বহুকাল আগের কথা। ছোট্ট একটি দেশ। দেশের নাম যাপিয়াত। যাপিয়াতের একটি ছোট্ট গ্রাম কোবেংটা। সেই গ্রামে ছিল একজন চোর, অদ্ভূত সে চোর। সাজা দিয়ে কোনো লাভ হত না। জেলে রাখলে জেলের মধ্যে বসেই সে চুরি করত।
বিচার চলাকালীনও সে চুরি করত। একবার তো বিচারকের কলম চুরি করে ফেলল, ফলে বিচারক আর রায় লিখতে পারল না। অবশেষে তাকে চেক করে কলম পাওয়া যায় তার পকেটে।
লোকটির নাম হুগ্গিসা। বিচারক হুগ্গিসাকে ঐদিন অার কোনো সাজা দেয় না। বিচারের জন্য অাবার একটা তারিখ নির্ধারণ করে দেয়। তারিখের আগেই হুগ্গিসার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ জমা পড়ে।
হুগ্গিসা এক অদ্ভুত চোর, কিছুই যখন চুরি করতে পারে না, তখন নিজের ঘর থেকে জিনিসপত্র চুরি করে মানুষকে দিয়ে আসে। ফলে তার স্ত্রী পুত্ররাও তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেছে।
এক সপ্তাহ পর বিচারের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বিচারক ভাবছে, কী করা যায়, হুগ্গিসার মাথায় সবসময় নিশ্চয় চুরি ঘোরে, চুরি ছাড়া সে আর কিছু ভাবতে পারে না। তার মাথাটা ব্লক করে দিতে হবে। তাহলে হয়ত সে চুরি করা বন্ধ করব।
বিচারক ভাবতে থাকে, কীভাবে কারো মাথা ব্লক করে দেওয়া যায়, ভাবনা বন্ধ করে দেওয়া যায়। বিচারক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখে, আদীবাসীদের সাথে মিশতে থাকে।
জুয়ানো নামে একটি আদীবাসী এলাকায় গিয়ে দেখে, সেখানে এক লোক ডানে বায়ে মাথা নাড়াচ্ছে আর কী জানো বলছে। লোকটির নাম ওনাও।
“কী বলছে সে” বিচারক বোঝার চেষ্টা করে। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেও কিছু বুঝতে পারে না। শুধু কিছু শব্দ শুনতে পায়- তিয়ানো তিয়ানা, তিয়ানো তিয়ানা …
-এই জাতীয় একটি শব্দ শুনতে পায়।
লোকটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে ওর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিচারক। পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারে, লোকটি ছিলু দুর্ধর্ষ, নানান অপরাধে সে অপরাধী ছিল। তবে যেহেতু সাইলাং এলাকায় কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না, তাই তাকে জেলে রাখতে হত। কিন্তু জেলে রেখে কোনো লাভ হত না, সে আরো দুর্ধর্ষ হয়ে উঠত।
এই অবস্থায় নিয়াংজো এলাকা থেকে এক লোক এসে একটা দাওয়াই দেয়। লোকটি ওনাওকে বেঁধে ফেলতে বলে, তারপর টানা চব্বিশ ঘণ্টা ওনাওকে ফেলে রাখা হয় কিছু না খাইয়ে।
লোকটি ওনাওকে এক জাতীয় পানীয় খেতে দেয়। পানীয়টি খাওয়া হলে কিছু শক্ত খাবার দেওয়া হয়। এরপর ওনাও-এর চারপাশে একটি শব্দ (তিয়ানা তিয়ানা) অনবরত করা হতে থাকে।
এভাবে তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর। ওনাও-এর বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। বাঁধন খুলে দেওয়ার পরও ওনাও “তিয়ানা তিয়ানা” করতে থাকে।
ওনাও এখন অার কোনো অপরাধা করে না, শুধু “তিয়ানা তিয়ান” করে, এবং অন্যকে করতে বলে। ওনাও চিন্তা করে, বিষয়টিকে আরেকটু পরিশিলিত করা যায় কীভাবে।
ওনাও এক ধরনের জপমালা তৈরি করে। যেটি টিপে টিপে গুণে গুণে সে এখন “তিয়ানা তিয়ানা” বলে। ওনাও সকল অপরাধীদের উদ্ধার করতে চায়। সবাইকে মালা দিয়ে বলে “তিয়ানা তিয়ানা” করো।
সাইলং এলাকায় অনেকে এটি দেখে মালার ব্যবসা শুরু করে, অনেক ভালো মানুষও মালা কিনতে থাকে, এবং “তিয়ানা তিয়ানা” করে।
বিচারক একশো পঞ্চাশ বছর বয়শের একজন লোকের কাছ থেকে জানতে পারল, বিষয়টিতে শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে অপরাধীরা আর “তিয়ানা তিয়ানা” করে না, তারা ভাণ করে, ফলে মালা বিক্রি হয় প্রচুর। সরল মানুষ এগুলো কেনে, এবং সারাক্ষণ “তিয়ানা তিয়ানা” করে।
এখন সবার মাথা ব্লক হয়ে গেছে। চিন্তা-ভাবনার আর কোনো প্রসার নেই এই রাজ্যে। বিচারক গভীরভাবে বিষয়টি ভাবতে থাকে।
ফিরে এসে বিচারের দিন কঠোরভাবে সে রায় লেখে। রায়ে লেখে, হুগ্গিসার তিন দিনের সাজা হল!
এত বড় অপরাধীর তিন দিনের সাজায় সবাই হতবাক হয়। এরপর বিচারক বলে, হুগ্গিসাকে তিনদিন একটি সংর্কীর্ণ কক্ষে রেখে একটি অডিও চালিয়ে দিতে হবে, যেখানে একটি শব্দ বারে বারে উচ্চারিত হবে।
শব্দটি হচ্ছে, “তিয়ানা তিয়ানা।” হুগ্গিসার হাতে একটি মালা থাকবে। মালার বুটিগুলো গুণে গুণে সে “তিয়ানা তিয়ানা” বলবে। প্রতি ঘণ্টায় ৩৬০০ বার। রুমে একটি পানীয় রাখা হয়, এই তিনদিন সে এই পানীয় খাবে।
এভাবে বিশ ঘণ্টায় ৭২০০০ বার এবং তিনদিন “তিয়ানা তিয়ানা” করলে তাকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে।
একইসাথে সবাই মনে রাখবেন, শুধুমাত্র বাতিকগ্রস্থ অপরাধীদের ব্রেন ব্লক করতে “তিয়ানা তিয়ানা” সাজা প্রযোজ্য হবে। অন্য কেউ কোনোভাবে কাউকে মালা হাতে “তিয়ানা তিয়ান” বলতে এমনকি উৎসাহিত করাও যাবে না। সেটি হবে দণ্ডণীয়।