মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান খুঁজে বের করা হচ্ছে। এগুলো বাগেরহাট জেলার। এ বাদে বাগেরহাটে আরও নিশ্চয়ই স্থান, স্থাপনা, স্মৃতিসৌধ, শহীদের কবর এবং অন্যান্য স্থান/স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো খুঁজে পেতে সহযোগিতা করুন।
যোগাযোগ করুন:
দিব্যেন্দু দ্বীপ
সাহিত্যিক, গবেষক ও সাংবাদিক।
০১৮৪ ৬৯ ৭৩২৩২
১৯৭২ সালে (ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে হতে পারে) খুলনার পাইকগাছায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বাগেরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৭১ সালে গঠিত মুজিব বাহিনীর বৃহত্তম খুলনা অঞ্চলের প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু। ছবিঃ আব্দুল কাইয়ুমের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
চিতলামারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের ঘটনা এটি। অন্যান্য গ্রামবাসীর মতো মানদা রায়ের পরিবারও জীবন বাঁচাতে পাটক্ষেতে গিয়ে লুকিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি। রাজাকারেররা পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়ে মানদা রায়ের উপর বর্বর নির্যাতন চালায়, কোল থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় দেড় বছরের কন্যা শিশু লিপিকা রায়কে। নয় বছরের শিশু কন্যা নিলিমা রায়ের সামনে এ অত্যাচার চালানো হয়। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে শহীদ হন মানদা রায়ের স্বামী নির্মল রায়।
ফকিরহাট সিইও অফিশ নির্যাতন কেন্দ্র, বাগেরহাট জেলা। ১৯৭১ সালে ফকিরহাট ছিল বাগেরহাট মহকুমার অন্তর্গত একটি থানা।
ওয়াপদা রেস্ট হাউজ। এখানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘাটি গেড়েছিল।
কাঠুয়া বধ্যভূমি। এটি বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের একটি বধ্যভূমি। কাঠুয়া গ্রাম থেকে কয়েকজনকে ধরে রাজাকাররা জবাই করে হত্যা করে এ জায়গাটিতে। জায়গাটি এখনো অরক্ষিত। সদ্য একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে সেখানে।
কান্দাপাড়া গণহত্যা স্মরণে স্মৃতিসৌধ এটি। স্মৃতিসৌধটি নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে। এটি বাগেরহাট সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত।
সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া গ্রামের নিকারিপাড়ার এ বধ্যভূমিটি একেবারেই অরক্ষিত, এবং এতদিন অজানা ছিল।
গণকবরটি কাড়াপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি ঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, ভুলবশত কয়েকজন রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা ভেবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী, তাদেরই কবর এটি।
এটি বাগেরহাট শহরের দশানী মোড়ে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল ঠিক এ পথ দিয়েই পাকিস্তানি বাহিনী শহরে প্রবেশ করেছিল। প্রবেশ পথে তারা হত্যা করেছিল অসংখ্য মানুষ, তাদেরই কয়েকজনকে এখানে সমাহিত করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এ বধ্যভূমিটি পরিচর্যার অভাবে পরিণত হয়েছে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে।
এ ভবনটি বাগেরহাট শহরের শালতলা মোড়ে অবস্থিত শান্তি কমিটির সদস্য, রাজাকার ডা: মোসলেম উদ্দিনের বাসভন।
রামপাল উপজেলার ডাকরা বধ্যভূমি এটি। বধ্যভূমিটি বিশেষভাবে পরিচিত কারণ, ভারতগামী কয়েকশো নিরীহ মানুষকে ২০ মে ১৯৭১ তারিখে বাগেরহাটের রাজাকাররা নিমর্মভাবে হত্যা করে, এটি একক স্থানে একদিনে সংগঠিত বাগেরহাটের সবচেয়ে বড় গণহত্যা।
সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নে রাধাবল্লভ গ্রামে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তখন কেবল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তখন একটি তিন রুমের ভবন ছিল এখানে, যেটি পাশে পরিত্যাক্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। রাজাকার বাহিনী গ্রাম থেকে নারীদের ধরে এনে এখানে তাদের উপর নির্যাতন চালাত। দশম শ্রেণির ছাত্রী মঞ্জু রাণী অধিকারীকে একদল রাজাকার বাড়ি থেকে ধরে এনে নির্যাতন নিপীড়ণ চালিয়ে এখানে হত্যা করে।
রহমত হোটেল। বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রস্থল রাহাতের মোড়ে অবস্থিত এ হোটেলটি। ১৯৭১ সালে বাগেরহাট শহরে যে গুটিকতক হোটেল ছিল তার মধ্যে এটি একটি। এই হোটেলটিতে নিয়ে রাজাকার বাহিনী এবং পাকিস্তানি বাহিনী নারীদের উপর অত্যাচার চালাত।
শহরের প্রধান বাজার, নাগেরবাজারে অবস্থিত এ ভবনটি। ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী এখানে ক্যাম্প করেছিল। প্রতিদিন এখানে মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সদস্য অথবা হিন্দুদের ধরে এনে এখানে বা সংলগ্ন নদীর ঘাটে হত্যা করা হত।
শহরের ভৈরব নদীর দড়াটানা ঘাট এটি। শহরের (তখন মহকুমা) খারদার গ্রামের সরদার বাড়ি থেকে তিনজনকে ধরে এনে এ জায়গায় হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। জায়গাটি অরক্ষিত।
বাগেরহাটের প্রধান এবং কুখ্যাত বধ্যভূমি এটি। শহরের ডাকবাংলো সোজা এখানে একটি ঘাট ছিল, তখন এসডিও এই ঘাট দিয়ে নৌযানে ওঠানামা করত। এ জায়গাটিতেই বিশেষ করে রাজাকার বাহিনী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন পুরো সময়কাল জুড়ে গণহত্যা চালিয়েছে। জবাই করে হত্যা করে নদীতে লাস ভাসিয়ে দেওয়া হত। সম্প্রতি বধ্যভূমিটি সংস্কার করে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই ছিল পাশ্ববর্তী বেঁশরগাতি গ্রামের। মৃতদেহ এখানে কবর দেওয়া হয়েছিল।
বৈটপুরের গুহবাড়িতে শেষরাতে গণহত্যা সংগঠিত করেছিল রাজাকারেরা। জবাই করে হত্যা করেছিল একই পরিবারের চারজন সহ সাতজনকে।
মংলা উপজেলার মংলা বন্দরের অনেক লোককে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে হত্যা করে নদীতে লাস ফেলে দেওয়া হত। এর মধ্যে বন্দরের অনেক শ্রমিকও ছিল, যারা স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করত। অনেক সাধারণ মানুষকেও হত্যা করা হয়েছিল, বিশেষ করে হিন্দুদের। তাদের স্মরণে বন্দর চত্বরে নির্মিত হয়েছে এ স্মৃতিসৌধটি।
কাইজদিয়া গ্রামে কাঁঠালতলা নামক জায়গায় ১৯৭১ সালে ৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী এখানে একটি গণহত্যা সংগঠিত করে। অদূরেই তখন ছিল সামন্তসেনা রেল স্টেশন। ততকালীন ফকিরহাট থানার (বর্তমানে মোল্লাহাট) দিগঙ্গা প্রাইমারি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ফকিরহাট থেকে বেতন তুলে ফেরার পথে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হন। তবে কাঁঠালতলা নামে ফকিরহাট উপজেলা সদরেও (ততকালীন থানা সদর) একটি জায়গা থাকায় প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ডটি কোথায় সংগঠিত হয়েছিল সে বিষয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
খ্রিস্টার ধর্ম প্রচার করতে আসলেও ফাদার মারিনো রিগান ছিলেন একজন মানব হিতৈষী ব্যক্তি। মংলায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেন্ট পলস্ স্কুল। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কাজ করেছিলেন। সেন্ট পলস্ স্কুল সংলগ্ন গীর্জার সামনে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগানের কবর।
ভৈরব নদী সংলগ্ন, বর্তমান থানার বিপরীত পার্শ্বে এই ভবনটি অবস্থিত। রাজাকার মোজাম ডাক্তারের চেম্বার এটি। নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত তখন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক এটি।
