নিস্তব্ধ প্রহর
নিজের ছায়ার ভেতর প্রিয় ছায়া খুঁজি
প্রহরগুলো আজকাল বড় বেশি শূন্য ;
শূন্যতায় ভেজানো নিস্তব্ধ প্রহর গুণে গুণে
সবটুকুই যত্ন করে তোমার জন্য তুলে রাখি !
চুঁড়ি ভাঙার শব্দ ,
খালি বর্তনের টুং-টাং শব্দ
পিপাসিত গ্লাসে জল ঢালার শব্দ
বাতায়ন পাশে বাতাসের হেঁটে যাওয়ার শব্দ
অদ্ভুত কলোলিত হৃদপিণ্ডের স্পন্দন!
শুকনো পাতার মত বেজে উঠা দীর্ঘশ্বাস,
ফেরিওয়ালার হাঁক
বারান্দার কার্ণিশে চড়ুই পাখিদের কোলাহল
শিশুদের জীবনের দিকে দৌড়ে যাওয়ার শব্দ ।
“কিংবা”
কর্ণকুহরে অদ্ভুত বিন্যাসে
ব্যথা কিংবা প্রেমের ভাষায় বয়ান করা
ঝর-ঝর অঝর ধারায় ঝরে পড়া বৃষ্টির সুর
সবটুকুই যত্ন করে তোমার জন্য তুলে রাখি।
কবিতার চোখে জীবন
শস্য কাটা একভূমি হাহাকার পেরিয়ে
দূরত্বের আয়ু পিছনে ফেলে
শ্যামল অনুভবে জীবন বাসা বাঁধে কবিতায় !
চৈত্রের উঠোনে লেপ্টে থাকা খা খা রোদ্দুর
পেরিয়ে জীবন পথ খুঁজে নেয়
অলিখিত সব কবিতার চোখে ।
সহস্র বছরেও বেশি আগে
কবিতার সাথে জীবনের সন্ধি,
কবিতা যখন গুটিসুটি মেরে বসেছিল
ব্রহ্মাণ্ডের কোন গোপন কুঠুরিতে,
তখনও সখ্যতা ছিল জীবন আর কবিতায়
এ’যেন সৃষ্টি আর স্রষ্টাতে বহমান প্রেম …
অন্ধকারে উন্মোচিত কবিতার ছায়ায়
সুপ্ত রাতকে তুলোর মতই ছিঁড়ে ছিঁড়ে
কবিতায় জীবন খুঁজে কবি !
অতৃপ্ত গ্লানির মাঝে নিচ্ছিদ্র শব্দ তরঙ্গে
জীবনের লাঙ্গলে অনুভব খুড়ে খুড়ে পাওয়া
এলোমেলো শব্দের চুম্বন ছুঁয়ে যায়
কবির রন্ধ্রে রন্ধ্রে কবিতা হাসে শিশুর মতো।
কখনও পথভুলো ব্যথা ফেলে যায়
তার বিচ্ছিন্ন পদাবলী
হাত বাড়িয়ে কুড়িয়ে নেয় কবি
প্রতিটি প্রহরের নিজস্ব ভঙ্গিমায়
জীবন কখনও কখনও ফিকে করে দেয় সবকিছু
পথ হয় ধূসর অবিশ্বাসী হয় মায়া !
তবে,
কবিতার চোখে জীবন কখনও
বিশ্বাস হারায় না, ফিকে হয় না জীবনের রঙ।
নির্জন আত্মবিলাপ
নিমজ্জমান প্রাণের দিঘীতে জিওল
অতীত স্মৃতিদের নির্জন আত্মবিলাপ,
বাস্তবের ঝুল বারান্দার সম্মুখে ঝুলে
থাকা হেমলক পেয়ালা
দহনের প্রলাপ শুনিয়ে শুনিয়ে ক্লান্ত !
এখানে কোন সুখের স্থায়িত্ব নেই
গম্ভীর নিমগ্নতায় অন্ধকার নামছে গাঢ় হয়ে ,
দূরনীলিমার শূন্যতায় হাত বাড়িয়ে করতলে
বেদনাকে পুষছি কালের প্রতিশ্রুতি ভেবে ।
পৃথিবীর পৃষ্ঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে
দ্বিখন্ডিত হতে দেখছি সাজানো পৃথিবী ।
তবুও নদী বয়, বাতাস ছুটে নিরুদ্দেশে
পাখিরা কুজন করে ফুল ফোটে তার বাসনায় !
দীর্ঘশ্বাস আকুতি ছড়ায় কারো পথে পথে
আকাশে উড়ে রঙিন ফানুস
ছায়া পড়ে বুকের মাঝ দরিয়ায় ।
কৃষ্ণপক্ষের পান্ডুলিপি
আলোকে খুব অনুকূলে ভেবেই পথ চলছি
সেই অবুঝ বেলার প্রার্থনা করতলে রেখে
পেরিয়েছি হিংস্র তেপান্তর আর ভয়ার্ত মরু।
এ’পথে -পথেই খুইয়েছি সবটুকু আয়ু
চোখের দীঘি পূর্ণ করেছি আর্তনাদের ঘামে
এ পথেই চৈতন্যের আত্মসমর্পণ
এ’পথেই সমাহিত করেছি
এক জীবনের কৃষ্ণপক্ষের পান্ডুলিপি ।
প্রদীপ নির্বাসিত নিশিতে
বহুদূর বিস্তৃত আকাশও অদ্ভুত সর্বগ্রাসী
আবছা আলোর মেঘে ঢাকা চাঁদ
উৎফুল্ল মোহনে মুগ্ধ করে শূন্যতার চরাচরে
ঢেলে দিয়েছে আজলা ভরা আঁধার।
কতবার ভেবেছি তোমাদের মতই
অপথ্য গত হওয়া আলোর
বাসি গন্ধে নিজেকে আর ভাসাবো না ;
তবুও –
ঘোর লাগা আলো রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
খেলা করে অদ্ভুত সব উপমা হয়ে …
রক্তের পালক
হৃদয়ের মিনার থেকে ভেসে আসা চিৎকার
ঐ দুর্ভেদ্য দুর্গে পৌঁছায়নি কখনও
অবহেলায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে ঝরে গেছে রক্তের পালক
অসীমের আহ্বানে দগ্ধ দিবস রাত্রির কান্না
ভেসে যায় অদৃশ্য রক্তের মিছিলে ।
চোখের জঠরে জন্মভার নিয়ে অধীর আগ্রহে
প্রতীক্ষায় থাকে তীক্ষ্ম জল প্রপাত
নিজেকে আড়াল রাখি বড় বেশী ভয় আজকাল
সরলতার রূপকথারা অদ্ভুত হিংস্র হয়ে উঠছে।
কত সহজেই স্বপ্নগুলো কন্ঠ রোধ করে দিয়ে
স্বঘোষিত মৃত্যুর পথে হেঁটে যাচ্ছে
উন্মুখ তাকিয়ে দেখছে পৃথিবীর মৃত দৃষ্টি
গভীর ভাবে পদধ্বনি শ্রবণ করছে বিষণ্ন প্রকৃতি।
সুদীর্ঘ পথ বেয়ে গোলাপ বনে কাঁটার ঝাড়ে
ঝুলে আছে স্বার্থপর রক্তগন্ধি মৃত ভালোবাসা
দুঃসহ যন্ত্রণায় বিমুখ সূর্যটা পেরিয়ে গেছে সীমান্ত রেখা
এখানে এখন সবটুকুই আঁধারের দখলে।