বিস্ময়কর গ্রাম অরোভিলঃ মানবিকতা এবং সাম্যবাদের চর্চায় পৃথিবীতে যে গ্রামটি হয়ে উঠেছে একটি মডেল গ্রাম

Aurovil

অরোভিল বিশেষ কারো নয়, অরোভিল সমগ্র মানবজাতির। এখানে কোনো ধর্ম, বর্ণ বা গোত্র নেই। এখানে সবাইকে সমভাবে দেখা হয়। এখানে সবার বেতন একইরকম, উৎকৃষ্ঠ বা নিকৃষ্ঠ বলে কিছু নেই, কেউ উচু নয় বা কেউ নিচু নয়। অরোভিলে কোনো অপরাধ নেই, কেউ কোনো অপরাধ করে না। একজন ফরাসি নারী অরোভিল নামক আশ্চর্য এই ছোট্ট শহরটির প্রতিষ্ঠাতা। এটি মূলত একটি এক্সপেরিমেন্টাল শহর— বিশ্বমানবতাবাদের চর্চা মানুষকে কোন পথে নেয়, সেটিই মূলত এ চর্চা বা পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য।

এক নজরে অরোভিল সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ

প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৬৮ সালে

অংশগ্রহণকারী দেশঃ ১২৪টি

এ পর্যন্ত বাসিন্দা হয়েছে ৫০০০ জন

শহরের আয়তনঃ ৫ বর্গকিলোমিটার

বর্তমান জনসংখ্যাঃ ৩৩০০

অনুমোদিত জনসংখ্যাঃ ৫০০০০ জন।

ধর্মঃ অরোভিলে কোনো ধর্ম চর্চার সুযোগ নেই।

Aurovil

অরোভিল হলো ভিলুপ্পুরম জেলার একটি পরীক্ষামূলক জনপদ, যার বেশিরভাগই ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে অবস্থিত এবং ভারতের পন্ডিচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। এটি ১৯৬৮ সালে মিরা আলফাসা (যিনি ‘মা’ নামে পরিচিত) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এবং স্থপতি রজার অ্যাঙ্গার দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিলো।

মানবতাবাদের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত একটি ছোট্ট শহর অরোভিল— আসলে এটি একটি বিস্তীর্ণ বিষয়, কিন্তু এর সহজতম অর্থ হচ্ছে মানব ঐক্য— বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং বৈচিত্রের প্রতি পারস্পারিক শ্রদ্ধা এবং শান্তিতে বসবাস করার অভিপ্রায়। শেষ পর্যন্ত ‘ঐক্যই’ হলো এ সমাজের অভিজ্ঞতা এবং অভ্যন্তরীণ উপলব্ধি। এটি যখন সামষ্টিকভাবে ঘটবে, তখন মানব সম্প্রদায়কে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি বৃহত্তর ঐক্যের দিকে নিয়ে যাবে।

অরোভিলিয়ানরা ‘আধ্যাত্মিক’ জীবনযাপন করলেও অরোভিলে কোনো ধর্ম নেই। কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের চর্চা করে এমন কেউ অরোভিলে স্থান পাবে না। তবে অরোভিলের মানুষ কোনো ধর্মের বিরোধিতা করে না। ধর্ম মানুষ বিভক্ত করে, আর অরোভিল শুধুমাত্র ঐক্যে আগ্রহী। তবে অরোভিলিয়ানরা ‘মাতৃমন্দিরে’ একত্রিত হয় এবং নীরবে আধ্যাত্মিক সময় কাটায়, কেউ চাইলে ধ্যানস্থ হতে পারে। অরোভিলে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা আনুষ্ঠানিক বা সংগঠিত আধ্যাত্মিক জীবন নেই। আধ্যাত্মিকভাবে জীবনধারা অনুসরণ করা প্রতিটি ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে, যদিও এর অর্থ এই নয় যে, অরোভিলের সমস্ত বাসিন্দাই তা করেন। মূলত, অরোভিলে যোগদানকারীদের কাছে যা জিজ্ঞাসা করা হয় তা হল— মানব ঐক্যের একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সদিচ্ছা এবং পরীক্ষার অন্তর্নিহিত দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা লাভ করা। সাধারণভাবে লোকেরা অরোভিলের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার বা দীর্ঘমেয়াদে শহরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার সম্ভাবনা কম, যদি না তাদের জীবনের কোনো ধরনের মানব এবং প্রকৃতির কল্যাণের স্পৃহা না থাকে।

অরোভিল হলো একটি সার্বজনীন জনপদ, যা সারা বিশ্বের ৫0,000 জন লোকের জন্য তৈরি করা হয়েছে। অরোভিলের ধারণা— একটি আদর্শ জনপদ, যা মানব ঐক্যের একটি বিশেষ পরীক্ষায় নিবেদিত। ১৯৩০-এর দশকের প্রথম দিকে মিরা আলফাসা ধারণাটি প্রথম সামনে এনেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ধারণাটি পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করা হয়েছিলো এবং সরকারের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিলো। ভারত সরকার এটিকে সমর্থন দেয় এবং ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদে নিয়ে যায়। ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো মানব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসাবে ধারণাটির প্রশংসা করে একটি সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব পাস করে। এবং উদ্যোক্তাদের পূর্ণ উৎসাহ দেওয়া হয়।

অরোভিল, বিশ্বের ৬০ টিরও বেশি দেশের বাসিন্দাদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক জনপদ— দক্ষিণ ভারতের নৈসর্গিক কোরোমন্ডেল উপকূল বরাবর একটি মালভূমিতে অবস্থিত। এটি চেন্নাই থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভিলুপুরম জেলায় এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী পন্ডিচেরি শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ঋষি অরবিন্দের আধ্যাত্মিক সহকারী মিরা আলফাসার হচ্ছেন এ প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা।