খুলনা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কে?

রেজিস্ট্রারের কার্যালয়
বাহাউদ্দিন
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাহাউদ্দিন খন্দকার নির্বাচিত সভাপতি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি নির্বাচিত সভাপতি নন, তিনি মনোনীত সভাপতি।

 

 

 

দলিল লেখক বাহাউদ্দিন খন্দকারের সাথে ফলোআপ নিউজ কথা বলেছে। তিনি বলেছেন, খুলনা সদর এবং জেলা দলিল লেখক সমিতির সকল সদস্যের সম্মতি এবং স্বাক্ষরে নির্বাচিত সভাপতি দলিল লেখক শেখ আলমগীর-কে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে শেখ আলমগীর বলছেন, তাকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি অগঠনতান্ত্রিক, এবং এ ধরনের কোনোকিছু তাকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোশাররফ হোসেন বলছেন, তাকে (শেখ মোঃ আলমগীর) নোটিশ করা হয়েছিলো কিনা আমি জানি না। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার কারণে বিষয়গুলো আমি ভালোভাবে অবগত না। কিন্তু রেজুলুশনে লেখা রয়েছে যে, তিনিই এ সংক্রান্ত সভাগুলো আহ্বান করেছেন।

ফলোআপ নিউজ সমিতির রেজুলুশন অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে— প্রকৃতই শেখ মোঃ আলমগীর-কে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে ১৮/৪/২০২৪ তারিখে একটি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। অব্যাহতি প্রদানের পূর্বে সহ-সভাপতি দলিল লেখক শেখ মোশাররফ হোসেন দায়িত্বপালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিলো। অনাস্থা প্রস্তাবে সমিতির ৭০ জন সদস্য স্বাক্ষর করেন। একইদিনে কণ্ঠভোটে দলিল লেখক জনাব বাহাউদ্দিন খন্দকার-কে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়।

খুলনা
সমিতির কার্যালয় থেকে সংগৃহীত রেজুলুশনের কপি।

সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দলিল লেখক মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন তার (পূর্বতন সভাপতি) অনুপস্থিতির কারণে গঠনতন্ত্র মেনে সাধারণ সভা ডাকা হয়। সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সভাপতি মনোনয়ন করে অফিস সচল রাখা দরকার। এমতাবস্থায় পূর্বতন সভাপতি শেখ মোঃ আলমগীরকে অব্যাহতি দিয়ে বর্তমান সভাপতি দলিল লেখক মোঃ বাহাউদ্দিন খন্দকারকে মনোনীত করা হয়। বিষয়টি রেজুলুশন হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়, এবং রেজুলুশনে স্বাক্ষর করেন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোশাররফ হোসেন, এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (নির্বাচিত সহ-সভাপতি) শেখ মোশাররফ হোসেন।

ফলোআপ নিউজ-এর অনুসন্ধান বলছে কিছু জটিলতা থাকলেও খুলনা সদর দলিল লেখক সমিতির বেশিরভাগ সদস্য জনান বাহাউদ্দিন খন্দকারকেই সমিতির সভাপতি হিসেবে মেনে নিয়েছে। অনেকের মাঝে রাজনৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও, নিজেদের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রাখতেই তারা ইচ্ছুক।

শোনা যাক মনোনীত সভাপতি জনাব মোঃ বাহাউদ্দিন খন্দকার কী বলছেন— এ প্রসঙ্গে কথা হলেও, প্রধানত তিনি ভূমি অফিসের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্রই তুলে ধরলেন।

দলিল লেখক গোলাম মোস্তফা বলেন, একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গঠনতন্ত্র মেনে ওনাকে (শেখ আলমগীর) সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উপরের ছবিতে বাহাউদ্দিন খন্দকারকে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন দলিল লেখক রাজেন্দ্র প্রসাদ চক্রবর্তী। তিনি এখন কিছুটা ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলছেন, নির্বাচিত সভাপতিকে তখন বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি বলে এখন অনেকের কাছে মনে হচ্ছে পরিস্থিতির কারণে। তখন সবাই (সকল সদস্য) নিয়ম মেনেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলো।

খুলনা সদর দলিল লেখক সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে। ৩ বছর মেয়াদী এ নির্বাচনে শেখ মোঃ আলমগীর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রণজিৎ কুমার দাশের তুলনায় ১০ ভোট বেশী পেয়ে জয়লাভ করেন। তিনি জয়লাভ করলেও তার প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোঃ বাহাউদ্দিন খন্দকার ৩ ভোটের ব্যবধানে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোশাররফ হোসেনের কাছে হেরে যান।

শেখ আলমগীরের দাবী— একই প্যানেলভুক্ত হয়েও হেরে যাওয়াতে বাহাউদ্দিন আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন, এবং রাজনৈতিক মদদ থাকায় আমাকে জোর করে পদচ্যুত করেন। সমিতির সদস্যদের মনোনীত সভাপতি বাহাউদ্দিন খন্দকার বলছেন, সমিতির টাকা তছরুপ করার কারণে সমিতির সদস্যরা তাকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করেননি।

নির্বাচিত সভাপতি শেখ মোঃ আলমগীর যা বলছেন— তিনি বলছেন, ভয়ে এখন তিনি পদে বসতে পারছেন না, তবে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনি স্বপদে বহাল হবেন।