থানচি উপজেলার একটা দুর্গম গ্রাম— রিডং। গত তিনমাস ধরে আসলাম সাহেব এই গ্রামে আছেন সপরিবারে। এখন তো দেশে ভয়ঙ্কর সংকটকাল, তবু আসলাম সাহেব এবং তার পরিবার নিশ্চিন্তেই আছেন। আসলাম সাহেব এই গ্রামে এসে বসবাস করায় রিডং গ্রামবাসীও খুব খুশি—কিছু পেলে যেমন সবাই খুশি। যারা অখুশি হওয়ার কথা ছিল, তারা শুরুতেই ভালোভাবে সাহেবের আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছে।
আপনাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে— কীভাবে এবং কেন সাহেব এই দুর্গম গ্রামটিতে গিয়ে হাজির হলেন, কেনই বা তিনি সেখানে থাকতে শুরু করলেন। ‘কে এই আসলাম সাহেব’ এ বিষয়টাও আপনাদের অবশ্যই জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না? আসলাম সাহেব কোনো রাজনীতিবিদ না, কবি সাহিত্যিক লেখকও না, তিনি একজন ব্যবসায়ী— গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ী। শুধু গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ী বললে আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হবে, তিনি একজন জায়ান্ট গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ী। যার কারখানায় কাজ করে বারো হাজার শ্রমিক। অবশ্য গার্মেন্টেসের ধারে কাছে গত পাঁচ বছর ধরে তিনি আর যান না, ওগুলো দেখাশুনার জন্য সিস্টেমওয়াইজ লোকবল আছে ।
লকডাউনের সময় গার্মেন্টস্ খোলা থাকবে কিনা, শ্রমিকদের বেতন কড়ির কী হবে —সেসব বিষয় নিয়েও তিনি আর চিন্তা করেন না, চিন্তা করার জন্য লোক আছে। এখন শুধু জীবনটা উপভোগ করতে চান তিনি। সমস্যাটা যদি শুধু বাংলাদেশের হত, তাহলে সপরিবারে এই সময়টা তিনি কোনো একটা দেশে গিয়ে কাটিয়ে আসতেন। এখন তো আর সেটি সম্ভব নয়, পুরো পৃথিবীই এখন সংকটে। সাহেব তাই অন্য উপায় বের করেছেন। সাহেবের বউ ছেয়েমেয়ে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি দেশে, তাদের নিয়ে কিছুটা চিন্তা আছে বটে, তবে তা খুব বেশি নয়। এখন পর্যন্ত কেউ কোথাও তার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়নি, হলেও যেকোনো দেশের সেরা চিকিৎসাটা বের করে নেওয়ার ক্ষমতা তার স্বজনদের আছে।
লন্ডনে তার একটা বউ আছে, এটা অবশ্য অন্য বউ এবং ছেলেমেয়েরা জানে না। মাত্র তিনটা বিয়েই তিনি কাগজে কলমে করেছেন, দুটো সবাই জানে, এই একটা কেউ জানে না। গত বছর এই বিয়েটা তিনি করেছেন। সবখানেই ব্যবসা এবং লাভ খুঁজতে জানেন আসলাম সাহেব, জানেন বলেই আজকে তিনি এমন একটা রাঘব বোয়াল হতে পেরেছেন। ফারজানার বুটিক হাউজের পণ্যও তার গার্মেন্টস্ থেকে যায়। লন্ডনে দুই বছর আগে ফারজানার সাথে যখন পরিচয় হয়, তখন সে একটা বুটিক হাউসে চাকরি করত। আসলাম সাহেবের তখন মাথায় খেলে— এইতো ব্যবসা সম্প্রসারণের একটা