খিচুড়ি, সঙ্গে পাঁচরকম ভাজি, নিরামিষ তরকারি, চাটনি, পায়েস —মনকামেশ্বর শিব মন্দিরের হেঁশেলে মোটামুটি এটাই নিত্যদিনের মেনু। কিন্তু, হঠাৎই সেই তালিকায় আগাপাশতলা বদল। আলু-পটলের বদলে কড়ায় চেপেছে আলুর চপ, নিরামিষ তরকারির বদলে পেঁয়াজি, পাউরুটির কাটলেট। খিচুড়ির বদলি টক-ঝাল ভাতের পদ। সঙ্গে মিষ্টি, কফি, খেঁজুর ও অন্য ফলমূল। ঈশ্বরের কাছে মানত রেখে উদয়াস্ত উপোসী রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের খাইয়ে দাইয়ে পুণ্যার্জনই লক্ষ্য। রমজান মাসে ইফতার খাইয়ে সে পুণ্যের সুযোগ কি নষ্ট করা যায়! তাই মুসলিম ভাইবোনেদের ইফতার খাওয়ানোর নিমন্ত্রণ করে এই বিপুল আয়োজন। যার হত্তাকত্তা উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের মনকামেশ্বর মন্দিরের মহিলা পুরোহিত মোহান্ত দেবগিরি। তিনি বলেছেন রোজাদারদের সেবা করা অবশ্যই একটি মহান কাজ।
হাজার বছরেরও বেশি পুরনো শিবমন্দির এই মনকামেশ্বর মন্দির। যার প্রধান পুরোহিত মোহান্ত দেবগিরি, তিনি মন্দিরের প্রথম মহিলা পুরোহিত। মন্দিরে ইফতারের আয়োজন করে সৌভ্রাতৃত্বের নজির গড়ার পরিকল্পনা তাঁরই। রবিবার গোমতী নদীর তীরে দালিগঞ্জ সেতুর কাছে অবস্থিত এই মন্দিরে ইফতারে যোগ দেয়ার পাশাপাশি আরতিস্থলে নমাজ পড়েন ৫০০ মুসলিম ধর্মাবলম্বী। লখনউয়ের এই প্রথম মন্দির যেখানে ইফতারের আয়োজন করা হল। ভোলেনাথের এই মন্দিরে ভোগ পেতে শ’খানেক ভক্তের পাত পড়ে রোজ। এদিন তাঁরাও যোগ দিলেন ইফতারে।
রবিবার মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল ইফতার পার্টির। যদিও এর আগেও দেশের একাধিক মন্দিরে ইফতারের আয়োজন করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে বিষয়টি নতুন, তা হল মন্দিরের আরতিস্থলে বসেছিল এই ইফতার। আর ইফতারের রান্নাও করেছিলেন মন্দিরের তিন রাঁধুনি। এদিন এই ইফতারে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় শিয়া ও সুন্নি দুই সম্প্রদায়েরই ইমাম, মৌলানা ও সাধারণ মানুষজন। মন্দিরের এই ইফতার আয়োজনে খুশি স্থানীয় তিলে ওয়ালি মসজিদের ইমাম ফজল ই মান্নান বলেন, ‘মোহান্ত দেবগিরি আমায় মন্দিরের আয়োজিত ইফতারে আমন্ত্রণ জানান। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পেরে আমি খুবই গর্বিত।’ এই ধরনের উদ্যোগ সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। মন্দিরের পুরোহিত মোহন্ত দেবগিরি জানিয়েছেন, “রমজান পবিত্র মাস। আমরা সব ধর্মের উৎসবই উদযাপন করি। আর ইশ্বরের জন্য উপোস রাখা ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাইবোনদের খাওয়ানো আর প্রার্থনার সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।” তিনি আরও বলেন, ‘সকল ধর্মই ভালবাসা এবং ভ্রাতৃত্বের কথা বলে। আমাদের মন্দিরে অনেক মুসলিম ‘কন্যা পূজা’ করে। পূজা সামগ্রীর স্টলও অনেক সময় মুসলিমরা পরিচালনা করেন। ইমাম, পুরোহিত বা পাদ্রিদের মতো ধর্মগুরুদের উচিত সমাজে সৌভাতৃত্ব এবং সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।’
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন