এবার পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১ মে শনিবার। কালীপূজা ধর্মমতে সপ্তাহের শনিবার বা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। এবারের পূজোয় লোক সমাগম ছিল প্রচুর, পূজোর পাশাপাশি রাতেই মেলা বসে, ফলে মানুষ পূজো দেখার পাশাপাশি মেলা থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনে, এবং সময় কাটায়। কালী পূজো শুরু হয় মূলত রাত বারোটার পর। পাঠা বলি শুরু হয় আরো পরে, সাধারণত রাত তিনটের দিকে বলি শুরু হয়। তার আগে যারা বলি দিতে ইচ্ছুক তাদের নাম লেখাতে হয়। নাম লেখানোর পর নাম ধরে ধরে ডাকা হয় দেবি কালীর সামনে পাঠা উৎসর্গ করার জন্য। উৎসর্গ করার পর শুরু হয় বলি।
দুইশত বৎসরের প্রাচীন, বলভদ্রপুর গোলাখাল কালীমন্দীরে দেওয়া হয় পাঠা বলি। এবার ১৮৩টি পাঠা বলি দেওয়া হয়েছে। বলির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, দেখা গেছে এবছরই বলির সংখ্যা সর্বাধিক। মন্দিরটি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বলভদ্রপুর নামক গ্রামে অবস্থিত।
মন্দিরে কালো পাঠা উৎসর্গ করে ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও, কেউ আর ছেড়ে দেয় না। মন্দির কতৃপক্ষের মাধ্যমে বলি দিয়ে ‘প্রসাদ’ বানিয়ে নেয়। দক্ষিণা হিসেবে মন্দির কতৃপক্ষকে দিয়ে আসতে হয় মাথাটা।
পাঠা বলি দেওয়ার আদীম এ প্রথা নিয়ে মানুষের মাঝে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যাই থাক না কেন বিষয়টি এখন একটি বড় উৎসব ঐ অঞ্চলের মানুষের জন্য। নারী পুরুষ ভেদে পূজোর দিন রাতে যে পরিমাণ লোক সমাগম হয় সেটিই বুঝিয়ে দেয়— মানুষ উৎসব পছন্দ করে, ভগবানের নামে হয় বলে একটার পর একটা বলি দেওয়ার বিষয়টি তাই মানুষের মাঝে বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়াও তৈরি করে না, বরং, ছেলে বুড়ে সবাই শেষ রাত অবদি থেকে দেখে পাঠা বলি দেওয়া।
মন্দিরে পাঠা বলে দেওয়া নিয়ে ধর্মমতেই দ্বিমত রয়েছে, এবং জানা যায় যে মন্দিরে পাঠা বলি দেওয়া কোনোভাবেই ধর্মসম্মত নয়, বরং এটা ধর্মবিরোধী, কারণ—
শ্রীমদ্ভাগবতের (৪/১৯/৩৬) শ্লোকের ব্যাখ্যা এরকমঃ
মা কালী হলেন শিবের সাধধী স্ত্রী। তিনি শিবের উচ্ছিষ্ট (প্রসাদ) গ্রহণ করেন। শিব নিরামিষাশী, প্রসাদভোজী, তাই মা কালী কখনো আমিষাশী নন।
ধর্মমতে শিব হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব। তিনি বিশেষ কৃপা করে ভূত-প্রেত পিচাশদেরও আশ্রয় দিয়েছেন। তেমনই মা কালী যক্ষিণী, ডাইনীদেরও আশ্রয় দিয়েছেন।
এই শ্রেণীর প্রাণীরা জগতে যাতে বেশী উৎপাত না করে, সেজন্য রক্তমাংস হাড় ভক্ষণের প্রবল প্রবণতাকে সংযত করার উদ্দেশে তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন।
পিচাশ গুন সম্পন্ন মানুষদের জন্যে, যার বিধান হল অমাবস্যার গভীর রাতে মহামায়ার উগ্ররূপা কালীমূর্তির সামনে পাঁঠা বলি দিয়ে তার মাংস ভক্ষণ করা হয়। শাস্ত্রের এই বিধান মাংসাহার নিয়ন্ত্রণেরর জন্যেই। মানুষ যাতে যেখানে সেখানে যখন তখন পশু হত্যা করে মাংস ভক্ষণে লিপ্ত হতে না পারে এজন্য এ বিধান, কারণ, রোগাক্রান্ত পশু খেয়ে বা যেনতেনভাবে পশু মেরে খেয়ে অনেক মানুষ তখন মারা যেত এবং অভিশপ্ত হত বলে মানুষ বিশ্বাস করত।
কিন্তু কালক্রমে দেখা গেল, নানাভাবে লোকে বলি প্রথার দোহাই দিয়ে অসংখ্য প্রাণী হত্যা করতে থাকল, তখন আবার ঈশরের দোহাই দিয়ে বলি প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। “ভগবান শ্রী বিষ্ণু বুদ্ধ রূপে আবির্ভূত হয়ে বলি প্রথা নিষিদ্ধ করেন।”
ধর্মীয় ব্যাখ্যাতে একথাও বলা আছে—
আসুরিক প্রবৃত্তির মানুষেরা জাগতিক লাভের জন্যে কালীর পুজা করে। কিন্ত তাদের সেই পুজার নামে তারা যে পাপ করে, তা থেকে তারা অব্যাহতি পায় না আমৃত্যু পর্যন্ত।