মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৩০ জনকে নিহত হযেছে, হত্যা করা হয়েছে এবং ১৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সংশ্লিষ্টতার ৩ রকমের ব্যাখ্যা করা হয় । মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা ( চোরাচালান) ও চালানে সহযোগীতা। কোন অভিযোগে কাকে হত্যা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে আমরা জানি না। মাদক ব্যবসা যারা করে, যাদেরকে আল্লাদ করে বলা হয়, ড্রাগ লর্ড, তারা কেউ গরীর লোক নয়। কিন্তু প্রতীয়মান হচ্ছে যে, যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের সম্পদ ও সম্মত্তির পরিমাপে তারা সাধারন পর্যায়ের লোক। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব লোক ড্রাগ ডিলিংয়ে কতটা লাভভান হয়েছে, কোন পর্যায়ের লোক সে রকম তখ্য প্রকাশ করা হয়নি।
২. টেকনাফের ১৪ কিলোমিটার জায়গা দিয়ে মুলত ইয়াবা ঢুকে এবং সারা দেশে যায়। এর মৌলিক দায় বিজিবির, ওই এলকার পুলিশ ও ইনটিলিজেন্স-এর
সরকারের হিসাব মতো পুলিশের ৮০০ জন মাদক চালানে জাড়িত। ৫৭ জন কে শাস্তি দেয়া হয়েছে? বদলী সাসপেন্ড এইসব। আলীকদম, লামা, নাইক্ষংছড়ি, রোয়াংছড়ি সহ ৭ জন পুলিশ কর্মকতা জড়িত। তাদের নামসহ উল্লখে আছে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। আমরা কি দাবি করেছি যে তাদেরকে মেরে ফেলা হোক? ক্রশফায়ার হোক? অথচ মৌলিক দায়িত্ব কি তাদের নয়?।
৩. বিজিবি প্রধান স্বীকার করেছেন, তাদেরও দুর্বলতা আছে। তবে পানি পথে বেশি মাদক চালান আসে। কোষ্টগার্ড প্র্রধান বলেছেন, তাদের মধ্যেও ত্রটি আছে। বস্তুত পুলিশ, বিজিবি ও কোষ্টগাডের লোকদের সংশ্লিষ্টতা তারা অস্বীকার করেনি। সেটা সম্ভবও নয়। কারন হাতে নাতে আইনী সদস্যের লোকজনও ধরা পড়েছে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কি শাস্তি হয়েছে? তারা কি তাদের ক্ষেত্রে গুলি করে হত্যা অনুমোদন করেন? ‘ক্রশফায়ার ‘ অনুমোদন করেন? প্রযোগ করার দৃষ্টান্ত আছে? অন্যের বেলা করছেন কেনো? আমার মনে করি কারো ক্ষেত্রেই কিলিং গ্রহণযোগ্য নয়।
৪. সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ চোরাচালানকৃত ইয়াবার কিছু অংশ সিজ দেখিয়ে, বাকী অংশ দেশের ভিতরে পাঠানো, বিক্রি করা। এটা কারা করে? তাদের জন্য ক্রসফায়ার অনুমোদন করা যায়? অত:পর বাংলাদেশ রেলওয়ের বেশ কয়েকটি ট্রেন, সরকার নাম জানে, তারা সেগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহন করে। রেল পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নেই? একজনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে? বুঝা যাচ্ছে তারা এটা নিজেদের জন্য চান না? বাংলাদেশের সংবিধান বলে আইন সংকলের জন্য সমান। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করছেন না?
