১৯৮৮-এর চট্টগ্রাম গণহত্যাঃ হত্যা করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীকে

আওয়ামী লীগ

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় পুলিশ গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এই ঘটনাটি স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলে সংঘটিত হয়েছিলো। এই ঘটনাকে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

ঘটনার বিবরণঃ
  • তারিখ:
    ২৪ জানুয়ারি, ১৯৮৮
  • স্থান:
    চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি ময়দান
  • মূল কারণ:
    স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগের জনসভায় পুলিশ গুলি চালায়।
  • হতাহত:
    পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে অন্তত ২৪ জন নিহত হন।
দোষী:
তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
https://youtu.be/eZ1uu2TfLKU?si=CGyUcc0DnhQssuW6
পটভূমিঃ

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ছিলেন। তিনি ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এরশাদ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ওই দিন বাংলাদেশের সংবিধান স্থগিত করেন। তিনি বাংলাদেশের ডি ফ্যাক্টো শাসক হয়ে ওঠেন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালের ৭ মে একটি নির্বাচন করেন। শুরুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং এরশাদকে স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করে। ১৯৮৬ সালের ১৭ মার্চ চট্টগ্রামের লালদীঘিতে এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেছিলেনঃ

আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। যারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাদের ‘জাতীয় বিশ্বাসঘাতক ঘোষণা করা হবে।

কিন্তু পরবর্তীতে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭ মে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং এরশাদের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির কাছে পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা তিনটি আসনে জয়লাভ করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে, একই বছরের ১৫ অক্টোবর এরশাদ একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮৭ সালের ২৯ আগস্ট এরশাদের সাথে কোনো সংলাপে বসতে অস্বীকৃতি জানায় এবং সরকারের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকায় পুলিশ বিরোধী কর্মীদের ওপর গুলি চালালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী নূর হোসেন নিহত হন। এই ঘটনা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে এবং এরশাদকে ১৯৮৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সংসদ স্থগিত করতে বাধ্য করে।

এরশাদ ১৯৮৮ সালে তার শাসনকে বৈধতা দিতে ৪ মার্চ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলাম সহ সাত দলীয় জোট, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোট এবং বামপন্থী পাঁচ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় এবং নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য প্রায়ই মিছিল করছিলো।

ঘটনাঃ

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে শেখ হাসিনা এবং কয়েকজন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে পৌঁছান। পরে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কর্তৃক শহরের লালদীঘিতে আয়োজিত এক জনসভায় বিপুল জনসমাগমের সামনে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে শেখ হাসিনা একটি ট্রাকে চড়ে চট্টগ্রামের রাস্তায় মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তার মিছিলটি শহরের কোতোয়ালি মোড়ের সামনে আটকে যায়। পুলিশ কোতোয়ালি থানার সামনে রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে রাখে। জনতা যখন ব্যারিকেড সরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা তার বাহিনীকে জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশের নির্বিচার গুলিতে সেদিন অন্তত ২৪ জন নিহত হয় এবং শত শত মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পান, কারণ কিছু সংখ্যক কর্মী তাকে ঘিরে মানব প্রাচীর তৈরি করে তাকে রক্ষা করে। শেখ হাসিনা বারবার গুলি বন্ধ করার অনুরোধ করলেও পুলিশ সেদিকে কোনো কর্ণপাত করেনি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুসলিম ইনস্টিটিউট, কেসি দে রোড, নন্দনকানন, আমতলা এবং কোর্ট বিল্ডিং এলাকা এই গণহত্যার অন্যতম ঘটনাস্থল ছিলো।

আওয়ামী লীগ
চট্টগ্রাম গণহত্যা স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্মারক।

বিচারঃ

দীর্ঘ ৩২ বছর পর ২০ জানুয়ারি ২০২০-এ ৫ পুলিশের ফাঁসির হুকুম হয়। প্রধান আসামি মির্জা রকিবুল হুদা ততদিনে বয়সজনিত অসুস্থতায় মৃত। বাকীরাও কেউ মৃত, কেউ ফেরারি।