রাজাকার মজিদ কসাইয়ের বাড়ি এটি। ১৯৭১ সালে বাড়িটি নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি গ্রামে অবস্থিত বাড়িটি।
৫ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের শাঁখারকাঠি বাজারে যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের কবর দেওয়া হয়েছিল পাশ্ববর্তী রামচন্দ্র গ্রামে খালের পাড়ে, জায়গাটি অত্যন্ত সংকীর্ণভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা আছে।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা শহীদ মিনার চত্বর গণকবর এটি।
মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ অজিয়র রহমান পাকিস্তান বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়। বাগেরহাট শহরের প্রধান সড়কটি তার নামে হলেও কার্যত নামটি ব্যবহৃত হয় না। সড়কে ফলকটির খুব জীর্ণদশা।
খাদ্দার বাড়িতে যাদেরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের মধ্যে ছিলেন মোরেলগঞ্জ উপজেলা (তখন এটি বাগেরহাট মহকুমার একটি থানা ছিল) আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর মোত্তালেব হাওলাদার।
শহীদ আব্দুর মোত্তালেব হাওলাদারের কবর এটি। এটি বাসাবাটি গ্রামে অবস্থিত।
কচুয়া উপজেলার শাঁখারিকাঠি বাজারে ৫৪ জন লোককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিল বাগেরহাটের রাজাকাররা। কোনোমতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ সেখানে রয়েছে, তবে সকলের নাম সঠিকভাবে সেখানে উল্লেখ নেই।
উত্তর রাজাপুর বধ্যভূমি, শরণখোলা, বাগেরহাট।
বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নে অবস্থিত সেলিমাবাদ কলেজ ঘেষে অবস্থান জয়নাল খাঁর এই বাড়িটি। ১৯৭১ সালে কলেজটি ছিল না। কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ////////////////// সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এই বাড়িটিই রাজাকারেরা এবং পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করত। এখান থেকে গিয়ে কচুয়া উপজেলার শাঁখারিকাঠী বাজারে রাজাকারেরা বর্বর একটি গণহত্যা সংগঠিত করে।
দৈবজ্ঞহাটী বাজার সার্বজনীন কালী মন্দির ঘেষেই ছিল একটি বড় গাছ। সেই বটগাছটিতে ঝুলিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিপন্থীদের নির্যাতন করত পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারেরা। পুরনো সেই বটগাছটি না থাকলেও একই জায়গায় আরেকটি বটগাছ রয়েছে।
বাধাল ইউনিয়নের শেষপ্রান্তে দৈবজ্ঞহাটী বাজারের কাছে অবস্থিত যশোরদি সরকারি প্রাথমিকি বিদ্যালয়টি। ১৯৭১ সালের বেশ আগে এই স্কুলটি একটি পাঠশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালে এটি ছিল সন এবং টিনের ঘর। এই স্কুলটিতে এসে রাজাকারেরা আশ্রয় নিত। উল্লেখ্য, যশোরদি গ্রামে প্রচুর রাজাকার ছিল।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ততকালীন ফকিরহাট থানার অন্তর্গত মানসা বাজারে ২০ এপ্রিল, ২১ এপ্রিল এবং ৩১ জুলাই পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল গণহত্যা। গণহত্যা জাদুঘর ২ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে শহীদদের স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে।
কিছুদিন একটি দখলদার পরিবার থাকলেও ’৭১-এর গণহত্যার শিকার হরিশ গুহর বাড়িটি এখন এভাবেই পড়ে আছে।
গণহত্যার পর গুহ পরিবারকে কবর দিয়েছিলো স্থানীয় কিছু মানুষ। কবরের গায়ে একটি নামফলকও ছিলো। পরবর্তীতে দখলদারেরা কবরের গা থেকে নামফলকটি তুলে ফেলে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কবরটি সণাক্ত করছেন। ছবিঃ পান্না বৈরাগী
স্থানীয় জমিদার সুশীল রায় চৌধুরীর সমাধি, যাকেও ঐদিন গুহ পরিবারের সাথে হত্যা করা হয়। কে বার কারা যেন সমাধি থেকে নাম ফলকটি তুলে ফেলেছে!
তালিকাটি অসম্পূর্ণ। এটি সম্পূর্ণ করতে সহযোগিতা করুন। ০১৮৪ ৬৯ ৭৩২৩২।