শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে সূচিত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের আন্দোলনের বয়স এখন তিরিশ বছর। মহাকালের ইতিহাসে তিরিশ বছর মহাসমুদ্রে একটি বুদবুদের মতো মনে হলেও সমকালের ইতিহাসে একটি চলমান নাগরিক আন্দোলনের জন্য এই সময় কম নয়। ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি দেশের এক শ’ একজন বরেণ্য নাগরিক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক ঘোষণার মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।’ উদ্দেশ্য ছিল একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির ও পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে জনমত সংগঠিত করা। এর আগে ’৯১-এর ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানী নাগরিক ও বহুল আলোচিত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে তাদের আমির ঘোষণা করেছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন এর প্রতিবাদ করেছে। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরাও এ বিষয়ে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিলেন। দেশের সচেতন নাগরিকদের ক্ষোভের যৌক্তিক পরিণতি ঘটেছিল ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে। নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতারা ১৯ জানুয়ারি তাদের প্রথম ঘোষণায় বলেছিলেন-
‘আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীবৃন্দ এই মর্মে ঘোষণা করছি, বেআইনীভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমকে যদি অবিলম্বে দেশ থেকে বহিষ্কার করা না হয় তাহলে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ২১তম বার্ষিকীর দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশিষ্ট নাগরিক ও আইনজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্রকাশ্য গণ-আদালতে গোলাম আযমের বিচার হবে। যেহেতু গোলাম আযম অপরাধ করেছে এদেশের সমগ্র জনগণের কাছে সেহেতু গণআদালতই হবে এই ঘৃণিত ব্যক্তির বিচারের উপযুক্ত স্থান। এই গণ-আদালতেই পর্যায়ক্রমে বিচার করা হবে ’৭১-এর সকল ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধীদের। একই সঙ্গে আমরা দাবি জানাচ্ছি একাত্তরের ঘাতকদের দল যারা এখনও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে সেই জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্ম ব্যবসায়ীদের সকল রাজনৈতিক দল অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।…’
গোলাম আযমের বিচারের দাবি আরও স্পষ্ট করে ১০ ফেব্রুয়ারি ’৯২ তারিখে প্রকাশিত নির্মূল কমিটির ইশতেহারে বলা হয়-
‘গোলাম আযমের বিচার হওয়া দরকার (১) একাত্তরের নৃশংস গণহত্যাযজ্ঞের প্ররোচনা দানের জন্য (২) ঘাতক বাহিনীসমূহকে হত্যা, নারী নির্যাতন ও লুণ্ঠনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য (৩) স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে দেশের যে শ্রেষ্ঠ সন্তানরা যুদ্ধ করছিল তাদের ‘জারজ সন্তান’ ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের প্রচেষ্টার জন্য (৪) বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্য (৫) বাংলাদেশে বসে স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য (৬) গত দশ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে ছাত্র, যুব, মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করছিল তাদের অনেককে হত্যা করার জন্য (৭) বিদেশী নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে বেআইনীভাবে বসবাস করে এদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য (৮) সম্প্রতি বর্মী সামরিক জান্তার নির্যাতনের সুযোগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে এক আন্তর্জাতিক চক্রান্তে লিপ্ত হওয়ার জন্য (৯) ফ্যাসিবাদ ও নাৎসীবাদে বিশ্বাসী মওদুদীর মতবাদকে ইসলামী মতবাদ হিসেবে প্রচারের জন্য এবং (১০) পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে মসজিদগুলোকে দলীয় রাজনীতি প্রচারের কেন্দ্র বানিয়ে ধর্মপ্রাণ জনসাধারণকে প্রতারিত করার জন্য।
