে সমাজের একটি লোকও না খেয়ে থাকবে না। তাই আমি সমাজের বিত্তবানদের এই কর্মসূচিতে আগ্রহ দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি।


সংবাদ: কালের কণ্ঠ