দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার একটি বেদনার ইতিহাস

আপার যশোর রোড

১৯৯১ সালে পাওয়ার হাউস মোড়ে সিটি পেট্রোল পাম্প (বর্তমান নাম) সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে আমি গাড়ীর যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু করি। ২০০৩ সাল পর্যন্ত আমি নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি। ৩০/০১/২০০৩ তারিখে সিটি কর্পোরেশন থেকে আমি নিম্নোক্ত বক্তব্য সম্বলিত একটি নোটিশ পাই—

... উপরিউক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাইতেছে যে, আপনার বরাদ্দকৃত আপার যশোর রোড, ক্লে ট্যাংক সংলগ্ন ৩৪৫ বর্গফুট পরিসরের জায়গা বরাদ্দ বিভিন্ন শর্ত ভঙ্গের কারণে বাতিল করা হইয়াছে।

এই নোটিশ মূলত আমি যার কাছ থেকে দোকানটি ভাড়া নিয়েছিলাম তার বরাবর এসেছিল। এরপর ২০/০১/০৪ তারিখে সিটি কর্পোরেশন দোকানটি ভেঙ্গে দিলে আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। আমি পরিবার পরিজন নিয়ে বিপদে পড়ি। দোকানটি ভাঙ্গার আগে খুলনা সিটি কর্পোরেশ থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরে আমাকে একটি নোটিশ প্রধান করা হয়েছিলো। নোটিশে অন্যান্য বক্তব্যের সাথে উল্লেখ ছিলো—

মার্কেট নির্মাণের পর সেলামীর টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে আপনাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হইবে।

কিন্তু নির্ধারিত দোকানে আমাকে আর পুনর্বাসন না করে ১২/০৩/০৫ তারিখে খুলনা সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাকে আরেকটি নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে  ‍পূর্বোল্লিখিত দোকানটি আমি সমীর হালদার এবং সালাউদ্দীন নামে দু’জনের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে আমি তৎকালীন মেয়র তৈয়েবুর রহমানের সাথে দেখা করি। এবং জনাবের কাছে একটি আবেদন পেশ করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে কোনো সাড়া না পেয়ে আমি আবার মেয়র সাহেবের সাথে আবার দেখা করি। উনি আমাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবার দেখা করলে উনি আমাকে এস্টেট অফিসারের সাথে দেখা করতে বলেন। এস্টেট অফিসারের সাথে দেখা করতে না পেরে এরপর আবার আমি মেয়র সাহেবের সাথে দেখা করি। মেয়র সাহেব এবার আমাকে বললেন, অফিসারেরা আমার কথা শোনে না।

মার্কেট ভাঙ্গার সময় আমরা মোট চার জন টারটি দোকান থেকে উচ্ছেদ হয়েছিলাম। এর মধ্যে আমাদের দুইজনের নামে যৌথভাবে একটি দোকান বরাদ্দ হয়েছিলো। বিষয়টি মেনে না নিয়ে আমরা হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরমধ্যে একজন অসদুপায় অবলম্বন করে তার নামে আলোচিত দোকানটি বরাদ্দ করিয়ে নেয়। আমরা দু’জন বঞ্চিত হই। এরপর দীর্ঘ আট বছর আমি বেকার জীবনযাপন করি এবং পরিবার নিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করতে বাধ্য হই।

তবে আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পরে— ২৪/০৩/০৯ তারিখে বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ২৯/০৩/০৯ তারিখে আমি সকল সাক্ষ্য প্রমাণ তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থাপন করি। কিন্তু এ তদন্তের কোনো ফলাফল কখনই আর প্রকাশিত হয়নি।

উল্লেখ্য, মার্কেটের ১২টি দোকানের জন্য রাজস্ব বাবদ সরকারি বরাদ্দ ছিল ১,৭৯,৯৪৩.৯০ টাকা (এক লক্ষ ঊনাশি হাজার নয়শো তিতাল্লিশ টাকা নব্বই পয়শা)। কিন্তু অবৈধভাবে এই ১২টি দোকান বিশ থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মধ্যে মাত্র ১,৭৯,৯৪৩.৯০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

অনেকদিন পরে বেদনার এ ইতিহাসটুকু বলতে পেরে কিছুটা হালকা লাগছে। অনেক কথা আছে যেগুলো বলা যায় না, কারণ, নতুন করে আমি আর কোনো শত্রুতার খেলা চাই না। শুধু এটুকুই বলব যে, আমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গিয়েছে এক সময়। আমি মানসিক, শারীরিক এবং আর্থিকাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি, তবে এখন আর কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না।


সমীর হালদার, গাড়ীর খুচরো যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী এবং একজন সমাজকর্মী।