সুযোগ, আবার ‘মালটা’ও তো জব্বর। ফারজানাকে কব্জা করেন তিনি, বুটিক হাউস করে দেওয়ার প্রস্তব দেন, খুব দ্রুত করে দেনও। এরপর থেকে ব্যবসা ফারজানার যা হয়, তার চেয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পাঠিয়ে আসলাম সাহেবেররই বেশি উপার্জন হয়। এখন ফারজানা বুটিক হাউস থেকে পাইকারিতে পোশাক বিক্রি হয় লন্ডনের বাজারে। দুই বছর যেতে পারেনি এর মধ্যে বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে তার। বর্তমানের এ সংকটাকালে সাহেব ফারজানার একটু আধটু খোঁজ নেন, আর কারো নয়।
ঢাকায় তার ছোট বউ এবং দুই সন্তান থাকে। সন্তান দুটো ছোট— একজন সেভেনে পড়ে, আরেকজন নাইনে। স্ত্রীও খুব বয়স্ক নয়, বত্রিশ তেত্রিশ বছর বয়স হবে হয়ত। সাহেবের চেয়ে এই বউও অনেক ছোট। সাহেবের বয়স এখন পঞ্চান্ন, তবে দেখলে মনে হয় চল্লিশ পয়তাল্লিশ। নিয়ম মেনে চলা লোক, প্রতি বছর কয়েকবার চিকিৎসা করান তিনি দেশের বাইরে গিয়ে।
দেশের এই সংকটকালে আসলাম সাহেব অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখেছেন— কোনোদিনই তিনি মানুষ নিয়ে চিন্তা করেন না, মানুষের কোন বালডা হবে এটা আসলাম সাহেবের চিন্তার বিষয় নয়, মানুষ তার কাছে কাস্টমার এবং শ্রমিক মাত্র। তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে চিন্তা করছেন করোনাকালে কীভাবে পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকা যায়। এটা বুঝেছেন যে, এই সংকট আরো বাড়বে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কমবে না। তিনি কোনো ঝুঁকি নিতে চান না, তাই উপায় একটা তাকে বের করতেই হবে। ঢাকা শহরে থাকাটা কোনোভাবেই তার কাছে নিরাপদ মনে হচ্ছে না।
বুদ্ধি একটা তিনি বের করেছেন। শুনেই ফাল্গুনি তিন লাফ দিয়েছে। পরিকল্পনাটা ঠিকমতো সাজানোর আগে তিনি ফোন করেছেন বান্দরবানে তার এক দালালের কাছে। দালাল একজন ম্রো আদিবাসী, নাম— প্রেমজি ইয়েম্রে। আসলাম সাহেব হিল রিসোর্টে গেলে ইয়েম্রে তাকে আদিবাসী নারী ম্যানেজ করে দেয়। ইয়েম্রে ভেবেছে এবারও নিশ্চয়ই তার স্যার এজন্য ফোন করেছে। সাহেব কিছু বলার আগেই সে বলতে শুরু করেছে— স্যার, আপনি কিছুই চিন্তা করবেন না, জেনুইন কুমারী এবং করোনা নেগেটিভ জিনিস পাইচি। সাহেব হাসতে থাকে, বলেন— আগে বলতে এইচআইভি নেগেটিভ, এখন বলছো করেোনা নেগেটিভ! ইয়েম্রে বলে, স্যার দোনোডা নেগেটিভ আচে।