‘জনতার রুদ্ররোষ থেকে আত্মরক্ষার জন্য গোলাম আযম জামাতে ইসলামীর আমির হয়েই ঘোষণা দিয়ে একাত্তরের ঘাতক বাহিনী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের পুনর্গঠিত করছে, জামায়াত শিবির কর্মীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে দেশে একটি গৃহযুদ্ধ বাঁধানো যায়। অতীতে বহুবার এই ঘাতকের বিচার ও বহিষ্কারের দাবি করা হলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। একজন বিদেশী নাগরিক ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশে কিভাবে অবস্থান করতে পারে এবং কিভাবে স্বাধীনতাবিরোধী এক ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিচালনা করতে পারে এটা দেশবাসীর কাছে বোধগম্য নয়। সরকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই গণআদালতে গোলাম আজমের বিচারের ঘোষণা দিয়েছেন দেশের সহস্রাধিক বিশিষ্ট নাগরিক এবং প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, যুব, নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আলেমদের সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ আমাদের এই সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করছেন।
‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ঘোষণা করেছে আগামী ২৬ মার্চ ’৯২ প্রকাশ্য গণআদালতে গোলাম আযমের বিচার হবে। এই গণআদালত দেশের প্রচলিত আদালতের প্রতি কোন চ্যালেঞ্জ নয়, স্বাধীনতার শত্রু এই ঘাতকের বিরুদ্ধে জনগণের রায় ঘোষণার জন্যই এই আদালত গঠন করা হচ্ছে। এই ধরনের গণআদালত পৃথিবীর বহু সভ্য দেশেই বিভিন্ন সময়ে গঠন করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য এবং তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর ধিক্কার প্রকাশের জন্য।…’
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনের সংবাদ তখন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন জেলায় এমনকি থানা পর্যায়েও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্মূল কমিটির শাখা গঠিত হয়েছে। শাখা গঠিত হয়েছে, জার্মানি, ইংল্যান্ড, আমেরিকা প্রভৃতি দেশ। ২৬ মার্চ গণআদালত গঠন করে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের কর্মসূচী অভিনবত্বের কারণে রাজনৈতিক দলের যাবতীয় গতানুগতিক কর্মসূচী ম্লান করে দিয়েছিল।
গণআদালতে গোলাম আযমের বিচারের ঘোষণা ব্যাপক জনসমর্থন পেলেও এই কর্মসূচী সফল করার জন্য নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কারণ রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া গণআদালতে জনগণের বিশাল অংশগ্রহণ সম্ভব ছিল না। আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদ, ন্যাপ ও গণতন্ত্রী পার্টিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ১৩টি রাজনৈতিক দল গণআদালতে গোলাম আযমের বিচারের কর্মসূচী সমর্থন করেছিল। সমর্থক রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহকে এক মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ’৯২-এর ১১ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি।’ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম জাতীয় সমন্বয় কমিটিরও আহ্বায়ক ছিলেন। আন্দোলন পরিচালনার জন্য সমন্বয়ের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার সদস্য ছিলেন জাহানারা ইমাম, আওয়ামী লীগের আবদুর রাজ্জাক, জাসদের কাজী আরেফ আহমেদ, সিপিবির নূরুল ইসলাম নাহিদ, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্র প্রতিরোধ মঞ্চে’র অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী ও অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী এবং নির্মূল কমিটির সৈয়দ হাসান ইমাম ও শাহরিয়ার কবির। অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী ছিলেন সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব।
খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার প্রথম থেকেই এই আন্দোলনের প্রতি বিরূপ ছিল। সরকারের শীর্ষ নেতারা এবং তাদের সহযোগী মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এই আন্দোলনের ভেতর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর হাত আবিষ্কার করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, বিএনপি সরকারকে বিব্রত এবং দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ ও ভারত এসব করছে। জামায়াতবিরোধী এই আন্দোলন সম্পর্কে সরকারের কুপিত হওয়ার কারণ ছিল জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গোপন আঁতাত। ’৯১-এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হলেও সরকার গঠনের জন্য বিএনপির প্রয়োজন ছিল জামায়াতের সমর্থন। জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের শর্তে।
