ঢাকা, ২৮ আগস্ট ২০২০
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক তরুণ লেখক সাইফুলবাতেন টিটোর উপন্যাস ‘বিষফোঁড়া’ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালালনির্মূল কমিটি। আজ (২৮ আগস্ট) সংগঠনের সভাপতি লেখক ও প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবির এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়— ‘গত ২৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির গবেষণাসেল-এর সদস্য, তরুণ লেখক সাইফুল বাতেন টিটো কর্তৃক কওমি মাদ্রাসায় শিশু-নির্যাতন বিষয়ক উপন্যাস ‘বিষফোঁড়া’ নিষিদ্ধকরণের আদেশের আমরা প্রতিবাদ ও নিন্দা করছি।
‘বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল সভ্য দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের প্রতি যে কোনও ধরনের শারীরিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ আমাদের গণমাধ্যমে অহরহ আবাসিক কওমি মাদ্রাসায় শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনসহ নানাবিধ শারীরিক নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোনও শিশু নির্যাতনকারীকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করা হয়েছে এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। মানবাধিকারের পরিপন্থী যে কোনও ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার তথ্য যখন গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনও শিল্পমাধ্যমে প্রকাশিত হয়— সরকারের কর্তব্য হচ্ছে নির্যাতন বন্ধের জন্য দেশের আইন অনুযায়ী নির্যাতকদের শাস্তিপ্রদান এবং নির্যাতিতদের রক্ষা করা।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-যুদ্ধাপরাধী অধ্যুষিত খালেদা-নিজামীদের জোট সরকার সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর নজিরবিহীন নির্যাতনের প্রতিবাদ করার জন্য দেশের খ্যাতিমান লেখক সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করে যেভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা লংঘন করেছে তার ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হয়েছে এবং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি অধিকতর সন্ত্রাস ও নির্যাতনে প্ররোচিত হয়েছে। ‘ধর্মব্যবসায়ী মৌলবাদীদের তুষ্ট করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে একজন উদীয়মান মুক্তমনা লেখকের উপন্যাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, যেভাবে নিকট অতীতে আমাদের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য লেখকদের রচনা বাদ দেয়া হয়েছে এতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত হয়েছে এবং জঙ্গী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। ‘আমরা সাইফুল বাতেন টিটোর ‘বিষফোঁড়া’ উপন্যাসটির নিষিদ্ধকরণ প্রত্যাহারের পাশাপাশি কওমি ও অন্যান্য আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরদাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদদাতাঃ
কাজী মুকুল
সাধারণ সম্পাদক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি