মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-০২ সালে বাংলাদেশে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টনে। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ধরা যাক সেটি ৬ লক্ষ মেট্রিক টন। ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়ছে, একইসাথে দামও বাড়ছে। কেন? যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে তার চেয়েও অধিক হারে ইলিশ মাছে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, তাহলে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কেন? জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মূল্যস্ফিতি —ইত্যাদি যেকোনো সূচকে ইলিশ মাছের মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক।
২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ছিলো ১৩ কোটি ৫ লক্ষ, ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্যানুযায়ী জনসংখ্যা ছিলো ১৪ কোটি ৪০ লক্ষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশে বর্তমান জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লক্ষ। ২০০১ থেকে ২০২৪, ইলিশ মাছে উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণ, কিন্তু জনসংখ্যা দেড় গুণও বাড়েনি। তাহলে কেন দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না?
এ বিষয়ে ফলোআপ নিউজ কথা বলে খুলনা মৎস্য বাজার সমিতির সভাপতি এবং মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানালেন, আগে ইলিশ মাছ ছিলো মৌসুমি মাছ, কিন্তু এখন সারা বছর ইলিশ মাছ খাওয়া হয়। কমবেশি ধরা হয়, পাশাপাশি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। ফলে এটি ইলিশ মাছে দাম বাড়ার একটি বড় কারণ। একইসাথে তিনি বিভিন্নভাবে ইলিশ মাছ রপ্তানির বিষয়টিও বললেন। তিনি জানালেন ইলিশ শুধু ভারতে নয়, বিভিন্ন উপায়ে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও রপ্তানি হয়ে থাকতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন্য মৎস্য ব্যবসায়ী জানালেন, মূলত সিন্ডিকেট করেই ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ইলিশ মাছ যখন ব্যাপক হারে ধরা পড়ে, তখন যদি তা একসাথে বাজারজাত হয়, তাহলে ইলিশের দাম বর্তমান দামের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কারসাজ্জি রয়েছে। বাজারে কতটুকু ইলিশ সরবরাহ হবে, সেটি ইলিশ মাছের প্রাচুর্যতার ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সিন্ডিকেট বাজারে কতটুকু মাছ ছাড়বে তার ওপর।
ফলোআপ নিউজ একটি হিসেব করে দেখেছে— এক কোটি মানুষ যদি সপ্তাহে ২০০ গ্রাম বা বছরে ১০ কেজি ইলিশ মাছ খায়, তাহলে বছরে ইলিশ মাছ লাগে ১ লক্ষ টন। এই হারে খেলেও বর্তমানে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে তাতে ৬ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ হওয়ার কথা । সপ্তাহে যদি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছ মানুষ খায়, তাহলে ১২ কোটি মানুষ সারা বছর ইলিশ খেতে পারার কথা। সেখানে মৌসুমেও ১২ কোটি মানুষ এই হারে ইলিশ খেতে পারছে না।
বেশিরভাগ মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না। কেন পারছে না? ইলিশ তাহলে যাচ্ছে কোথায়? নাকি কিছু মানুষ খুব বেশি খাচ্ছে? কত বেশি খাচ্ছে?
খুলনার বাজার ঘুরে দেখা গেছে ৩০০/৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে। ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা থেকে ১৮৫০ টাকা কেজি দরে। খুলনা নিউমার্কেটের খুচরো বিক্রেতা এস.এম. ইদ্রিসুর রহমান জানালেন, সারাবছর তিনি প্রায় একই দরেই মাছ বিক্রি করেন। তিনি যেমন কেনেন তেমন বিক্রি করেন বলে জানালেন। তিনি আরো জানালেন— ১৮৫০ টাকার ১ কেজি ইলিশ বিক্রি করলে তার ৫০ টাকার বেশি লাভ থাকে না।