মাথার উপরে একটি অদৃশ্য ছাতা লাগে তাদের। যত শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয় হোক না কেন না-পাওয়া এবং সব-হারানো মানুষের দৃশ্যমান কিছুতে চলে না। দূরের অদৃশ্য একটি হাতছানি তাদের চাইই চাই। হাতছানি ছাড়া তারা বাঁচতে পারে না। তা শুধু পূণ্যলাভ এবং পাপ মোচনের জন্য নয়, এর চেয়ে বরং আশ্রয় লাভের আকাঙক্ষাটাই সাধারণের মাঝে বেশি। এজন্যই ধর্মের সাতে তাদের এত দোস্তি। পূণ্যলাভ এবং পাপ মোচনের নেশা দুর্বৃত্তের। মর্যাদাহীন মানুষ, খেঁটে খাওয়া মানুষ, প্রাত্যহিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ, পাপবোধে তাড়িত মানুষ নিজের মাঝে নিঃস্বতা খুঁজে পায়। নিজস্ব অনুভূতিতে এরা কতটা শক্তিহীন এবং এ ধরনের সমাজ ব্যবস্থা এদের কতটা মর্যাদাহীন এবং নিথর করে রেখেছে তা অনুসন্ধিৎসু, আপন শক্তিতে বলিয়ান এবং আপন কাজে নিমজ্জিত একজন মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। শরীরের শক্তিটাকেই যারা একমাত্র শক্তি ভাবে, তত্ত্ব তারা চোখ দিয়ে খোঁজে, হাত দিয়ে ধরে। এদিক থেকে ধর্মই সবচেয়ে সহজে পাওয়া, পড়ে পাওয়া ষোলো অানা। বিনা পয়শায়, বিনা কষ্টে পাওয়া, জায়গা-জমির মতো পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। বাঁচার জন্য যে অদৃশ্য হাতছানি তাদের প্রয়োজন, ধর্মের মধ্যে তা তারা খুঁজে পায়। যদিও বেশিরভাগ মানুষ ধর্মগুলোর অন্তঃসারশূন্যতা অনুভব করতে শিখেছে, কিন্তু নিজের মাঝে উৎকর্ষতার অভাব এবং নিদারুণ সমাজ ব্যবস্থার কারণে কোনো বিকল্প তাদের সামনে নেই। তাই এখনও তারা এটা আঁকড়ে ধরে আছে, থাকতে হচ্ছে।
অনুন্নত দেশ মানে আর কিছু নয়, যে দেশের মানুষ অনুন্নত সে দেশটা অনুন্নত। মানুষ অনুন্নত মানে, যে দেশের মানুষের মর্যাদা নেই, মর্যাদা আছে অর্থের এবং ক্ষমতার। এ ধরনের দেশে বেশিরভাগ মানুষ খুব অসহায় বোধ করে। প্রথমত তাদের আত্মমর্যাদা নেই, এবং তারা মনে করতে বাধ্য হয়–আত্মমর্যাদা থাকার মত কিছু তাদের মাঝে নেই, ফলে বহুদূরে-পরকালে তাকানো ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো অপশন থাকে না। অলীক সেই কল্পনাটুকু তারা ছাড়বে কেন? কেড়ে নিতে দেবে কেন?