Headlines

বিষাদের ছায়া // নীলা আক্তার

 

 

 

 

 

কিছু কিছু রাতে আমার খুব ইচ্ছে করে

অবিকল আমার মত আমার কেউ থাকত!

কোন কথা নয়, শুধু পাশাপাশি বসে

কিছু শূণ্যতা ভাগ করে নিতাম দু’জনে!

 

কতটুকু জমা হলে স্মৃতি ভোলে না উত্তাপ
কতটা পায়ের ছাপ দিয়ে চেনা যায় ধাপ।

 

মানুষগুলোর জীবন একটা সমুদ্রের মাঝে ভেসে
যাওয়া একটা নৌকার মতন নয়?গোটা সমুদ্রের
কিছুই সে জানে না। জানে না এই সমুদ্রের কোন
প্রান্তে কোথায় কোন স্থলভাগ আছে, জানে না
গভীরে অতলে কত কিছু লুকিয়ে আছে, কত না
দেখা-না কল্পনা করা জগতও আছে তারই নিচে,
চারপাশে, লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে। দিনমজুরদের
জীবনের অংশ না হলে কেউ কখনো উপলব্ধি
করতে পারবে স্বল্প সীমায় জীবনকে যাপন ও
বিনোদন কেমন হতে পারে? যার একটা পা নেই,
তার জ্বালা ও সঙ্কটময় জীবন পা-সমৃদ্ধ
মানুষগুলো কি কষ্মিনকালেও ভাবতে পারে?
বাবা-মা যার বেঁচে নেই, তাদের ‘ছায়াহীনতা’ কি
কখনো বাবা-মায়ের নিত্য আগলে রাখা জীবনে
থাকা সন্তানগুলো ভাবতেও পারবে? সংসার
ভেঙ্গে যাওয়ার কষ্ট কেমন হয় তা কি
ভালোবাসার বন্ধনে থাকা যুগলেরা ঘুণাক্ষরেও
টের পায়? ক্যান্সার রোগে বিছানায় পড়ে থেকে
ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাওয়ার কষ্ট কি যৌবনে
ফ্রাইড চিকেন গোগ্রাসে গেলা জীবনে ভাবতে
পারে কেউ?
যে নিজেকে বিনয়ী ভেবে ফেলেন, তিনি তো
কখনই বিনয়ের স্পর্শই বুঝেননি। নিজেকে যিনি
জ্ঞানী বলে মনে করে ফেলেন, তিনি কখনই
বুঝেননি ‘কেমন করে বসতে হয়, হাসতে হয়’–তার
মাঝেও জ্ঞান আছে। এককালের সর্বসেরা হয়ে
যারা মরে যায়, পরের প্রজন্মে কেউ তাদের গড়ে
যাওয়া রেকর্ড মুড়িভাজার মতন সহজ করে
ফেলে। প্রতিটি জ্ঞানীর চেয়ে একজন জ্ঞানী
আছে, প্রতিটি দক্ষ মানুষের চেয়েও আরেকজন
দক্ষ আছে। প্রতিটি সুন্দর মানুষের চেয়ে
আরেকজন সুন্দর আছেন, কাছেই, আশেপাশেই।
প্রতিটি বিনয়ীর চেয়েও বেশি বিনয়ী আছেন,
চালাকের চেয়েও বেশি চালাক থাকে হরহামেশাই।
“কক্ষনো না/ সবচাইতে সেরা/ জঘন্যের
জঘন্য/ কোনোদিন হতে পারে না/ অসম্ভব/
ইতিহাসের সর্বোচ্চ/ সবচেয়ে তুচ্ছ/ সর্বকালের
শ্রেষ্ঠ”– ইত্যাদি প্রায় ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত
বিশেষনগুলো মূলত অজ্ঞদের অলংকার। এটুকুন
জীবনে সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা নিতান্ত কিছু ছাঁচে
ধরা কাজ করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ, সর্বোচ্চ,
সেরা, নিকৃষ্ট, অভাগী, হতভাগ্য, ফালতু মনে
করা মানুষগুলো জীবন কেমন হতে পারে তার
কিছুই পায় না। মানুষের জীবনগুলো নানান
সংগ্রামের মাঝে প্রমাণিত হয় তা কত বেশি
অসহায়। মানুষ হয়ত বেশিরভাগ সময়ে নিজের
অসহায়, তুচ্ছ, পরাজিত চেহারাটুকু দেখতেই ভয়
পায়। ভিন্ন সব বিশেষণ দিয়ে তাই হয়ত প্রচুর
কথা হয়। বিপুলা পৃথিবীর এত অল্প দেখেই
মানুষগুলোর কেমন করে দাম্ভিক, অহংকারী
চেহারাকে অতি-আত্মবিশ্বাসী রূপ দিয়ে প্রকাশ
করতে পারে? অল্প ক’টা দিন পরে তো
মাটিতেই ফের মিশে যাওয়া। কীসের এত
আকর্ষণ, এত কামনা আর সম্পদকে আয়ত্বে
রেখে দেয়ার উদগ্র বাসনা? মানুষগুলো খুব দুর্বল
আর অসহায় নয় কি?

