রামপুরা এলাকার কয়েকটি পুরাতন স্থাপনা

মিনার মসজিদ
তিনশো বছরের পুরাতন মেরাদিয়া হাটের এরিয়াটি ছিল অনেক বড়। সম্প্রতি ‘বনশ্রী মসজিদ’ নামে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে হাটের জায়গায়। পাশের ইয়াগামাতা হাসপাতালটিও হাটের জায়গায়। হাটের দক্ষিণ পাশে রয়েছে রামপুরা থানা। হাটের অনেক জায়গা বেহাত হয়ে ইস্টার্ন হাউজিং-এর মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে।
মেরাদিয়া হাট
এলাকার বৃদ্ধদের কাছ থেকে শোনা তথ্য মতে মেরাদিয়া হাটের মধ্যে এবং হাটসংলগ্ন অনেক বড় বড় গাছ ছিল একসময়। গাছগুলো ইস্টার্ন হাউজিং কেটে ফেলেছে। এখন বনশ্রীতে কোনো বড় গাছ নেই। হাটের অদূরে রামপুরা থানার পাশে অবস্থিত এই রেইন ট্রিটির বয়স হয়ত ত্রিশ চল্লিশ বছর হতে পারে। কিন্তু এসব জায়গায় ছিল দুশো তিনশো বছর বয়সী বড় বড় গাছ।

 

নড়াই খাল
নড়াই খাল, যেটি এখন বনশ্রী খাল নামে পরিচিত পেয়েছে। বর্তমানে বনশ্রী এবং আফতাবনগর আবাসিক এলাকা দুটিকে পৃথক করেছে। খালটি বয়ে যেত বিশাল বিলঝিলের মধ্য দিয়ে। প্রাকৃতিকভাবে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে নেমে আসা এ খালটি দুইদিক দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে মিলেছিল বলে জানা যায়। একদিকে এটি ধোলাই খাল দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছিল, যে ধারাটি ‘৭১ সালের পরেও কয়েক বছর প্রবাহমান ছিল। আরেকটি ধারা বর্তমান হাতির ঝিল দিয়ে ধানমন্ডি লেক দিয়ে আরো দূরে বছিলা প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হয়। তবে শোষোক্ত ধারাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এখন খালটি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রামপুরে ব্রিজের কাছে এসে শেষ হয়েছে।

 

বনশ্রী-আফতাবনগর
বর্তমানে নড়াল খালের উপর এরকম দৃষ্টিনন্দন বাঁশের সাঁকো রয়েছে বনশ্রী এবং আফতাবনগর আবাসিক এলাকা দুটিকে সংযুক্ত রাখার জন্য। এলাকাবাসীর দাবী আবাসিক এলাকা দুটির মধ্যে আধুনিক ব্রিজ নির্মিত হলেও এ ধরনের কিছু বাঁশের সাঁকোও ঐতিহ্য হিসেবে রেখে দেওয়া উচিৎ।
হাতিরঝিল
হাতিরঝিলের রামপুরা প্রান্তে উলোনের এই মন্দিরটি এলাকার সবচেয়ে পুরাতন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাসাল হিসেবে ‘১৯৪৩’ লেখা থাকলেও এলাকার বৃদ্ধদের মতে কয়েকশো বছর ধরে এখানে একটি বটগাছকে ঘিরে পূজার্চণা চলত।
রামপুরা
উলোন দাসপাড়া এলাকাটিই এ এলকার সবচেয়ে পুরাতন বসতী হিসেবে জানা যায়। মতান্তর থাকলেও মন্দির প্রতিষ্ঠার সাথে সংলগ্ন বসতীর ইতিহাস বোঝার চেষ্টা করলে এটিকে সত্য ধরে নেওয়া যায়। যদিও বনশ্রী এফ ব্লকেও এরকম বিশাল একটি বটগাছকে ঘিরে পূজা হত, এবং সেটিই ছিল সবচেয়ে পুরাতন ধর্মীয় সমাবেশ বলে অনেকের মত।
ভূঞয়াপাড়া
মিনার মসজিদটিই মসজিদ হিসেবে সবচেয়ে পুরাতন। প্রতিষ্ঠা সাল লেখা না থাকলেও এলাকার বয়স্ক লোকেদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ’৪৭ সালের দাঙ্গার ‍কিছু আগে বা পরে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
মিনার মসজিদ
মসজিদে দু’জন মুসল্লী নামাজ আদায় করছে, যদিও তখন ওয়াক্ত নয়।
দক্ষিণ উলোন
দক্ষিণ উলোনের এই পাকা মসজিদটিও রয়েছে রামপুরা এলাকার পুরাতন স্থাপনার তালিকায়। মসজিদটির কোথাও প্রতিষ্ঠার তারিখ উল্লেখ না থাকলেও জানা যায় ‘৬৪, ‘৬৫ সালের দিকেই মসজিদটি নির্মিত হয়। তখন মিনার মসজিদের পরে এই এলাকার একমাত্র পাকা মসজিদ ছিল এটা। এজন্য এটির নামই হয়ে গিয়েছিল ‘পাকা মসজিদ’।
বনশ্রী
এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যমতে বনশ্রী প্রজেক্টের জি এবং এফ ব্লকের মাঝামাঝি এই জায়গাটিকে ছিল কয়েকশো বছরের সেই পুরাতন বটগাছ এবং বুড়াবুড়ি আশ্রম নামে একটি স্থাপনা। কয়েক একর জায়গা নিয়ে ধর্মীয় এই স্থাপনাটি ছিল. যেটি বনশ্রী প্রজেক্ট করার সময় নিশ্চিহ্ন করা হয়। সম্পত্তি হয়ে যায় কোম্পানির এরপর প্লট বিক্রির মাধ্যমে ব্যক্তিগত।
বুড়াবুড়ি আশ্রম
বুড়াবুড়ি আশ্রমের সেই জায়গার ছোট্ট একটু অংশে এখনও কোনো ভবন নির্মিত হয়ে পারেনি।
উলোন, রামপুরা
অত্র এলাকার পুরাত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় একরামুন্নেছা স্কুলের নামটাও আসবে। স্কুলটি ‘৭১-এর পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। তখন একটি টিনের ঘরে স্কুলটি পরিচালিত হত।

 

টেলিভিশন সেন্টার
১৯৭১ সালের পূর্বেই এখানে একটি একতলা ভবনে টেলিভিশন সেন্টারের নির্মাণ বা স্থাপনার কাজ কিছুটা শুরু হলেও প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালে বর্তমান ভবন থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে টেলিভিশন সেন্টারটি ছিল মতিঝিলের ডিআইটি ভবনে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ডিআইটি ভবন থেকেই ‘চণ্ডালিকা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। মূলত ২৬ ডিসেম্বর ১৯৬৪ সাল থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশন’ নামে মতিঝিলের ডিআইটি ভবন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বিটিভি স্থানান্তরিত হয় রামপুরার নিজস্ব টিভি ভবনে। ৬ মার্চ ১৯৭৫ সাল হতে রামপুরা টিভি ভবনে নতুন আঙ্গিকে শুরু হয় বিটিভির সম্প্রচার কার্যক্রম।