সাহেবের ভেতরে ভেতরে টেনশন আছে, তাই আর কথা বাড়ায় না। ইয়েম্রে বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে, স্যার, কোনো কষ্টে আচেন? খুব কোনো দুঃখ পাইতেচেন মনে হইতেচে! সাহেব ইয়েম্রের কথায় সায় দিয়ে বলেন তুমি ঠিক ধরছ— খুব কষ্টে আছি। তোমার একটা কাজ করে দিতে হবে। বান্দরবানের দুর্গম কোনো এলাকায় এক বছর থাকার মতো একটা নির্জন বাড়ি আমাকে করে দিতে হবে। ইয়েম্রে স্বভাবসুলভভাবে বলে, স্যার, এ আবার এমন কী! আমার পুরান বাড়ী ছিল থানচি উপজেলায়, ঐদিকের অনেক লোক আমার পরিচিত। আপনি কিচু চিন্তা করবেন না, মুশকিল আচান হইয়া যাইব দ্রুত। আপনে সুখ নিয়া থাকেন। শোনো, আমি সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে কালই বান্দরবান আসছি, তুমি প্রস্তুত থাক, আমাকে নিয়ে এলাকাটায় যাবে। এই সময়ে কোনো ঝামেলা হবে নাতো? ইয়েম্রে বলে, কীচের ঝামেলা মনে আইতাচে স্যার, ট্যায়া দিলে সব ঠিক হইয়া যাইব। আপনি খালি একবার আচেন।
আসলাম সাহেব বান্দরবান পৌঁছে ইয়েম্রের বাসায় উঠে যায়। ইয়েম্রের খাতিরের অন্ত নাই, খাতির করবেই বা না কেন, গত দশ বছরে সে যা কামাইছে তার অর্ধেকই এই সাহেবের কাছ থেকে। সাহেবের কারণেই তার ছেলে মেয়েগুলো আজ স্কুল কলেজে পড়ে, দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে সে এখন এসে বাস করতে পারছে বান্দরবান সদরে। দালাল হলেও প্রকৃতির সন্তান সে— স্বভাবসুলভাবেই কৃতজ্ঞ ওরা। গরিবের ঘরে থাকতে স্যারের বোধহয় খুব কস্ট হবে —সাহেব এ কথায় কান না দিয়ে বলেন, শোনো, আজ আর আমরা বাসায় রান্না না করি, বরং তুমি গিয়ে খাবার নিয়ে আসো, এই বলে ইয়েম্রের হাতে পাঁচটা এক হাজার টাকার নোট গুজে দেয়। ইয়েম্রে বলে, তাহলে স্যার চাদে চলেন, একটা পাটি বিচায়ে দিই, জ্যোতনা রাতে আমোদ হবে। ইশারায় আরো যা বলে তার অর্থ দাঁড়ায়— “বিশেষ খাতির যত্ন লাগবে নাকি, স্যার?”
পরের দিন খুব সকালে ওরা রওনা হয়ে যায় থানচির উদ্দেশ্যে। রেমাক্রি ইউনিয়নের রিজং গ্রাম— স্থানীয়রা ঠিকমতো উচ্চারণ না করায় গ্রামের নামটি হয়ে গেছে রিডং। বাইশটি ম্রো পরিবারের বাস এই গ্রামে। একটি পরিবার থেকে আরেকটি পরিবার বাস করে অনেক দূরে, পুরোপুরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল তারা, আয়-উপার্জনের পুরোটাই আসে প্রকৃতি থেকে, অবশ্য অল্প কিছু কৃষি তারা করে, তা দিয়েও সামান্য কিছু উপার্জন হয়। এতদিন পড়াশুনা বলে কিছু ছিল না এখানে, এখন ছেলে মেয়েগুলো স্কুলে যায়, দুই কিলোমিটার দূরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়েছে বছর দশেক হলো।
ভীষণ উঁচু-নিচু পাহাড়ী এলাকা, তবু পছন্দ করতে দেরি করেনি আসলাম সাহেব। করোনার ভয়ে পালানোর জন্য এটাই উত্তম জায়গা। এবার তাহলে জায়গার বন্দোবস্ত করা দরকার, কিন্তু কীভাবে হতে পারে তা? ইয়েম্রে একটি উপায় খুঁজে বের করেছে— তার এক ম্রো আত্মীয় বাস করে পাশের গ্রামে। তার মাধ্যমে একটি জায়গা বন্দোবস্ত করতে হবে। টাকা থাকলে সবই হয়, জায়গার বন্দোবস্তও হয়ে যায় খুব দ্রুত। দশ কাঠা জায়গা দশ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। সাহেব নিতে চেয়েছিল এক বছরের জন্য, ইয়েম্রে বুঝিয়েছে যে, এক বছরের জন্য নিলে লোকজন সন্দেহ করবে, তাই দশ বছরের জন্য নিতে হবে, টাকা তো কমই লাগছে, যদিও টাকার চিন্তা আসলাম সাহেব করেনি।