২৬ মার্চ গণআদালতে গোলাম আযমের বিচারের কর্মসূচী প্রতিহত করার জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিল। বাইরে থেকে লোকজন যাতে রাজধানীতে আসতে না পারে সে জন্য ২৬ তারিখ দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। দুদিন আগে ১৪৪ ধারা জারি করে রেডিও-টেলিভিশনে বার বার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে কেউ সমাবেশ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ২৬ মার্চ ভোরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখী প্রধান সড়কগুলো কাঁটাতারের বেরিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আগের দিন সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যারা মাইক লাগাতে গিয়েছিলেন তাদের সাড়ে তিন শ’ মাইক পুলিশ কেড়ে নিয়ে যায়। তবে জনতার জঙ্গী মিছিলের উত্তাল তরঙ্গে সরকারের সকল অবরোধ ও চক্রান্ত খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল। ’৯২-এর ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণআদালতে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারের কর্মসূচী প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রায় পাঁচ লাখ লোকের সমাগম ঘটেছিল। ১৯৯২-এর ২৬ মার্চ এই অভূতপূর্ব গণআদালতে সংগঠনের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছিলেন।
গণআদালত বানচাল করতে ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার গণআদালতের উদ্যোক্তা ২৪ জন বরেণ্য নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে। এতে আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। ২৬ এপ্রিল বায়তুল মোকররমের দক্ষিণ গেট-এ লক্ষাধিক মানুষের বিশাল জনসভায় জাহানারা ইমাম আন্দোলনের চার দফা দাবি ঘোষণা করেন। এই দাবিগুলো ছিলÑ ১) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার করা, ২) জামায়াত-শিবির চক্রের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ৩) গণআদালতের উদ্যোক্তা ২৪ জন বরেণ্য নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ৪) দেশব্যাপী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা বাতিল ও পুলিশী নির্যাতন বন্ধ করা।
যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবি তখন এতই জোরালো হয়ে উঠেছিল যে, জাতীয় সংসদে পর্যন্ত বিরোধী দল এ নিয়ে অনড় অবস্থান গ্রহণ করে। একই সঙ্গে গণআদালতের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে খালেদা জিয়ার সরকার সংসদের ভেতরে ও বাইরে প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা ১৬ এপ্রিল (১৯৯২) গোলাম আযমের বিচারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এবং ২৪ জন বরেণ্য নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে জাতীয় সংসদে এক অসাধারণ ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ভাষণে তিনি বলেছিলেন-
‘…. এই গণআদালত যে রায় দিয়েছে তাতে তারা কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেয়নি, মাননীয় স্পীকার। যেহেতু তারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়নি সেহেতু নিশ্চয়ই তাদেরকে বেআইনী বলার কোন অধিকার নেই, কোন অবকাশ নেই। তারা কি বলেছেন? বলেছেন যে, গোলাম আযম একজন যুদ্ধাপরাধী। এই যুদ্ধাপরাধীর অপরাধগুলো এখানে (গণআদালতের রায়ের কাগজ দেখিয়ে) লিপিবদ্ধ আছে এবং এই সকল অপরাধে যিনি অপরাধী তার শাস্তি মৃত্যুদ-তুল্য। আমরা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, জনগণের মা-েটের মধ্য দিয়ে এই সংসদে এসেছি। আমি মনে করি, গণআদালতের যে রায়, সেই রায়ে তারা বলেছেন যে, এই অপরাধ মৃত্যুদ-যোগ্য। আজকে এই সংসদে যারা আছেন, যারা আমার সামনে বসে আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বিগত মুক্তিযুদ্ধে স্বামী হারিয়েছেন, ভাই হারিয়েছেন, মা-বোনেরা লাঞ্ছিত হয়েছেন।… তাই আমার আবেদন মাননীয় স্পীকার, এখনও সময় আছে দলমত নির্বিশেষে সব কিছুর উর্ধে উঠে আসুন, যেভাবে একমত হয়ে আমরা একাদশ সংশোধনী, দ্বাদশ সংশোধনী পাশ করেছি, আসুন সেভাবে কাজ করি। যারা স্বজন হারিয়েছেন, স্বজন হারানোর বেদনায় যাদের হৃদয় এখনো ব্যথিত, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিই। এই রায়কে বাস্তবায়ন করার জন্য মাননীয় স্পীকার, আমরা মনে করি যে প্রচলিত আইনই (আন্তর্জাতিক ক্রাইম এ্যাক্ট, ’৭৩) যথেষ্ট। তবু যদি আপনি মনে করেন যে, আইনের কোন ঘাটতি আছে, সেই ঘাটতিটুকু এই মহান সংসদ অবশ্যই পূরণ করতে পারে।…’
তখন সংসদের ভেতরে বিরোধী দলের চাপে এবং সংসদের বাইরে জাহানারা ইমামের তুঙ্গস্পর্শী আন্দোলনের কারণে সরকার ২৯ জুন ’৯২ তারিখে বিরোধী দলের সঙ্গে চার দফা চুক্তি করতে বাধ্য হয়। যে চুক্তির প্রথম দুই দফা ছিল- সরকার যুদ্ধপরাধী গোলাম আযমের বিচার করবে এবং গণআদালতের উদ্যোক্তা ২৪ জন বরেণ্য নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে। বিরোধী দলকে সংসদে আনার জন্য খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার এ ধরনের চুক্তি করলেও তারা যে জাতীয় সংসদকে তোয়াক্কা করে না, তা আবারও প্রমাণ করেছে চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে। গোলাম আযমের বিচার করার বদলে খালেদা জিয়া তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার বিশাল বোঝা আমার ওপর দ্বিগুণ হয়েছে- প্রথমে সরকারী মালিকানাধীন ট্রাস্টের পত্রিকা সাপ্তাহিক বিচিত্রার নির্বাহী সম্পাদকের পদ থেকে আমাকে বিনা নোটিস অপসারণ এবং পরে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দুবার গ্রেফতার ও কারা নির্যাতনের মাধ্যমে।
