একটা নষ্ট মানুষকে এতটা সহ্য করা কেন? রাষ্ট্রের দুর্বলতা কোথায়?

বশেমুরপ্রবি

মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে? মানুষ ঠিক কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে? এটা বোধহয় পরিমাপযোগ্য নয়। আচ্ছা, একজন শিক্ষক কতটা নিচে নামতে পারে? কতটা জঘন্য হতে পারে? কতটা নির্লজ্জ হতে পারে? জানি না বর্তমান এই ভিসির (উপাচার্য) চেয়ে প্রকৃষ্ঠ কোনো উদাহরণ কারো কাছে আছে কিনা।

একটু তার আমলনামায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। আমি বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকি। এখান থেকেই যা খবর পাচ্ছি তার ভিত্তিতে এই লেখা। কিন্তু একটা দেশের সব মানুষ সব গণমাধ্যম তো এতটা খারাপ হতে পারে না যে সবাই মিলে একজোট হয়ে একজন ভালো মানুষের পিছে লাগবে! তাহলে গলদটা কোথায়? একজন জঘন্য মানুষের পিছনে সরকারের এখনো অবস্থান কেন? আর যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের মদদ তার পিছনে না থাকে তাহলে তার এত শক্তির উৎস কোথায়? দেশের জনগণ হিসেবে তা জানার অধিকার আমাদের আছে।

যাইহোক, তার আমলনামা এখন পর্যন্ত যা পাওয়া যাচ্ছে তা একটু দেখে নেওয়া যাক–

♣ আমি তার চরিত্রের দিকে প্রথমে যাব না। শুরুতে দেখে নিন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তথা একটি উঠতি সমাজকে কতটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সে। তাছাড়া দুবৃত্তায়ন কতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে তার প্রমাণ এই ভিসি এবং তার দ্বারা পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। আমার বলতে লজ্জা লাগছে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাদের জাতির পিতার নামে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে অনৈতিক এক শতাংশ (১%) ‘ভিসি কোটা’ চালু করেছেন তিনি। আচ্ছা ভিসি একা তো এটা করতে পারে না। তার মানে এক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং দুবৃত্তায়নের এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানীকরণ এবং সামাজিকীকরণ আছে। এটা জেনে আমি চো*না হয়ে গেছি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ১% ভিসি কোটা আছে।

নির্দিধায় বলা যায় যে এ কোটার মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থীকে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষাকে এই ভিসি কলঙ্কিত করেছে। শুধু এই একটা ইস্যুতে হলেও তাকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ আছে কি?

♣ সম্প্রতি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া এই উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সাথে (দ্যা ডেইলি সান এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি) কথোপকথনের এক পর্যায়ে উক্ত শিক্ষার্থীকে ‘তিন দিনের বাছুর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি তোর আব্বার কাছে শুনিস। গ্যাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন?

https://youtu.be/mL0JrGCvcTo?t=83

♣ যেহেতু আমাদের দেশে উপাচার্যের এই পদটি রাজনৈতিক এবং রাজনীতি বিবেচনায়ই মূলত ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়, প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে একসময় ছাত্রদল করা এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকাকালীন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হওয়া এই লোক ভিসি হলেন কীভাবে? 

♣ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সে তালিকাটি অনেক লম্বা, তাই সেদিকে খুব বেশি না যাই। (যেমন, ভিসির একদিনের চায়ের বিল ৪০ হাজার!)

♣ তার চরিত্র নিয়ে অনেক কথা। শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত দুএকটি উদাহরণ দিই-

একবার খবর আসলো যে তিনি বাসায় বিউটি পার্লার খুলেছেন। “ভিসির বাসভবনে বিউটি পার্লার!” -যুগান্তর, প্রকাশ : ০৫ মার্চ, ২০১৭। তখন একটি ছবিও প্রকাশিত হয়েছিল।

♣ আফরিদা খাতুন ঝিলিক (১৯) নামে এক নারী বর্তমানে বশেমুরবিপ্রবি লাইব্রেরিতে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। এই নারী অভিযোগ তুলেছিলো যে তার সন্তানের পিতা এই ভিসি। খবর- “ভিসি ভবনে নারীর আর্তনাদ, আমার সন্তানের বাবা ভিসি” আরটিভি অনলাই, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এ প্রকাশ।

বিউটি পার্লার
ছবিটি যুগান্তর পত্রিকা থেকে নেওয়া।

বর্তমানে ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলছে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে। আন্দোলনের চতুর্থ দিনে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন।

আজ রোববার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হকের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ক্যাম্পাসে এসে সংহতি প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন। বৃহস্পতিবার থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

এখন দেখার বিষয়- এই ভিসির অবৈধ খুটির জোর কত? ঠিক কতদূর পর্যন্ত ভাগ দিতেন তিনি? এত কিছুর পরও যেহেতু এতদিন টিকে ছিলেন, আছেন তার মানে তার কাছে টোপ দিয়ে ধরা আছে সমাজের অনেক মুখোশধারী ভালো মানুষও, নিশ্চিত থাকেন এর মধ্যে অনেক বুদ্ধিজীবি এবং শিক্ষানুরাগী মানুষও পাবেন, চলমান রাজনীতির রাজনীতিক তো পাবেনই।

আর উনি পদত্যাগ করলে বা ওনাকে বহিষ্কার করলেই বা কী হবে? এসব মানুষের কি তাতে কিছু হয়? এরা হচ্ছে আজরাইল, এরপর এরা উড়াল দেবে, কোনো একটা দেশে গিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করবে। নিশ্চিত থাকেন যে সেকেন্ড হোম তার গোছানোই আছে। হে, আমার অভাগা স্বদেশ, তোমার মুক্তি হবে কীসে! তোমার জন্য শুধু দু:খ হয়, নিরুপায় আমার শুধু দু:খ হয়।


শেকস্ রাসেল

লন্ডন, যুক্তরাজ্য