বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধুই একটি স্বশস্ত্র জনযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল মানব মুক্তির সনদ, এবং তা শুধু বাংলার মানুষের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্য একটি দিক নির্দেশনা। মানুষের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির বিকাশ কেমন হওয়া উচিৎ—সে নির্দেশনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তথা ’৭২-এর সংবিধানে ছিল। সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয় নতুন সঙ্ঘায়নটি আমরা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে অন্ধকারের শক্তির কাছে সবই পরবর্তীতে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তির পথে বাংলার মানুষের অগ্রযাত্রা বেনিয়ারা থামিয়ে দিয়েছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, গণ মানুষের মানবিক চেতনার যে জাগরণ এবং মুক্তির আকাঙক্ষা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব এবং দিক নির্দেশনায় ১৯৭১ সালে সৃষ্টি হয়েছিল অদৃশ্য হলেও তা সবসময় বহমান ছিল এবং এখনো আছে। আবার তা বেগবান হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সব জঞ্জাল—এটাই প্রত্যাশিত এবং অনিবার্যতা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তা কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে সে প্রত্যয়টিই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আবার সঞ্চারিত হয়েছে।
যে মৌল চেতনাগুলোর ওপর ভর করে এবং যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে ১৯৭১ সালের আজকের দিনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন—মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক এ বৈশিষ্টগুলো মাথায় রেখে প্রজন্মকে কাজ করতে হবে:
১. শোষক এবং বেনিয়াদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া;
২. তুর্কি, সৌদি তথা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা জবরদস্তিমূলক এবং আবহমান বাংলার সাথে বেমানান সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটানো;
৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা যে নতুন এবং ভয়ানক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্রাজ্যবাদের সূচনা করেছিল তার অবসান ঘটানো;
৪. ভারতকে এটা বুঝানো যে, ভারত যদি পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে সাম্য, স্বাধীনতা এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার চর্চা না করতে পারে তাহলে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করে সেটি করার মতো মানুষ ইতোমধ্যে ভারতবর্ষে তৈরি হয়েছে;
৫. ’৭২ এর সংবিধানের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নতুন সঙ্ঘায়ন এবং তা অর্জনে স্বচেষ্ট হওয়া।
যদি প্রশ্ন করা হয় উপরের লক্ষ্যগুলোর একটিও কি অর্জিত হয়েছে? হয়নি। হয়নি বলেই এখনো মানুষের সংগ্রাম শেষ হয়নি এবং আমাদের মুক্তির যুদ্ধটিও রয়েছে অসমাপ্ত।
ফলোআপনিউজের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা:
আমাদের ’৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতির একটি হচ্ছে ‘জাতিয়তাবাদ’ –এটি পরিবর্তন করা হোক। পরিবর্তন করে সেখানে ‘মানবিকতাবাদ’ সংযোজন করা হোক।