আমরা মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অবিভক্ত পাকিস্থানের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালের কথা মনে রেখেছি। কিন্তু স্বাধীন ভারতের ১৯৬১ সালের ১৯ মে-এর কথা মনে রাখিনি। ওই সময় অসমের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী বিমল প্রসাদ চালিহা ঘোষণা করেন, অসমিয়া ভাষাই হবে অসমের সরকারি ভাষা। তখন কিন্তু অসম থেকে মেঘালয় বিচ্ছিন্ন হয়নি। অসমের বরাক উপত্যকার শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি বা উজনি অসমের জোরহাট, লামডিং কিংবা মেঘালয়ের শিলং, অসমের নওগাঁ, কামরূপে বাঙালির বাস স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই। বরাকের এই অংশটি অবিভক্ত বাংলারই অংশ ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা সরকারি কাজেও ব্যবহার করা হত। গোটা অসম, বিশেষ করে বরাকের মানুষ চালিহার এই ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। কারণ, সেখানে বাঙালির বাস ছিলো ৯৫ শতাংশ। শিলচর শহরে এমনই এক প্রতিবাদ মিছিলে অসম রাইফেলের পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। তারমধ্যে এক মহিলা— কমলা ভট্টাচার্য আছেন। প্রধানমন্ত্রী তখন পণ্ডিত নেহরু। তিনি চলিহাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। অসম সরকার ঘোষণা করতে বাধ্য হয়— রাজ্যে অসমিয়ার পাশাপাশি বাংলা ভাষা পড়ানো হবে, এবং সরকারি কাজে বাংলা স্বীকৃতি পাবে, বিশেষ করে বরাক উপত্যকায়। সেই অবস্থা এখনো চলছে। অসমে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের বাস। তারমধ্যে বাংলায় কথা বলেন প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষের বেশি মানুষ। তাদের মাতৃভাষা বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের পরে এত বাঙালি দেশের কোনো রাজ্যে নেই। ত্রিপুরাতেও নয়। খুবই পরিতাপের বিষয়— পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির শতকরা ৯৯ শতাংশ এই দিনটির কথা মনে রাখে না। কিন্তু বরাক উপত্যকায় নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে হিন্দু এবং মুসলিমরা একই সঙ্গে এই দিনটি পালন করে থাকে।
লেখকঃ উন্নয়নকর্মী