৫. সংক্ষেপে এই যদি হয় বাহিনীগুলোর দুর্বলতা ও সংশ্লিষ্টতা, তাদের হাতে বন্দুক দিয়ে প্রকৃত অপরাধীকে আঘাত করা সম্ভব কি? তাদের হাতে সে ক্ষমতা থাকা উচিৎ কি? কক্সবাজার বান্দরবান এলাকায় ৩০ জন ড্রাগ লর্ড আছে। তাদের নাম অাছে সরকারের কাছে। মূল জায়গায় হাত দিলে ১ মাসে দমন সম্ভব। অথচ বস্তিতে রেড দেয়া হয়? বস্তির লোকজরেন এতো ক্ষমতা? এগুলো এক ধরনের সস্তা বাহাদুরী। সস্তা কিছু লোক এতে খুশীও হয়। জীবন নিয়ে তামাশা করার সীমা থাকা উচিৎ। অথচ বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন না?
৬. জাতিসংঘও সম্প্রতি বস্তি রেডের নিন্দা করেছে। এবং প্রতিবেদনে বলেছে, রাজনৈতিক ব্যাকিং ছাড়া ইয়াবা পাচার চলতে পারে না। ইয়াবা চালানীরা শক্তিশালী রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকে এবং এখনও আছে। তবু আমারা চাই না, তাদের হত্যা করা হোক। হত্যা করা মানে অপরাধ আড়াল করা। শেকড় রেখে ডালপালা ছাটা। হত্যা মানে ভুল লোককে ফাসিয়ে দেয়া। জাতিসংঘ রিপেোট অনুযায়ী, গ্রেফতার করা ১৩০০ জনের মধ্যে নির্দোষ লোক রযেছে। এতো গ্রেফতার করতে হবে কেন? আমি মনে করি, বেছে বেছে ১০০ লোকের হাতে হ্যান্ডকাপ পরালে সারাদেশের ইয়াবা বন্ধ হতে পারে। আমি তাদেরকেও হত্যা সমর্থন করি না।
৭.বরং একটি ট্রাইবুন্যাল গঠন করা যেতে পারে। রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীরা যদি আন্তর্জাতিক মানের বিচারাদালত পেতে পারে, দেশের অন্য নাগরিকরা তা পেতে পারে না কেন? । তবে বেশ কিছু বিচারককে চাকুরি থেকে বিদায় করা দরকার হতে পারে। তবে এখন অর্ধেক বিচারক ও আইনী বাহিনীর লোক ভালো, তাদের দিয়েই কাজ চলতে পারে বলে আমার ধারণা। ড্রাগ ডিলিং থেকে রাজনৈতিক নির্বাচনের খরচের যোগান হয়। এটা তাদের পক্ষে সম্ভব কি না সেটাও মৌলিক প্র্রশ্ন।
৮. আমার এ বক্তব্যের ভিত্তি, সরকারের রিপোর্ট, জাতিসংঘ প্রতিবেদন, দেশি ও বিদেশী গণমাধ্যম। এবং বিচারক ও প্রশাসক হিসাবে আমার অভিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। এছাড়া সাবেক আইজিপির বক্তব্য, আমার শিক্ষক, সহকর্মী, বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও ক্রিমিনোলজিষ্টদের মতামত।
৯. আমি মনেকরি আইনী বাহিনীর কর্তৃক সরাসরি হত্যা সংবিধান পরিপন্থি। যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমি সংবিধানের মৌলিক অধিকারে
প্রদত্ত ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’ থেকে এর রিরোধীতা ও প্রতিবাদ করছি। বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে একটি রাষ্ট্রকে সভ্য হবার জন্য এটা আমার দায়িত্ব বলে মনে করছি। নির্দোষ ও অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনতার ওপর খুন-জখম-জুলুমের ঘটনা বারবার ঘটছে। এবং এটা বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে ভারাক্রান্ত করছে, অনিরাপদ বোধ করছি। সেই দায় দেখে আমি আগামীকালের প্রতিবাদ সমাবেশে শামিল হচ্ছি, শামিল হবার জন্য আহবানও করছি। সরকার/ রাষ্ট্র ইচেছ করলে আমাকে গ্রেফতার করতে পারে।
ড. শেখ বাতেন.
০৭.০৬.২০১৮