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে কেন্দ্র থেকে জেলা ও থানা পর্যায়ে আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা নির্মূল কমিটি ও সমন্বয় কমিটির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। থানা এসব মিথ্যা মামলা গ্রহণ করে কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য হুলিয়া জারি করেছে। অথচ আমাদের কেউ অভিযোগ জানাতে গেলে থানা সেসব গ্রহণ করেনি। শত নির্যাতন ও হয়রানি সত্ত্বেও ’৯২-এর ডিসেম্বরের ভেতর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে নির্মূল কমিটি দশ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিল।
গণআদালতের সাফল্যের পর জাহানারা ইমামের আন্দোলনের বড় সাফল্য ছিল গোলাম আযম ছাড়াও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য গণতদন্ত কমিশন গঠন করা। বেগম সুফিয়া কামালকে চেয়ারপার্সন করে ’৯৩-এর ২৬ মার্চ ১১ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন প্রথম পর্যায়ে আটজন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে সাতজন যুদ্ধাপরাধীর দুষ্কর্ম সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দুটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। ২০১০ সালে ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের জন্য ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত’ গঠিত হলে আমাদের এই কমিশনের রিপোর্ট ছিল তদন্তের প্রাথমিক ভিত্তি।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রথম পর্যায়ে আমাদের আন্দোলনকে গোলাম আযমের বিচারের ভেতর সীমিত রাখতে চেয়েছিল। জাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠন করে আরও যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান ব্যাপ্তি রাজনৈতিক নেতারা তখন পছন্দ করেননি। এর মূল কারণ হচ্ছে ক্ষমতা। রাজনৈতিক দল যে কোন আন্দোলনের সূচনা করে কিংবা দল বহির্ভূত মঞ্চ থেকে সূচিত আন্দোলনে যোগ দেয় ক্ষমতার সমীকরণ বিবেচনায় রেখে। পক্ষান্তরে যে ১০১ জন নাগরিক একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করে নির্মূল কমিটি গঠন করেছিলেন, তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। পরে অবশ্য নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতাদের ভেতর কয়েকজন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন কিংবা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, কিন্তু এই আন্দোলন তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। রাজনৈতিক দলগুলো ’৯২ সালে এই আন্দোলনের সঙ্গে মূলত যুক্ত হয়েছিল দাবির যৌক্তিকতা ও জনপ্রিয়তার কারণে। যখনই দলগুলো দেখেছে জাহানারা ইমামের আন্দোলনের ব্যাপ্তি তাদের অনেকের ক্ষমতাকে অতিক্রম করে গেছে, তখনই তারা এই আন্দোলনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে।
জাহানারা ইমামের জীবদ্দশায় এই আন্দোলনের চালিকাশক্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ৭২টি রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মুক্তিযোদ্ধা-ছাত্র-নারী যুব-পেশাজীবী সংগঠনের মোর্চা ‘…জাতীয় সমন্বয় কমিটি।’ বড়-ছোট ১৩টি রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে জাহানারা ইমামের কোন কোন জনসভায় উপস্থিতি লাখের কোঠাও অতিক্রম করেছে। ’৯৪-এর ২৬ জুন জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলন সম্পর্কে আগ্রহ প্রায় হারিয়ে ফেলে। সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলনে জামায়াতও শরিক হয়। ফলে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিও ধামাচাপা পড়ে। ’৯৫ ও ’৯৬ সালে ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র এমন অনেক সভা হয়েছে, যেখানে একশ’ জনেরও সমাগম হয়নি।
‘জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল সমন্বয়ের শরিক রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের ওপর। রাজনৈতিক দলের অসহযোগিতার কারণে সমন্বয় কমিটির কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়লে আমরা নতুনভাবে দলনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ পুনর্গঠিত করে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলন অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করি।
পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন। কারণ, ক্ষমতাসীন সরকার শুধু বাইরে থেকে নয়, নির্মূল কমিটির ভেতরেও তাদের অনুচরদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল। যাদের লক্ষ্য ছিল আন্দোলনের স্বাভাবিক মৃত্যু। বাংলাদেশে এর আগে সিভিল সমাজের বহু উদ্যোগ কিছুদিন পর কিভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে সে অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল। যে কারণে নির্মূল কমিটি পুনর্গঠনের সময় আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি নতুন প্রজন্মকে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে এবং দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে। বিগত বছরগুলোতে আমাদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করলে বোঝা যাবে এ কাজে আমরা কতটা সফল হয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের পাঠাগার প্রতিষ্ঠা আরম্ভ করেছিলাম। ২০০১ সাল পর্যন্ত সারাদেশে আমরা ৮০টি পাঠাগার স্থাপন করেছিলাম। যে সব পাঠাগারকে কেন্দ্র করে প্রত্যন্ত সেই সব অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সামাজিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এই কাজে যে পরিমাণ শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে গণআদালতের কর্মসূচী সফল করার জন্য, তার এক দশমাংশও প্রয়োজন হয়নি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ২০০১ সালে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের পাঠাগারগুলো ধ্বংস করে দেয়। যা আজও পুনরুজ্জীবিত করতে পারিনি।
১৯৯৫ সালে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার সময় আমাদের বিবেচনায় রাখতে হয়েছে ঢাকা শহরে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে মৌলবাদের মু-ুপাত করে যত জ্বালাময়ী ভাষণই আমরা দিই না কেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মৌলবাদের ঘাঁটিতে যদি না আঘাত করা যায় তাহলে এই অপশক্তিকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে যে সুবিধা পেয়েছি, সেটা হচ্ছে আমাদের প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীদের পুলিশি নির্যাতন ও হয়রানির কারণে ঘরছাড়া হতে হয় না। আমরা নির্বিঘেœ দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরতে পেরেছি এবং এখনও পারছি।
শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম আমলে আমাদের একটি বড় সাফল্য ছিল ২০০১ সালের ১-২ জুনে ঢাকায় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে পাঁচ দেশীয় দক্ষিণ এশীয় সম্মেলনের আয়োজন। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের শতাধিক শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খানের নেতৃত্বে আগত পাকিস্তানের বরেণ্য সাংবাদিক, অধ্যাপক, কবি, পেশাজীবী ও মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন এবং পাকিস্তানে এই দাবির সমর্থনে জনমত সংগঠনের কথা বলেছেন। সম্মেলনের শেষে গৃহীত ঢাকা ঘোষণায়ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলা হয়েছে। এই সম্মেলনে গঠিত হয়েছে ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন, যা নির্মূল কমিটির উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করেছে, এটিকে আমাদের আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে মনে করি। ২০১০ সালে এবং ২০১৭ সালে আমরা ২০০১-এর চেয়ে অনেক বড় পরিসরে ঢাকায় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি। এর ধারাবাহিকতায় আমরা ইউরোপ ও আমেরিকায় অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছি ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের এই আন্দোলন আমাদের বহু দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার স্বপ্ন। আন্দোলনের তিন দশক উদযাপনের সময় আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও কবি সুফিয়া কামালসহ আমাদের সহযোদ্ধাদের- এই সময়ে যাঁদের হারিয়েছি। আহ্বান জানাই তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনের দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য।
এই আন্দোলনের সামাজিক মাত্রা রয়েছে। সাংস্কৃতিক মাত্রাও রয়েছে। কিন্তু জাহানারা ইমামের আন্দোলনের চরিত্র মূলত রাজনৈতিক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে ’৭১ আর ’৯২-এর মতো একজোট হয়ে এক মঞ্চে না দাঁড়ালে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা যাবে না।
লেখক: লেখক সাংবাদিক চলচ্চিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবির
সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।