আমদানি না করেও দেড় দশক ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ২৮টি শোরুমে ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রি করছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, ডায়মন্ডের নামে মোজানাইট কিংবা জিরকান পাথর বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগের বিষয়টি আইন প্রণয়নকারী সংস্থা খতিয়ে দেখছে। তবে গ্রাহক হিসেবে যারা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড থেকে ডায়মন্ড কিনেছে, তাদের মাথায় এখন হাত। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে বিষয়টি সাইকোলজিক্যাল। কারণ, প্রকৃতপক্ষে ডায়মন্ড একবার কিনলে এসব ডায়মন্ডের আর কোনো বিক্রয় মূল্য নেই। আবার যে দামে এসব ডায়মন্ড বিক্রি হয়, তাতে এগুলো খনি থেকে উত্তোলিত হিরা-চুনি-পান্নার মতো প্রকৃত ডায়মন্ড হওয়া সম্ভব নয়।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের খুলনা শাখায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়— এ গয়নাগুলো ওজনে বিক্রি হয় না, বিক্রি হয় নির্ধারিত দামে। ডায়মন্ডের নামে মোজানাইট হোক আর জিরকন হোক, সাথে যে সোনাটুকু থাকে ওটুকুর তো সোনা হিসেবে দাম আছে। খুলনা শাখায় গিয়ে একটি ‘হিরার গয়না’-এর দাম দাঁড়ালো ৭২,০০০ টাকা। বিক্রেতা জানালেন গয়নাটিতে ১৮ ক্যারেটের ৪ আনা স্বর্ণ আছে। ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি যদি ১ লক্ষ টাকা ধরা হয়, তাহলে ৪ আনা স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ২৫ হাজার টাকা। স্বর্ণের দাম বাদ দিলে এ গয়নাটির ক্ষেত্রে ‘এ হিরার’ দাম দাঁড়াচ্ছে ৪৭ হাজার টাকা। ৪৭ হাজার টাকায় হিরা হবে না, আবার জিরকন বা মোনাজাইট হলে সেটি তো বলে দিয়ে দাম আরো অনেক কম নেওয়া উচিৎ। স্বর্ণের দাম আর এখানে সাথে চকচকে যা আছে সেটির দাম যোগ করলে গয়নাটির দাম হওয়া উচিৎ বড় জোর ২৬ হাজার টাকা। অথচ সেটি নেওয়া হচ্ছে ৭২ হাজার টাকা!
এখানে কথা আছে— প্রাকৃতিক হিরার পাশাপাশি ল্যাবে তৈরি ডায়মন্ডও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত। এতে দোষের কিছু নেই। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড যদি ল্যাবে তৈরি (ল্যাব গ্রোন) ডায়মন্ডও বিক্রি করে থাকে, তাহলেও দামের হিসেবটি মেলে না। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে ল্যাবে তৈরি ডায়মন্ড ১ ক্যারেটের (০.২ গ্রাম) দাম ১ হাজার ডলারের আশেপাশে। টাকার হিসেবে যে দাম আসে তাতে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ল্যাবে তৈরি ডায়মন্ডও দিতে পারছে না। প্রশ্ন হচ্ছে— ডায়মন্ডের নামে তাহলে তারা আসলে কী বিক্রি করছে? প্রাকৃতিক ডায়ন্ডের দাম বাংলাদেশের গড় ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ০.২ গ্রামের দাম পড়বে ৫ হাজার ডলার থেকে ৯ হাজার ডলার। টাকার হিসেব করলে সেটি এদেশে কয়জনে কিনতে পারবে? তা দিয়ে কি ২৮ টি শাখার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলবে?
ডায়মন্ড ব্যবহারের এ বিষয়টিকে একাডেমিক্যালি বলা হয়— সাইকোলজিক্যাল ম্যানিপুলেশন। যে ক্রেতা এটি কিনছে তার মনস্তত্বে সমস্য, একইসাথে টাকার উৎস প্রশ্নসাপেক্ষ। যে কোম্পানি এটি বিক্রি করছে, তারা মাফিয়া, এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মদদপুষ্ঠ। এ ধরনের মাফিয়াতন্ত্র পৃথিবীব্যাপি আছে। পুঁজিবাদ এটিকে সমর্থন করে। এ ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে দামের প্রশ্নটি যদি এড়িয়ে যেতে চাওয়া হয়, তাহলে প্রশ্ন থাকে কোম্পানিটি নিয়মিত ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছে কিনা। প্রশ্ন থেকে যায়— তারা টাকা পাচারের সাথে জড়িত কিনা। এ ধরনের বিলাসদ্রব্যের ক্ষেত্রে দাম কত হবে সেটি পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে কোম্পানিই নির্ধারণ করে, মূলত ব্রান্ড ভ্যালু হিসেবে এ দাম নির্ধারিত হয়। না হলে পণ্য হিসেবে নাইকি/এডিডাসের পণ্যের দাম কি এতটা বেশি হওয়ার কথা?