‘দ্যা লিটল ভ্যানগার্ড’ নামে ২০২০ সাল থেকে বাগেরহাটে শুরু হবে স্পেশাল এ স্কুলটি। এর আগে অটিস্টিক শিশু এবং তাদের মাতা-পিতাদের নিয়ে চলবে সেমিনার-সিম্পোজিয়ার।
বাংলাদেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ অটিস্টিক শিশু জন্ম নেয় তার ওপর কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশের হাসপাতালগুলো ঘুরে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সংখ্যাটি দিনকে দিন বাড়ছে। কেন জন্মে নেয় এ ধরনের শিশু, বিশেষ কোনো কারণ এখনও জানা যায় না, তবে জেনেটিক ডিজঅর্ডার এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ। এ ধরনের শিশুরা পৃথিবীকে দেখে ভিন্নভাবে, অন্য আর পাঁচজন শিশুর মতো তারা নয়, তাই তাদের মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ব্যবস্থা। এই বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে বিশেষ স্কুল অন্যতম। কিন্তু বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোতে সে ব্যবস্থা নেই।
বিষয়টি মাথায় রেখে কবি, লেখক, গবেষক দিব্যেন্দু দ্বীপ এগিয়ে এসেছেন বাগেরহাটে এ ধরনের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠায়। তিনি বলেন, “অামার নিজের সন্তানটিও অটিস্টিক চাইল্ড। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ঢাকায় স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করার সিদ্আন্ত নিই, কিন্তু যে খরচের তালিকা সেখান থেকে ধরিয়ে দেওয়া হলো তা অস্বাভাবিক। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্আন্ত নিলাম যে নিজ জেলাতেই এ ধরনের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায় কিনা। অনেকের সাথে কথা বলে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে শুরু করলাম। এখনই যে স্কুল শুরু করছি এমনটি নয়। প্রথমে কয়েক মাস এ ধরনের শিশু এবং তাদের মাতা-পিতাদের নিয়ে সেমিনার আয়োজন করতে চাই। আগামী বছরের শুরু থেকে ইচ্ছে আছে স্কুল শুরু করার।”
দিব্যেন্দু দ্বীপ এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন: ০১৮৪ ৬৯ ৭৩২৩২
শিশুর মানসিক বিকাশমূলক সমস্যাকে অটিজম বলা হয়। এ ধরনের সমস্যা যাদের হয় তাদের অটিস্টিক শিশু বলা হয়। অটিজম, এই শব্দটি দ্বারা অনেকে মানসিক রোগ বুঝলেও এটি আসলে এক ধরনের স্নায়ুবিক বিকাশজনিত সমস্যা। অটিজম আক্রান্তদের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে।
যে কারো মধ্যে এই সমস্যাগুলো কম বা বেশি মাত্রায় থাকতে পারে। অটিজমের সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য কোন চিকিৎসা নেই। তবে দ্রুত অটিজম শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলে আক্রান্তদের অনেকটা ভালো করে তোলা সম্ভব বলে মত চিকিৎসকদের।
জেনে নেওয়া যাক অটিজমের প্রধান ৯টি লক্ষণ:
১. ছয় মাস বা তার বেশি বয়সে স্বতঃস্ফূর্ত হাসি বা যে কোন আবেগ প্রকাশ করতে পারে না।
২. ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা না বলা সেইসঙ্গে ইশারা বা হাত বাড়িয়ে কিছু চাইতে বা ধরতে পারে না।।
৩. চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারে না।
৪. ভীড় এড়িয়ে একা থাকতে পছন্দ করে।
৫. অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারে না।
৬. একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে। কোনো পরিবর্তন এলেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
৭. একই শব্দ বারবার বলতে থাকে বা একই আচরণ বারবার করে যেমন: একইভাবে হাত বা মাথা নাড়ানো।
৮. বিশেষ রং, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ বা স্বাদের প্রতি কম বা বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়।
৯. কোনো বিষয় বা বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখায়।
চিকিৎসকদের মতে সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে, বিশেষ করে স্কুলশিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দিয়ে সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে আক্রান্তকে দক্ষ করে তোলা সম্ভব।
প্রশ্ন: অটিস্টিক শিশু বলতে কী বুঝায়? একটি শিশুকে কখন অটিস্টিক বলা হয়?
উত্তর: অটিজম হলো শিশুর মানসিক বিকাশমূলক একটি সমস্যা। এটি শিশু তার মাতৃগর্ভ থেকেই নিয়ে আসে। শিশুর এই সমস্যাটি সাধারণত তিন বছরের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। কোনো শিশুকে যদি আমরা অটিজম স্পেকটাম ডিজঅর্ডার বা অটিজম বর্ণালী বৈকল্য বলতে চাই, তাহলে তাকে ডিএসএফ ফাইভ অথবা আইসিডি টেন অনুযায়ী কিছু বৈশিষ্ট্য পূরণ করতে হবে। এসব দেখে বোঝা যাবে শিশুটির অটিজম আছে কি নেই।
প্রশ্ন: বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
উত্তর: এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমপেয়ারমেন্ট ইন সোশ্যালাইজেশন, কমিউনিকেশন এন্ড রেসট্রিকটেট রিপিটেটিভ প্যাটার্ন অব বিহেভিয়ার। প্রথমে হলো সামাজিকীকরণ। শিশুটির সামাজিকতার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। অর্থাৎ তার ভাব আদার প্রদানের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। যখন শিশুটি এই ভাব আদান প্রদান করতে পারবে না বা মনের ভাব অন্যের কাছে প্রদান করতে পারবে না, তখনই তার মধ্যে কিছু আচরণগত সমস্যা দেখা যাবে। এই আচরণগত সমস্যার মধ্যে দেখা যাবে যে কাজ করছে সেটি হয়তো বার বার করতে থাকবে। করছে নাতো করবেই না। দেখা যাবে তার বয়সী অন্য শিশুর সঙ্গে সামাজিকতা স্থাপনের কোনো ইচ্ছা নেই। সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একা একা কাজ করতে থাকবে। দেখা যাবে, কোনো কোনো শিশু নিজেকে নিজে আঘাত করছে। অথবা অন্যকে আঘাত করার তার একটি প্রবণতা থাকবে। কারণ, মানুষ যখন মনের ভাব বা আকাঙ্খা, প্রতিবেশ ও পরিবেশ অনুযায়ী প্রকাশ করতে পারে না, তখনই তার মধ্যে এই আচরণগত সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হয়।