ব্যাংকে রেখে ৩ বছরে ১ লক্ষ টাকায় আপনি ৭০ হাজার টাকা ঠকেছেন

স্বর্ণ

নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত বড় আশা নিয়ে দুর্দিনের জন্য কিছু টাকা জমায় ব্যাংকে। তারা ভাবে— তাদের টাকা বাড়ছে। না বাড়ুক অন্তত না কমলেও চলে। কিন্তু ব্যাংকে আপনার জমানো টাকা কমে যাচ্ছে, হু হু করে কমে যাচ্ছে। আপনি কি তা বুঝতে পারছেন?

আর আপনি লস করছেন মানে টাকাটা কারো না কারো পকেটে ঢুকেছে। কার পকেটে ঢুকেছে? ঋণ খেলাপির পকেটে ঢুকেছে। যে ব্যাংকার ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে ১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, তার পকেটে ঢুকেছে। যে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় খাটিয়ে লাভ করতে পেরেছে, তার পকেটে ঢুকেছে। যে স্বর্ণের দোকানদার দোকানে স্বর্ণের মজুদ বাড়িয়েছে, তার পকেটে ঢুকেছে। বসুন্ধরা গ্রুপ স্বর্ণের কারখানা করার নামে স্বর্ণ মজুদ করেছে, ফলে তাদের পকেটে ঢুকেছে। এমন কি যে ব্যক্তি টাকাটা ব্যাংকে না রেখে ৩ বছর আগে ৭০০ টাকা দরে কেজি ওজনের ইলিশ মাছ কিনে খেয়েছে, তার পকেটেও কিছুটা ঢুকেছে।

তিন বছর আগে এক কেজি ওজনের একটা ইলিশ মাছের দাম ছিলো ৭০০ টাকা। এখন ১৬০০ টাকা। ৩ বছরে ৭০০ টাকা ব্যাংকে রেখে এখন কত হয়েছে? বড়জোর ৯০০ টাকা। কত ঠকলেন?

গত তিন বছরে বাংলাদেশের প্রকৃত মুদ্রাস্ফিতি যদি স্বর্ণের বাজার দরে হিসেব করা হয়, তাহলে টাকার মূল্যমান অর্ধেক হয়েছে। ০৯/০৫/’২১ তারিখে ২১ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি ছিলো ৬৬ হাজার টাকা। ২৫/০৯/’২৪ তারিখে, অর্থাৎ আজকে ২১ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা।

বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম লাগামহীনভাবে কেন বাড়লো, সেটি একটি প্রশ্ন বটে। এ মূল্যবৃদ্ধি খাদ্যমূল্যস্ফিতি হিসেবেও অনেক বেশি। বিশ্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়িয়েছে, মার্কিন ডলারে আস্থা কমেছে, মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে স্বর্ণে মজুদ নিরাপদ ভেবেছে, ইত্যাদি কারণে বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। করোনা মোকাবেলা করতে, পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে টাকা ছাপিয়ে অনেক দেশ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, গরীব মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে, টাকার অবমূল্যায়ন করে এবং সোনার দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সে মাশুল এখন গরীব মানুষকেই দিগুণ হারে দিতে হচ্ছে।

অর্থাৎ, করোনা বিপর্যয়ে ক্ষতির শিকার অবশেষে গরীব মানুষই, এবং বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে সেটি খুব ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। কারণ, এ ধরনের দেশে রাষ্ট্র যেহেতু জনগণকে চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিপদ থেকে পরিত্রাণের নিশ্চয়তা দেয় না, জনগণ তাই ব্যাংকে কিছু টাকা জমিয়ে নিরাপত্তা খোঁজে, জনগণের সে টাকা যদি এভাবে সিনতাই হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীতে ন্যায্যতার যে প্রশ্ন তৈরি হয়, সেটির দায় আসলে কার?

খেলাপি ঋণের কথা বাদ দিলাম, ভালো ঋণের কথাতেই আসি। আমাদের ব্যাংকগুলোর সফলতা নির্ভর করে ঋণ প্রদান, ঋণ আদায়, এবং লাভের অংকের হিসেবে। কিন্তু এ হিসেবের মধ্যেও লুকিয়ে থাকতে পারে জনগণের জন্য ভয়ানক এক ক্ষতির হিসাব।

ধরুণ, একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ৩ বছর আগে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে স্বর্ণে মজুদ করেছে। যদিও স্বর্ণের ব্যবসায় ঋণ হয় না, তাতে কী? ব্যাংকার চাইলে অনেক কৌশলে ঋণ দিতে পারে, যেহেতু এখানে আদায়ের গ্যারান্টি আছে। ৩ বছরে ঋণের টাকা সুদসহ শোধ করতে হয়েছে তাকে ১৩ কোটি টাকা, মানে ৩ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু ১০ কোটি টাকার স্বর্ণ মজুদ করে ৩ বছরে লাভ করেছে সে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। আবার স্বর্ণের উৎস নিয়েও রয়েছে বড় প্রশ্ন। বেশিরভাগ স্বর্ণই যদি চোরাকারবারির হয়, তাহলে লাভের অংকটি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

ফলে হিসেবটি শুধু ঋণ খেলাপের নয়, টাকা কোথায় বিনিয়োগ হচ্ছে, সেটিও একটি বড় বিষয়। একই কথা খাটে ঋণের টাকা জমিতে বিনিয়োগ হলে, যেভাবে আসলে ভূমিদস্যু তৈরি হয়।

একটা দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ না করলে, দুর্নীতি ব্যাংক ব্যবস্থাকেও গ্রাস করে ফেললে সে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে ধ্বসে পড়ার কথা। প্রশ্ন হচ্ছে— বাংলাদেশে কি পুরোপুরি ধ্বস নেমেছে, নাকি এখনো কিছুটা বাকী আছে?

জুয়েলার্সে স্বর্ণের মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট দেখতে ফলোআপ নিউজে চোখ রাখন।

বাংলাদেশে স্বর্ণের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে যে দশ ব্যক্তি

দেশে স্বর্ণের চাহিদা কয়েক টন,  বৈধ পথে আসে মাত্র কয়েক শো কেজি