রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত সব শিক্ষকের সনদ যাচাইয়ের সিন্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত সকল শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ যাচাই-বাছাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে চিঠি দিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর মাউশি এ বিষয়ে তদন্তে নামবে।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত অর্ধশত শিক্ষক জাল সনদে শিক্ষকতা করছেন। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এমপিও বাতিলসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটিকেও এ বিষয়ে কারণ দর্শানো হবে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) সালমা জাহান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাউশির তদন্তে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষকের সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। আরও অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদে চাকরি করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকদের সনদ যাচাই করার জন্য শিগগিরই মাউশিকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে (ডিআইএ) এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বিভিন্ন সময় অভিযোগও করেছেন স্থানীয় লোকজন। কিন্তু তাদের ব্যাপারে কোনো তদন্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানির অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিবন্ধন সনদ জাল করে চাকরি ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। জাল কাগজপত্র দিয়ে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন অনেকে। বনশ্রী শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শাখার শিক্ষক ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বর্তমান পদে পদোন্নতি নিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক আ. ছালাম খানের বিএড সনদ ভুয়া অভিযোগ করে অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু তদন্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেন। গত ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করার জন্য মাউশিকে নির্দেশ দেয়। মাউশির সেসিপ প্রকল্পের উপ-পরিচালক কাজী নূরে আলম সিদ্দিকী তদন্ত করে সত্যতা পান। এরপর মাউশি ছালাম খানের এমপিও স্থগিত করে। একই সঙ্গে তাকে চাকরিচ্যুত করতে ম্যানেজিং কমিটিকে চিঠি দেয় ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে ছালাম খান হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও ছালাম খানের বিরুদ্ধে ভর্তি ব্যাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, আইডিয়ালে গত সাড়ে সাত বছরে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের অনেকের নিবন্ধন সনদ জাল, কেউ ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এদের সনদ যাছাইয়ের সাথে এমপিওভুক্তির বিষয়টি তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে। তিনি বলেন, শুধু আইডিয়ালেই নয়, ভিকারুননিসা নুন স্কুলসহ সারা দেশের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ভুয়া সনদে চাকরি করছেন।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, আইডিয়ালে কর্মরত অনেক শিক্ষক বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সনদ দেখিয়ে চাকরি করছেন।