খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্ধশত বাড়ি ও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। জোর পূর্বক বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে জমি দখলের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে এক ভুক্তভোগী সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী মো. রেজাউল করিম রাজা জানান, তার বাড়ি খালিশপুরের আবাসিক এলাকার ৩৯ নম্বর বাড়ি। পারিবারিকভাবে গত ২০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন তারা।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে ভূমিদস্যু তকদীর বাবু ও আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ ও তার সহযোগীরা হাউজিং অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় জালিয়াতি করে কাগজপত্র তৈরি করে আমাকে এবং আমার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের মারধর করে বের করে দিয়ে বসতবাড়ি দখল করে নেন। যেখানে বর্তমানে আশরাফের মেঝ বোন বসবাস করছেন।
‘আমি বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়েও এই ভূমিদস্যু আশরাফ, তকদীর বাবুদের ক্ষমতার দাপটে দিশেহারা হয়ে যাই। বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। শুধু আমার বাড়ি দখল-ই নয়, খালিশপুর হাউজিং এস্টেটের প্রায় পঞ্চাশটি বাড়ি ভূমিদস্যু আশরাফ তকদীর বাবুরা দখল করে নিয়েছে। ’
ভুক্তভোগী রাজা বলেন, খুলনায় যেসব অপকর্ম আশরাফসহ অভিযুক্তরা করছেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত করলেই এর সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের নেতা আশরাফের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার এফডিআর এবং নগদ অর্থ আছে।
‘খুলনায় আশরাফ সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, আশরাফের মতো এত নগদ অর্থ স্থানীয় কারো কাছে নেই। তবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসতে পারে। সরকার শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু নিরীহ মানুষকে বের করে দিয়ে তাদের বাড়ি দখল করে নিলেও আশরাফ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ’
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। সরকারপ্রধান সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দলের নাম ব্যবহার করে খুলনায় এই চক্রটি নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খুলনার খালিশপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ।
‘এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন আমার মতো ভুক্তভোগীর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। কারণ আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি,’ বলেন ভুক্তভোগী রেজাউল করিম রাজা।
সংবাদ সম্মেলনে ঠিকাসহ বেশ প্রত্যেকটি বাড়ির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তা অস্বীকার করেছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি যদি বাড়ি দখল করি থাকি দেশে আইন আছে পুলিশ আছে। যে জায়গায় বড় বড় ক্যাসিনো ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেখানে আমি কে? এমপিদের পদ নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাকে রাখবে? আর খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র খালেক তালুকদার তার কমিটিতে আমাকে রাখবেন- জমি দখল করলে?
উল্টো প্রশ্ন করে আশরাফ বলেন, ‘আমি যে তাদের জমি দখল করেছি, এ বিষয়ে থানায় কোনো কমপ্লেন আছে কি না খোঁজ নেন! আওয়ামী লীগের সম্মেলন সামনে রেখে প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করছে। আমি ছাত্র রাজনীতি করতে করতে এ পর্যন্ত এসেছি। আমার নামে এখন পর্যন্ত কোন ক্লেম নাই। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের কাগজপত্র দেখাতে বলেন। আর আপনারা খোঁজ নিন আমার কী প্রোপার্টিজ আছে।’
বাংলানিউজে সংবাদটি প্রকাশিত হয় ২৪ অক্টোবর ২০১৯