এতটা সুক্ষ্ম পরিকল্পনা করে
জীবনটা সাজাইনি কখনও,
আপন হয়ে দেখা দিয়েছে
যা কিছু ছিল একসময় ভীষণ নগন্য।
এ যেন ঠিক দীর্ঘ প্রতিক্ষীত
দেখাদেখি বিবাহের প্রস্তুতি—
হয় কোনো ভয়ে
যেন অজ্ঞাত কোনো অরণ্যে,
না হয় নতুন এক জীবনের জন্যে।
এক কাপ চা-ও আজাকাল যেভাবে
বানিয়ে, বসে, আয়েশ করে খাই,
তাতে জীবনটা এক অন্য মাত্রা পায়।
টং দোকানের সামনে দাড়িয়ে
বন্ধুকে খানিকটা পাশ কাটিয়ে
আগ বাড়িয়ে,
বোকা বোকা ভাব করে
মাত্র আজকে পরিচিত
কোনো এক নারীর সাথে
বিস্বাদ চায়ের চুমুকও যে
এতটা কাঙ্ক্ষিত হতে পারে,
তা কি জানতে পারতাম কোনোদিন?
যদি না কোনো নিষ্ঠুর হ্যামেলিয়ন
এসে বাজাতো এমন এক অদৃশ্য বীণ!
জানা হত না
আমাদের অজান্তে ঘরের পশ্চিম কোণে
কার্নিসে বাসা বাঁধা চড়ুই পাখি দুটোকে,
কী ভীষণ মায়ায় তারা সংসার সাজায়!
এত সাবধান, কিংকর্তব্য নয় কখনও,
তবু তাদের সাজানো স্বর্গ
তছনছ হয়ে যায় আমারই
পোষা বিড়ালের ক্রীড়নক থাবায়।
কাকে আমি ভালোবাসব তবে?
অভ্যাগত চড়ুই পাখি দুটোর সংসার,
নাকি আমার পোষা বিড়ালটিকে?
অবশেষে ভালোবাসতে বাধ্য হই
দ্বন্দ্ব সংঘাতে
নিজের ক্ষত বিক্ষত অন্তর আত্মাকে।
দ্বান্দ্বিকতাই বা এতটা স্পষ্ট করে
কে দেখতে পেরেছে কবে!
লুকিয়ে লুকিয়ে স্ত্রী যখন
কোনো বন্ধুকে একটু রোমান্টিক
কোনো বার্তা পাঠায় মুঠো ফোনে,
আমার কিন্তু মোটেও দম বন্ধ লাগে না,
বরং ভাবি পৃথিবীর সকল স্ত্রী-ই
ছটফট করছে
এমন একটু দম ফেলার জন্যে।
আসলে কাউকে স্বামী বা স্ত্রী
বানাতে নেই,
ভালবাসতে হয়, না পারলে বলতে হয়,
এই দেখো, আমি আর পারলম না।
সত্যিই আমি আর পারলাম না।
মানুষের বাঁচতে বড় ইচ্ছে করে,
স্বাধীনভাবে, নারী পুরুষ সবাই
সর্বাগ্রে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়।
খাবার দিয়ে,
জীবন হারানোর ভয় দেখিয়ে,
কিছুতেই তোমরা তাদের
আটকিয়ে রাখতে পারবে না।
মুক্তি দাও, মানুষকে মুক্ত করে দাও।
ছেলে মেয়ে, ভাই বোন, সন্তান,
স্বামী স্ত্রী, প্রেমিক প্রেমিকা,
ছাত্র ছাত্রী, সহযাত্রী,
বন্ধু বান্ধব, ক্রেতা বিক্রেতা,
শ্রমিক নেতা, পতিত বা পতিতা,
মুক্ত করে দাও,
ভো কাট্টা ঘুড়ির মতো
একে অপরকে উড়িয়ে দাও।
মানুষকে এভাবেই পেতে হয়,
এভাবেই পেতে চাও।
যে বেশ্যা পাড়ায় যাবে,
বৈধভাবে তাকে যেতে দাও,
যদি কোনো নারী
দেহের দাবদাহ মেটাতে চায়,
আকাশ ছেড়ে পড়ে পাতালের পায়,
কইরো না কখনও হায় হায়।
জীবনটা এমনই এক মহোৎসব–
আসন পেতে যার খাওয়া সে-ই খায়।
তুমি কেন তাতে দোষ খোঁজো?
তুমি বরং তোমারটা বোঝো।
তোমার ক্ষুধা নিবৃত হোক,
কখনও প্লাবিত জ্যোৎস্নায়,
কখনও নিকষ কালো অমাবশ্যায়।
তবু মনের কাজ মন করুক,
আগে মানুষ বাঁচুক,
সবাই যার যার বেঁচে উঠুক।
কোনটা সমুদ্র কোনটা পানি
কঠিন সে হিসেব নিকেষ—
আমরা কি কিছু জানি?
উপচেপড়া উর্মিমালা
যাবে যেথায় যাক,
আমার শুধু সমুদ্রটাই থাক।
নদীগুলো বাঁচুক,
মরা নদীগুলোও বেঁচে উঠুক,
স্রোতস্বিনী তোমার কৃপায়,
নদী বাঁচে, মানুষ বাঁচায়,
সমুদ্র তবু একই থাকে
আমি গিয়ে দেখেছি সেথায়।
কেউ গর্তে, কেউ সুড়ঙ্গে,
কেউ শর্তে, কেউ ষড়াঙ্গে।
বাঁচতে দাও, বেঁচে উঠুক সবাই,
মানুষ যেন বলতে পারে
ক্রোধ, প্রতিহিংসা, ঘৃণা বলে
মনে আর কিছু নাই।
আছে কাম, আছে ভালোবাসা,
আছে মাদকতা, আছে প্রত্যাশা।
আবারও সব ঠিক হবে,
আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে
জীবনের আরও কিছু মানে,
অনেক আপনজন
ঠিকেই হারিয়ে যাবে!
কৈফিয়ত আর বিঘ্নতায় নয়,
মানুষকে ভালোবাসার শর্তে
আমাদের তবু বাঁচতে হবে।
শিক্ষা নাও, বুঝতে শেখো,
শপথ করো, ভাবতে থাকো,
প্রভুত্ব, স্বামীত্ব বা ধর্মীয় তত্ত্ব নয়,
মানুষের জীবন যেন
নিঃশর্ত এবং নিঃস্বত্ত্ব হয়।
মানুষ বাঁচুক মানুষের সত্তাটা
বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গিকারে,
চারিদিকে মুক্তির বার্তা বেজে উঠুক
নীরব স্লোগানে স্লোগানে, সমস্বরে।
উৎসর্গঃ বন্ধু রাজিব হাসান এবং তার সহধর্মিণী সুমি আক্তার কে। তারা দুজনেই আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীও বটে। সুমি আক্তার সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত, এবং দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বর্তমানে করোনাক্রান্ত। আমি তার সত্বর রোগমুক্তি কামনা করি।
তোমাদের জন্য আরোগ্য কামনা—
নয় শুধু তোমরা ধন্য,
মানুষ বাঁচুক, তোমরা মানুষের জন্য।