মুখ দিয়েছেন যিনি-৩: এবার শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা বরিশালে

গৃহকর্মী নির্যাতন

“মুখ দিয়েছেন যিনি” এই ক্যাটাগরিতে এ ধরনের নিউজগুলি প্রকাশিত হবে। সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে, এটা প্রায় সব সমাজেই আছে, এটা আসলে সেই প্রাগতৈহাসিক যুগের কথা যখন কর্মক্ষম যুবক পাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে যেত, আর শিকার এবং যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন হতো এ ধরনের যুবক।

শিশু মৃত্যুর হার, এবং প্রায়ই যুদ্ধ খুনোখুনি লেগে থাকায় তখন এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। তাই হয়ত মানুষকে জন্মদানে উৎসাহিত করতে ঐ প্রবাদ বাক্যটি প্রচলিত হয়েছিল।

কিন্তু আধুনিক যুগ তেমন নয়, মানুষ এখন খুবই লক্ষ্যভেদী, তাই পূর্বের সেই প্রবাদটি এখন ধারণ করার অর্থ হচ্ছে, পরিকল্পনা ছাড়া একটা মানব শিশু পৃথিবীতে এনে এরকম নিষ্ঠুর পরিণতি দেওয়া।

গৃহকর্মী নির্যাতন


কয়েক বছর ধরে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসতে শুরু করেছে। অনেকে বলছে, “এসব কী ঘটছে!” আসলে এসব এ সমাজে বহুকাল ধরে ঘটছে। ডিজিটাল লাইফের কল্যাণে কিছু কিছু সামনে আসতে শুরু করেছে।

নির্যাতনকারী সম্পর্কে বলার আগে যেটি বলতে হবে, শিশুকে কাজে দেওয়ার জন্য শিশুর পিতা-মাতাকে কেন আইনের আওতায় আনা হবে না? এ ধরনের একটি আইন কেন সংসদে পাস হয় না যে একটি নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতা-মাতাকেই নিতে হবে?

এটা শুধুই আরেকটি ঘটনা, এবং নিশ্চয়ই এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে যেগুলো কোনোদিন সামনে আসবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়?

আইন দিয়ে কি মানুষের বিবেক জাগ্রত করা যায়? কেন এ তল্লাটের মানুষ এমন বিবেকহীন হলো। শিক্ষিত চাকরিজীবী তারাই তো এরকম ঘটনা বেশি ঘটাচ্ছে! তাহলে এ শিক্ষার মূল কোথায়? এসব শিক্ষা কি তাহলে মানুষকে খুব বেশি সংকীর্ণ, স্বার্থপর ও ভোগবাদী করে তুলছে, নাকি কোনো শিক্ষায় আমরা অাসলে অর্জন করছি না শুধু পারিবারিক এবং পৌরণিক ভাবধারার ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত?

প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে রিষ্ঠুরতা এ সমাজের মানুষের সহজাত হলো? পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার মধ্যে কোথাও আত্মঘাতী স্বার্থপরতা এবং নিষ্ঠুরতার বীজ লুকানো রয়েছে কিনা? সমাজ দর্শনে ভুলটা কোথায় খুঁজে দেখতে না পারলে এরকম ঘটনা তো শুধু আইন দিয়ে রোধ করা যাবে না।

গ্রেপ্তার গৃহকর্ত্রী শারমিন আক্তার
গৃহকর্ত্রী শারমিন আক্তারের বাসায় ঘটেছে এ নির্যাতনের ঘটনা, যিনি নিজেও একজন মা। তিনি এবং তার স্বামী দুজনেই শিশুটির উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন।

“ওই এলাকার ‘আকাশ মঞ্জিল’ নামের ভবনের ৪ তলায় অভিযান চালিয়ে নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এসময় আটক করা হয় গৃহকর্ত্রী শারমিন আক্তারকে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় গৃহকর্তা আশরাফুল ইসলাম।”

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি সাংবাদিকদের জানায়, আশরাফুল-শারমিন দম্পতি তাদের শিশু সন্তানকে দেখভাল করার কথা বলে কয়েক মাস আগে তাকে এনেছিল। কিন্তু বাসার সব কাজ তাকে দিয়েই কবরানো হত। কোনো কাজ তাদের মনমতো না হলেই তাকে মেঝেতে ফেলে লাথি-ঘুষি দিত, লাঠি-খুনতি দিয়েও পেটাত।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির দেহের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে, তার দুই চোখের চারপাশই বীভৎসভাবে ফোলা।

ঘটনাগুলো ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু নির্যাতনের ধরণ একই প্রকার, খুব ভিন্ন হওয়ার কথাও না। ভয়ঙ্কর দিকটা দেখুন- এই মানুষগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠিত, দাপটে দাপিয়ে তারা চলছে। এইসব নারীরা আরও একটু বেশি সুন্দর হচ্ছে, স্নো পাউডার মাখছে, প্রেমের প্রস্তাব পাচ্ছে—কিন্তু একটা শিশুকে গৃহে এনে, সকল কাজ তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে, শিশুটির উপর এভাবে নির্যাতন করার চেয়ে ভয়াবহ কুৎসিত কোনো রূপ কি মানুষের থাকতে পারে?

যদি বোঝা যেত যে এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে অাতঙ্কিত না হয়ে পারা যেত, কিন্তু এটাই তো কম বেশি আমাদের সমাজের গড় চরিত্র। সবাই হয়ত এভাবে নির্যাতন করছে না, কিন্তু নির্যাতন তো করছে কোনো না কোনোভাবে। তাহলে খুঁজতে হবে কোথায় এ নিষ্ঠুর মানসিকতার উৎস্থল।

গ্রেফতার করা, বিচার করা, এগুলো খুব গতানুগতিক বিষয়—এ দিয়ে তো সমাজ সুন্দর হবে না। শুধু ভীত হবে, ভয় পেয়ে তো মানুষ শুধু লুকায়, গোপন করে, ভয় থেকে ভালো হয় এমন নজির তো নেই কোথাও।

https://www.facebook.com/100008648283893/videos/1987430768221847/?t=5