লকডাউন চলছে। কড়াকড়ি লকডাউন। সব জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট। কভিড-১-এর সংক্রমণে প্রতিদিন মৃত্যুহার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণ আরেকটু বাড়লেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। লকডাউন ছাড়া সরকারের কাছে এখন আর কোনো বিকল্প নেই। জনগণের উচিত স্বতস্ফুর্তভাবে জনসমাগম এড়িয়ে চলা। কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটছে না। জনগণ সচেতন হচ্ছে না। তাছাড়া হেফাজত বা জামায়াত চাচ্ছে সবকিছু ভেঙে পড়ুক। এটা সবসময়ই সব দেশে হয়েছে। ধর্মদস্যুরা সবসময় অরাজগতা দেখতে পছন্দ করে। এর মধ্যে তারা এক ধরনের বিকৃত আনন্দ খুঁজে পায়।
পুলিশ খুব কড়াকড়ি করছে। মুভমেন্ট পাশ না দেখায়ে কেউ যেতে পারছে না। তবে ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক এরকম বেশ কিছু পেশার মানুষের মুভমেন্ট পাশ লাগছে না। বনশ্রী সি ব্লকে একটি পুলিশ চেকপোস্ট বসেছে। দুপুরের দিকে হঠাত করে চেকপোস্টের সামনে লোক সমাগম বেড়ে যায়। পুলিশ কয়েকজনকে আটকে রাখে। এর মধ্যে একজন অ্যাডভান্স হাসপাতালে তার মরণাপন্ন মাকে দেখতে যেতে চাচ্ছে। পুলিশ বিশ্বাস করলেও তাকেও ছাড়ছে না। পুলিশ বলছে, আপনাকে ছাড়লে অনেককেই ছাড়তে হবে। নামাজের সময় হয়ে আসছে। এরমধ্যে একজন টুপি পরা ভদ্রলোক সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় সে বলে, “নামাজ পড়তে যাব।” পুলিশ সাথে সাথে ছেড়ে দেয়। এটা দেখে মাকে দেখতে যেতে চাওয়া সেই লোকটি পিছিয়ে গিয়ে একটি টুপি খোঁজে। এসময় কিছু দূরে এক রিক্সালার মাথায় একটি টুপি দেখতে পায়। সে রিক্সালাকে বলে, “ভাই, তোমাকে একশো টাকা দিচ্ছি, আমাকে টুপিটা দাও।” রিক্সালা টুপিটা তাকে দেয়। লোকটি টুপিটা মাথায় দিয়ে পুলিশ চেকপোস্ট পার হতে চায়। পুলিশ আটকে দিলে বলে, “নামাজ পড়তে যাব।” পুলিশ ছেড়ে দেয়।
রিক্সালা বিষয়টি খেয়াল করে। সে দ্রুত গিয়ে মসজিদ মার্কেট থেকে বিশটা টুপি বিশ টাকা দরে কিনে এনে পুলিশ চেকপোস্ট থেকে একটু দূরে রিক্সার উপর গামছা বিছিয়ে বিক্রি করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে অনেকেই টুপি খুঁজছিল। মুহূর্তে বিশটা টুপি একশো টাকা দরে বিক্রি হয়ে যায়। এবার রিক্সালা একশোটি টুপি নিয়ে আসে। বলতে গেলে দশ মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। এখন আর কেউ পুলিশকে কৈফিয়ত দিচ্ছে না। পুলিশও টুপি পরা লোকের চাপে সরে গিয়েছে। চেকপোস্ট ঠেলে সরিয়ে দিয়ে টুপি পরে লোক ঢুকছে তো ঢুকছেই। নামাজ শেষ হলে পুলিশ আবার চেকপোস্টটা ঠিক করে নেয়। টুপির দোকানটাও উঠে যায়।