এক সম্রাজ্যের নবউত্থান // দিব্যেন্দু দ্বীপ

কবিতা
হতদরিদ্রের মতো
এক ঈশ্বরের নেশায়
পেয়ে বসেছে আমায়।
ওরা পায় না কিছুই
তবু ক্ষণিক দুঃখ ভুলে যায়।
এই পৃথিবীতে শক্তি ছাড়া
সবই মূল্যহীন,
জানি তবুও
রেখে যাই
এক মানবীর তরে
হৃদয় এবং রক্তের প্রলয়ে
প্রলাপ যত বাড়ে
দিনের পর দিন।
আমার যদি
তেমন শক্তি থাকত
আমি তোমাকে
অপহরণ করে নিয়ে যেতাম
দূর কোনো দেশে,
যেখান সবটুকু তেমাকে পেতাম
দস্যুর মতো অট্টহাসি হেসে!
স্বান্তনা দিতাম তোমায়
সত্যি ভীষণ ভালোবেসে।
এমন একজনের প্রেমে
পড়েছি মিছে,
যাকে আমার কিছু
দেবার নেই,
পেতে চাই,
কিন্তু ঈশ্বরকে পাবার
সাধ্য নেই।
এমন একজনের
নেশায় দিশেহারা আমি,
মরে গেলেও যে জানবে না
তার জন্য দিনে আমি
কতবার থামি!
আকাশের মতো
তোমাকে চাই,
আমাকে যেন ভাসিয়ে রাখে,
আমাকে যেন উড়িয়ে রাখে
সারাক্ষণ,
তোমার জন্যে নিঃশব্দে
হন্যে হয়ে থাকে
আমার সবটুকু প্রাণ-মন।
মনে পড়ে,
খুব!
কখনো জৈবিক,
বেশিটাই মানবিক।
ভুলে থাকার
লৌকিক ভণিতায়
আমার যে অনেক
কষ্ট হয়।
জানতে চাই
ঠিক কীসের বিনিময়ে
তোমাকে পেতে হয়?
ভুলের দেশে ঘুরে ঘুরে
ক্লান্তি শেষে
কল্পরাজ্যে অবশেষে।
গল্পকথায় মনরে ভুলাই,
জীবনকথা তারে শোনাই-
উন মানুষ দেখে দেখে
দণ্ডায়মান থেকে থেকে
কিছুই আমায় না বলে
একটা জীবন গেছে চলে…
স্মৃতিগুলো মানসপটে
বিষাদের
কালোমেঘ হয়ে বেড়ায় ভেসে।
তবু আমায় বাঁচতে হবে
সহজ হাসি হেসে!
১০
ব্যর্থ এক দর্শক আর নইতো আমি,
মনের ভুলে তবু একটু থামি,
নতুন দেশে নতুন মানুষ,
নতুন কথা, নতুন গান,
তলিয়ে যাওয়া
এক সম্রাজ্যের নবউত্থান।
১১
ভুলের দেশে
আমার প্রজাস্বত্বের
শেষ পর্যায়ে এসে
এক ঈশ্বরীর প্রেমে
পড়েছিলাম,
অসংখ্য ঘুমভাঙা রজনীর
শেষটুকু তাকে
উৎসর্গ করেছিলাম;
ভোলেনি সে।
ব্যস্ততার ভণিতায়
আমার ক্ষীণতায়
সবটুকু
রাগ রঙ উড়িয়ে দিয়েছে
জাদুর হাসি হেসে।
১২
নাহ!
পিছে আমি ফিরব না আর,
একই ভুলে পড়ব কেন
বারবার?
তোমার তরে ফেলে এসেছি
রাত-বেরাতের প্রতিচ্ছবি আমার।
১৩
এখনও অনেক কাজ বাকী,
পাতায় পাতায়
আঁকতে হবে সব মনোছবি।
জেনে রেখো
আমি শুধু নইতো কবি।
১৪
কে না রেখে যেতে চায়
মানুষের মাঝে নিজের
একটি অতিকায় মানসছবি।
পূজ্য হতে নয়, পরিপূর্ণ হতে।
১৫
তোমাকে আমি চেয়েছিলাম,
পথিক আমি,
কিছু পথ মিলে গেলে
একসাথে হাঁটতে পারতাম,
খুব ক্লান্ত হলে
পথের মাঝে তোমার সাথে
অস্থায়ী একটি ঘর বাঁধতাম।
১৬ 
পর্যটক নই,
পরিব্রাজক আমি একা,
হঠাৎ
যদি পাই এমন কারো দেখা,
যে গন্তব্য নয়,
পথটাকে করতে পেরেছে আপন।
দু’দণ্ড তার সাথে,
একটি রাত না হয় করতাম যাপন।
১৭ 
মুর্ছা যাবার মতোই হয়,
ভয়!
