(১) প্রেমপত্র: এক কোলকাতাবাসীর প্রেমে পড়েছিলাম আমি তখন

বাংলাদেশ

অদৃষ্ট কাকে যে কী জন্য হাজির করে জানি না, তবে তোমার সাথে আমার পরিচয় হওয়াটা অপ্রয়োজনীয় নয় মনে করি। কিছুটা ভঙ্গুর অবস্থায় ছিলাম আমি, কাউকে ডাকার মতো শক্তি ছিল না, কিন্তু কেউ দরজায় টোকা দিলে মন তো বলে এই বুঝি কেউ এলো আমাকে উদ্ধার করতে! উদ্ধার কে কাকে করে এই দুনিয়ায়? কিন্তু এই মনে হওয়াটার মূল্য আছে। তাই তোমাকে আমি বলি আমার উদ্ধারকর্তী, যাকে আমি খুব করে কাছ থেকে দেখতে চাই, যতভাবে বন্ধু বানানো যায়, বানাতে চাই।

দূরত্বটা যে খুব বেশি এই যুগে তা তো নয়, কিন্তু আমি খুব জড়িয়ে পেঁচিয়ে আছি, জাল ছিঁড়ে বের হতে পারছিলাম না, অনেকটা ফাঁদে আটকে থাকার মতো। শিকারী আর কেউ নয়— আপনজনের প্রতি আবেগ আর দায়িত্ববোধ আমাকে আটকে রাখে। তবে পথ তো ইচ্ছে থাকলে আবিষ্কার হয়ই, কিন্তু ঐ দেরিটা যে হয়ে যায়, এ যুগের মানুষ এত দেরি কি সইতে পারে? তুমি কি বিরক্ত হয়ে যাওনি? আবার এমন খুব বিরক্ত হবেই বা কেন কী এমন আবেগে আমরা জড়াতে পেরেছি দূর থেকে এতদিনে? নাকি কিছু একটা জমেছে?

তোমার ভাবনা মাথায় আসলে আমার মধ্যে কিন্তু এক ধরনের শিরশিরে অনুভূতি হয়, তা যেমন মনে একইসাথে রক্তপ্রবাহে, মানে মস্তিষ্কে কিছু একটা টের পাই। মাঝখানে সীমান্ত না থাকলে ছুটে যেতাম, সব ভুলে শূন্য হয়ে জিরিয়ে নিতাম যদি সম্মতি দিতে।

এই দেরিটা আমারও একেবারে আর সহ্য হচ্ছে না। মাঝে মাঝে শরীর যখন বেঁকে বসে, তোমার কথা মনে পড়ে— তার মানে মৃত্যুর আগে একটা আক্ষেপ কমাতে হলেও তোমার সাথে আমার দেখা হওয়া দরকার।

আচ্ছা, তুমি কি অর্থবিত্তে বিশ্বাসী? আমি একটা দীর্ঘসময় সম্পদশালী হতে চাইনি, বিপরীতে গড়তে চেয়েছি মানুষের জন্য কিছু, লেখালেখি করেছি প্রচুর। কিন্তু এখন মনে হয় যে, কিছুটা ভুল হয়েছিল, বর্তমান যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাতে ভালোবাসার প্রকাশটাও তো অর্থ ছাড়া হয় না, ফলে আরেকটু সেদিকে মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল । এখন সেটি হতে গিয়ে শরীর যে বুড়ো হয়েছে তা বুঝতে পারছি। জীবন কতটুকু? এই শেষ হলো বলে, শেষ হবার আগে তোমার সাথে দেখা হোক, যতটুকু জমেছিল অনুরাগ— নিঃশ্বেষ হোক পার্থিব লেনদেনে। ভালো থেকে, ভালো রেখো।


কাঠ ঠোকরা