বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশেও প্রচুর মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকে। অনেকেরই জানা নাই— উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কী করণীয়, অনেকে যেহেতু নিয়মিত পরীক্ষা করান না, তাই নিজের অজান্তেই প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮’-এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। আর এই সমস্যায় সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ
হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে সণাক্ত করা হয়। দুটো তুলনামূলক মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ হিসেব করা হয়— যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটাকে বলা হয় ডায়াস্টলিক প্রেশার।
১. প্রেসার থাকতে হবে ৬০/৯০ থেকে ৮০/১২০ এর মধ্যে। তবে একটু বেশি হলেই ধরে নেওয়া যাবে না যে, আপনার হাই প্রেসার রয়েছে।
২. ডায়াস্টোলিক ৯০ বা ৯০ এর উপরে গেলে এবং সিস্টোলিক প্রেসার ১৩০ বা ১৩০ এর উপরে নিয়মিতভাবে গেলে ধরে নিতে হবে আপনার হাইপ্রেসারের সমস্যা রয়েছে।
৩. এটা স্টেজ-১। এই স্টেজে আপনি লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রেসার কন্ট্রোল করতে পারবেন।
৪. প্রেসার যদি ৯০+/১৪০ নিয়মিতভাবে বা বেশিরভাগ সময় দেখায়, তাহলে ডাক্তার আপনাকে প্রেসারের ওষুধ খেতে বলবে।
৫. প্রেসার যদি কখনও ১১০/১৭০ এ যায়, তাহলে দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে। অবশ্যই আপনার ডাক্তারকে বিষয়টা জানাতে হবে।
৬. প্রেসার যদি একবারের জন্যও ১২০/১৮০ হয় তাহলে আপনার রক্তনালীর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
৭. নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ শরীরের যেকোনো অঙ্গের (ইন্টানাল অথবা এক্সটারনাল) ক্ষতি করতে পারে, এবং এটা ঘটতে পারে আপনার অজান্তে।
৮. খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্লাড প্রেশার কমপক্ষে +- ১৫ এইস জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
৯. নেচারালি খাবারে সোডিয়াম ইনটেক কম। এজন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং লবণ খাওয়া কমাতে পারলে সোডিয়াম লেবেল কম থাকবে।
১০. মনে রাখতে হবে যে, মাত্র ১ চা চামচ লবণ যে পরিমাণ সোডিয়াম কনট্রিবিউট করা তা দৈনিক প্রযোজ্য সর্বোচ্চ মাত্রার (২৩০০ মি.গ্রা.) চেয়ে বেশি।
১১. কলা এবং ডাব পটাশিয়ামের সবচেয়ে ভালো সোর্স। দিনে দুইটা কলা খেতে পারেন।
১২. শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে দেওয়া যাবে না, তাই মাংস, বিশেষ করে লাল মাংস এড়িয়ে চলুন। দিনে একটা ডিম খেলে কোনো সমস্যা নেই। স্থুলতা না থাকলে দুইটাও খেতে পারেন।
১৩. সব ধরনের তেলই ক্ষতিকর, তাই তেল খাওয়া কমাতে হবে। সয়াবিন তেল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, তাই এটা বাদ দিন।
১৪. চিন্তামুক্ত থাকার জন্য দিনে অন্তত দুই ঘন্টা নিজেকে বিনোদনে ব্যস্ত রাখুন।
১৫. নিয়মিত হাঁটুন এবং হালকা ব্যয়াম করুন।
১৬. প্রেসারের সমস্যা না থাকলেও প্রতি মাসে একবার, সমস্যা থাকলে প্রতি সপ্তাহে একবার। ঝুঁকিতে থাকলে প্রতিদিন একবার মেপে একটা বিপি (ব্লাড প্রেশার) ইনডেক্স তৈরি করুন।
১৭. হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে শুয়ে শুয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিন, তাতে প্রেসার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
১৮. ধুমপান এবং তামাকজাত যেকোনো দ্রব্য এড়িয়ে চলুন।
১৯. স্বামী বা স্ত্রীর কথায় কান দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২০. অপছন্দের বিষয়গুলো এড়িয়ে যথাসাধ্য পছন্দের মধ্যে জীবনযাপন করুন।