একেই তবে প্রেম কয়?
১৮
তোমার ছায়া হয়ে
মাঝরাতের কল্পনাতে
বিলাসী কিছু দুঃখ ভাসে,
উন্মাদ মস্তিষ্ক
শপথ ভুলে নত হয়
তোমার পায়ে, ঐশ্বরিক প্রত্যয়ে,
শৈত্য প্রবাহ তবু
টগবগিয়ে রক্ত ফোটে
তোমার আশে।
তুমি নাই, নিষ্ঠুর তুমি নাই,
হন্যে হয়ে একটু পরে
তোমার না থাকাটাই যাচ্ছে সয়ে।
১৯
তোমার কাছ থেকে কিছু নয়,
আগে আমি তোমাকে চাই।
তোমার সবটুকু, সম্পূর্ণ তুমি,
যেন প্রতি মুহূর্তে পরিপূর্ণ আমি,
এরপর উছলি পড়ে তোমার প্রেম
আমাকে ভরিয়ে দিয়ে জনতায়,
সভাসদ এবং সভ্যতার নিমিত্তে সভায়।
২০
ভীষণ ক্ষুধার্ত চিল যেমন
তীরের মতো ঢুকে যায় সাগরের বুকে
ধরে আনতে আধার,
তেমন তোমাকে পেতে ইচ্ছে করে
অকারণে, অনুরাগে বার বার।
আলো আধারে, একলা ঘরে
তোমাকে দেখে দেখে
তোমার ঐশ্বরিক আলিঙ্গনে
এ জীবন যদি যাপিত হয় একটি দিনও
তবু আমি সার্থক জেনো।
২১
তোমাকে দেখার পরে
এখন হিংস্রতার বেশে ভালোবাসা জাগে!
আমি চাই সিংহের মতো
নখদন্ত দিয়ে তোমায়,
শুধু দেখে দেখে আর নয়।
তোমাকে হরণ করে
দূর কোনো দ্বীপে বন্দী করে
ভালোবাসতে পারতাম যদি
এক জীবনে,
তোমার জন্য
মরুভূমিসম তৃষ্ণা মিটত কি তবুও?
কেন শুধু এত কথা মনে মনে?
তোমাকে চাই শিশুর মতো,
অবুঝে, অক্ষম তবু গোগ্রাসে।
২২
শূন্য হতে মহাশূন্যে বিচরণ,
দিন মাস বছর যায়,
তোমাকে না পাওয়ার একই বিবরণ,
আমাকে মশগুল দেখে
দু’পাশ দিয়ে
ইঙ্গিতে হাত নেড়ে যায় যারা,
বোকা, হতবুদ্ধ, অহংকারী
কী না বলেছে ওরা!
আমি অসহায়, ভীষণ অসহায়,
সামনে পিছনে, ডানে বায়-
আমি যে বাঁচি শুধু তোমার ছায়ায়।
এখনো আমি
একই নিমগ্ন তোমার পথ চেয়ে,
যদিও দেখতে পাচ্ছি-
বেলা ঠিকই দ্রুত যাচ্ছে বয়ে।
সে তবে কারা
যারা ঈশ্বরের নাম বদলে দিয়েছে
তোমায় পেয়ে?
তুমি নাই,
আমার কোথাও তুমি নাই।
চাই, আমি তোমাকে চাই।
২৩
তোমার কাছে আসব,
কিন্তু কোথায় আসব?
তোমাকে নিয়ে যাব,
কিন্তু কোথায় যাব?
আজগুবি সব ইচ্ছা,
অসম্ভব সব স্বপ্ন!
আমি থাকি
ভীষণভাবে তোমাতে নিমগ্ন।
২৪
মৃত্যুকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে আমার,
আর তোমাকে।
জীবন ভালো লাগে না আমার,
তবু তোমাকে কেন এত ভালো লাগে?
মৃত্যু তাড়িয়ে তোমাকে পেতে ইচ্ছে করে
বড্ড বেশি, বার বার।

[চলবে। দেখি নতুন সম্রাজ্য নিয়ে একশো পর্যন্ত যাওয়া যায় কিনা, এবং গেলে কী দাঁড়ায়।]