 

যত প্রিয় মানুষের মৃতদেহই হোক না কেন, সেটা লাশই !
মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আর নাম নাই,
কোন পরিচয় নাই, অবদানও নাই । লাশ মানেই
ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্ন, তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
মাটিচাপা দিতে পারলেই যেন সকল দায়মুক্তি ।
মানুষ মরলেই যেন তাকে লাশ বলতে হবে ? কেন
তার নাম ধরে ডাকা যায় না, কেন সম্পর্ক দিয়ে
ডাকা যায় না ? বেঁচে থাকতে যে মানুষটা নিজের
সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে যায় তাকে আর যাই
হোক স্বার্থপরের মত লাশ বলে ডাকা যায় না ।
দেহ নাই বলে তার সমস্ত কিছু ছুঁড়ে ফেলে তার
সব পরিচিতি নিছক লাশ বানিয়ে দেয়া যায় না ।

 

কষ্টেরা লাল হয়, কষ্টেরা নীল হয়
কষ্টেরা কাঁধে কাঁধে জোট বেঁধে মিল হয়।
কষ্টেরা ভুল হয়, চড়ে বসা শূল হয়
কষ্টেরা নোনা ঢেউয়ে বাঁধ ভাঙা কুল হয়।
কষ্টেরা নীড় হয়, অবনত শির হয়
কষ্টেরা বুকে গাঁথা বিষ মাখা তীর হয়।
কষ্টেরা রাগ হয়, কোষে কোষে ভাগ হয়
কষ্টেরা ওষ্ঠেতে চেপে ধরা দাগ হয়।
কষ্টেরা ঘোর হয়, বুক ভেঙে চুর হয়
কষ্টেরা সানাইয়ে বিষাদের সুর হয়।
কষ্টেরা রাত হয়, ঘাত বোনা তাঁত হয়
কষ্টেরা কাছে থেকে দূরে সরা হাত হয়।
কষ্টেরা হার হয়, দুই থেকে চার হয়
কষ্টেরা তারই থাকে কষ্টটা যার হয়।

 

অবশিষ্ট থাকে শুধু দীর্ঘশ্বাস!
আঙ্গুলের ডগায় বুকে দৌড়ঝাঁপ,

নেমে যায় আলতো করে,

আমার প্রতিবাদ পরাজিত হয় প্রেমে।

নাভী পদ্মরাগে ভালবাসার চাষাবাদ,
শিরিশিরি করে এগিয়ে যায় তা আরো নিচে,

এভাবে অবশেষে রক্তে গিয়ে মেশে হৃদয়ের সুবাতাস।

সুনামীর ঢেউয়ে ভাঙে ঘর একদিন আবার অবিশ্বাসে!

নীলা আক্তার