বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীদের গ্রেফতারের দাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

রাজধানী ঢাকার ধোলাইরপাড় মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীদের তীব্র নিন্দা এবং তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র শাখা বঙ্গবন্ধু পরিষদ। 

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডঃ নুরুন নবী এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাফায়েত চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে মৌলবাদী শক্তি আজ বাংলাদেশকেই অস্বীকার করছে— বাংলাদেশে এবং বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ভাস্কর্য মূর্তি সবই রয়েছে। সে দেশের মুসলিমদের তো তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ভাস্কর্য একটি দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্মারক। মৌলবাদীদের মদদদাতা পাকিস্তানেও তাদের জাতির পিতা জিন্নাহ-এর ভাস্কর্য রয়েছে। এটা মৌলবাদীদের অপরাজনীতি। জাতি যেন কোনোভাবেই এই অপরাজনীতির ফাঁদে পা না দেয়। 

তারা আরো বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় ৫০ বছর পরও আজকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আমাদের দেখতে হয়! একাত্তরের পরাজিত শক্তির আস্ফালন আমরা আজও দেখতে পাই। যে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, চার হাজার ছয়শ বিরাশি দিন কারাবরণ করেছেন, সে দেশে বসবাস করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার ধৃষ্টতা দেখায় এরা কারা? আসুন অমরা এই মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। আমরা যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে এই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের গ্রেফাতের দাবি জানাচ্ছি। এবং এ ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী আস্ফালন যাতে ভবিষ্যতে দেখাতে না হয় সেজন্য যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত,

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ধোলাইপাড় মোড়ে যেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে চরমোনাই পীরের এক সমাবেশে মুফতি নূর হোসেইন নূরানী ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় সরাসরি হুমকি দিয়েই বলেছেন, ‘…এয়ারপোর্ট এলাকায় মূর্তি বানিয়ে রাখতে পারেননাই, ভেঙে দিয়েছি। আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, যদি বাহাদুরি দেখান আপনাকে দেখে নেওয়া হবে। মূর্তি বানালে সে মূর্তি এখানে থাকবে না, বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধরাকে সরাজ্ঞান করবেন না, এই দেশ আপনার বাপ-দাদার একার নয়; মসজিদের শহর ঢাকাকে মূর্তির শহর বানাতে দেব না। মূর্তি বানিয়ে দেখুন, ২৪ ঘণ্টায় সেই মূর্তি বুড়িগঙ্গায় জমা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভোট ছাড়া যদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তবে মূর্তি কীভাবে ভাঙতে হয় নবীজী আমাদের সে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।… মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সূর্য উঠতে দেখবেন, সূর্য ডুবতে দেখবেন না।’

১৩ নভেম্বর (২০২০) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মাওলানা মামুনুল হক হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘ধোলাইখালে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সু-সন্তান হতে পারে না। এর মাধ্যমে মসজিদের শহরকে মূর্তির শহরে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে। এ মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তওহিদি জনতা নিয়ে শাপলা চত্বর কায়েম হবে।’ ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের চরমোনাই পীরও একইভাবে বঙ্গবন্ধুর নির্মিতব্য ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে সেটা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

১৫ নভেম্বর প্রতিবাদে বিবৃতি দেয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়—

নির্মূল কমিটি

 

 

কাজী মুকুল


ছবি: http://www.onebanglanews.com/ থেকে সংগৃহীত।