বাড়ি তোলার একটি হিসেব নিকেষ করে ইয়েম্রের ওপর দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসে সাহেব। এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি উঠে যাবে— একটি সুন্দর আধাপাকা বাড়ী। ঢাকায় এসে স্ত্রীর সাথে সবকিছু আলোচনা করে, ফাল্গুনি শুধু আনন্দে লাফ দিতেই জানে, এবারও সে তা-ই করে। ছেলে দুটোও খুব খুশি— ওদেরতো ভ্রমণের আনন্দ।
দুটো গাড়ি বের করা হয়েছে, হাইলাক্স গাড়িতে মালপত্র যাবে, সামনে ড্রাইভারের পাশে সাহেব বসবে। আরেকটি গাড়িতে থাকবে স্ত্রী এবং পুত্রদ্বয়। সেনাবাহিনীর কর্নেল বন্ধুর সাথে আলোচনা করে রেখেছে, সে-ই কর্ডন করে বান্দরবান পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। বান্দরবান নেমে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে ইয়েম্রের ওপর। গাড়ি নিয়ে রিডং গ্রামে প্রবেশ করা যায় না, গেলেও সেটি ঠিক হত না। ইয়েম্রে অবশ্য গ্রামবাসীর মগজ ধোলাই করে রেখেছে। বলেছে— সাহেব একটি গ্রামের দায়িত্ব নিতে চান, তার আগে গ্রামটিতে থাকতে চান কিছুদিন। ইতোমধ্যে ইয়েম্রে বাইশটি পরিবারকে এক হাজার করে টাকাও দিয়েছে, যদিও হিসেব মতো দেওয়ার কথা ছিল ঐ এক লক্ষ টাকা সমান ভাগ করে। ইয়েম্রে সাহেবকে একজন ভবিষ্যত দানবীর হিসেবে দেখিয়ে বাকী টাকা নিজের পকেটে পুরতে পেরেছে।
এলাকার লোকজন তাতে অখুশি নয়। বেনামী বন্য পোড়ো ভূমির বদৌলতে যা পায় তাতেই তারা এখন খুশি। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের খবর এ গ্রামে এখনো বলতে গেলে পৌঁছুতেই পারেনি। গ্রামের একটা ছেলে বান্দরবানে কাজ করে, সে যা একটু জানে। তার মাধ্যমেই গ্রামবাসী একটু আধটু জানে, কিন্তু কেউ গা করে না।
আজকে সাহেব সপরিবারে বাড়ীতে উঠেছে। আধাপাকা টিনশেড— বেশ ভালোই বানিয়েছে ইয়েম্রে বাড়ীটা! দুটো রুম বেশ পরিপাটি, বাথরুম করা হয়েছে দুটো, কিছু ফিটিংসের কাজ বাকী রয়েছে। এখন ধীরে ধীরে কাজ চললে ক্ষতি নেই। একমাস খাবার মতো রসদ বান্দরবান থেকে কিনে আনা হয়েছে। তাছাড়া ঐ বাইশটি পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে কোনো না কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতি সপ্তাহে সাহেবকে কিছু দেবার জন্য। কেউ কিছু পাহাড়ী শাকপাতা দেবে, কেউ দেবে মুরগীর ডিম, কেউ সংগ্রহ করে দেবে পাহাড়ী মধু —এরকম। যাতে সবাই খুশি থাকে এজন্য এ ব্যবস্থা। খাবার পানি ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুইজন যুবকের ওপর, তারা দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গভীর নলকুপ থেকে পানি এনে দেবে। যদিও এ পানি সাহেবরা খাবে না। ইয়েম্রে মিনারেল ওয়াটার কিনে এনে দেবে। এই পানি তারা ব্যবহার করবে রান্নায়। এভাবে সকল বন্দোবস্ত ঠিক হয়ে যায়।
প্রথম এক মাস ভালোই কেটেছে এখানে। এখন খুব একঘেয়েমি লাগে। তবু ভালো লাগে ঢাকা শহরের খবর শুনে— দেদারচ্ছে মানুষ মরছে ঢাকায়, এ পর্যন্ত ছয় লক্ষ লোক মারা গেছে। এখন প্রতিদিন মারা যাচ্ছে পনেরো বিশ হাজার মানুষ। অন্যান্য শহরগুলোর অবস্থাও ভালো নয়, বান্দরবানেও মানুষ মরছে, তবে সেটি এখন পর্যন্ত শহরে। আসলাম সাহেব এই গ্রামে একজন অলিখিত নেতায় পরিণত হয়েছেন, কিন্তু নেতৃত্ব নিতে তিনি চান না, গেদারিং করে কোনো ধরনের রিস্ক নেওয়া যাবে না। তবে কিছুটা দায়িত্ব এই মহূর্তে সাহেব নিতে চান— আজকে গ্রামের সকল লোককে একটি জায়গায় ডাকা হয়েছে। মুশকিল হচ্ছে, সাহেবের কথা গ্রামবাসী বুঝবে না, ইয়েম্রে বুঝিয়ে বলবে। সাহেব বলেছেন, এখন গ্রামের সবার খুব সাবধান হতে হবে। কেউ বাইরে যাওয়া যাবে না, কোনো বাইরের লোককে গ্রামে ঢুকতেও দেওয়া যাবে না। ইয়েম্রেও ইতোমধ্যে পরিবার নিয়ে চলে এসেছে পাশের গ্রামে তার আত্মীয়ের বাড়ীতে। অবশ্য এখন আর কেউ আসতে পারবে না কোথাও থেকে। সরকার নিয়ম করেছে— শহরের মানুষ যাতে আর গ্রামে প্রবেশ না করে।
আসলাম সাহেবের জীবনে এই কয় মাসে বিরাট একটা পরিবর্তন এসেছে। মানুষের কাছাকাছি আগে কখনো তিনি এতটা থাকেননি। মানুষের অন্তর-আত্মা এতটা কখনো ছুঁয়ে যায়নি তাকে। সময় কাটাতে মাঝে মাঝে তিনি ম্রোদের একটা টং দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এক বয়াম চকলেট কিনে ভাগ করে দেন ম্রো শিশুদের মধ্যে, শিশুগুলো খিলখিল করে হাসতে হাসতে চলে যায় পিছন ফিরে সাহেবকে দেখতে দেখতে, যেন কোনো দেবদূতকে দেখছে তারা! এরকম অপার্থিব আনন্দ কোনোদিন পানননি সাহেব, এ যেন এক নতুন পৃথিবী তার কাছে। মানুষকে ভালোবাসতে পারার মধ্যে যে এতটা সুখ নিহীত থাকতে পারে ভোগের রাজ্যে অন্ধ হয়ে থাকা আসলাম সাহেব কোনোদিন তা বুঝতে পারতেন না যদি না এই করোনা ভাইরাস এসে হানা দিত পৃথিবীতে।
সাহেব এখন নতুন কিছু ভাবছে, ভাবছে এই গ্রামটিকে নিয়ে, গ্রামের মানুষগুলো নিয়ে। অর্থ লোভী, নারী লোভী, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী আসলাম সাহেব মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন এক নতুন মানুষ। ওদিকে ঢাকা শহরের খবর খুব খারাপ, সারাদেশে মুত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত বাইশ লক্ষ মানুষের, তার মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই মারা গিয়েছে চৌদ্দ লক্ষ মানুষ।
লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক