উইকিপিডিয়া থেকে তথ্য হুবহু কপি করে মনিষীদের আত্মজীবনী ছাপছে গ্রন্থকুটির প্রকাশনী

২০২৪

অনার্সের গাইড বইয়ের জন্য সুবিদিত প্রকাশনী দিকদর্শন। সরকারি বিভিন্ন সুবিধা নিতে, ট্যাক্স ফাঁকিসহ আরো কয়েকটি কারণে আরো বিভিন্ন নামে প্রকাশনী রয়েছে তাদের। এর মধ্যে গ্রন্থকুটির অন্যতম। ২০১৪ সাল থেকে গ্রন্থকুটির নামে তারা বইমেলায় অংশগ্রহণ করে আসছে। মূলত গাইড বই থেকে উপার্জিত টাকা ছড়িয়েই তারা বই মেলায় স্থান করে নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য কোনো বই প্রকাশে মনোযোগী না হয়ে টাকা দিয়ে দিস্তা দিস্তা কাগজ নষ্ট করে বইয়ের সংখ্যাই তারা শুধু বাড়িয়েছে।

২০২৪
বইমেলায় ২০২৪ সালের অবস্থান। কয়েক বছর ধরে বইমেলায় ৩/৪ টি স্টল দখল করে আসলেও কোনো উল্লেখযোগ্য বই তাদের নেই। ছবিঃ গ্রন্থকুটির প্রকাশনীর ফেসবুক থেকে নেওয়া।

সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয় হচ্ছে— অরবিন্দ নামে জনৈক এক জনের নাম দিয়ে তারা একটি আত্মজীবনী সিরিজ করেছে, যেখানে অধিকাংশ, অনেকক্ষেত্রে সব তথ্যই উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের নওরিন নিশা বলেন, কপিরাইট রেজিষ্ট্রেশনের আবেন করলে আমরা পাণ্ডুলিপি খতিয়ে দেখি।’ পাঠকের কাজ থেকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীমাবদ্ধ সক্ষমতার কারণে আমরা চাইলেও সকল বই চেক করতে পারি না। সীমত সক্ষমতা দিয়েই এবারের বই মেলায় আমরা দু’টো টাস্কফোর্স পরিচালনা করেছি।

গ্রন্থকুটিরের জীবনীগ্রন্থ সিরিজ কিনে ক্ষতিগ্রস্থ ক্রেতা নিপ্পন বিশ্বাস বলেন, আমি যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার চাইবো। প্রতিকার না পেলে জনস্বার্থে প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করবো।

অরবিন্দ মিত্র
এ যেন প্রকাশনীর নামে যাচ্ছেতাই করার ওপেন লাইসেন্স! তথ্যগুলো জাস্ট কপি করে নিয়ে বসিয়ে দেওয়া। অরবিন্দ মিত্রের নামে শতাধিক বই রয়েছে তাদের। অথচ জনৈক অরবিন্দ মিত্রের লেখালেখির কোনো ইতিহাসই নেই। মূলত লেখকদের জায়গা দিতে না চাওয়ার চর্চা এবং অভিসন্ধি থেকেই তারা এহেন কাজ করে থাকতে পারে বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লেখক। তিনি বলেন, “বইগুলো দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি! বইমেলায় কয়েক বছর ধরে ৩/৪ টি স্টল দখল করে থাকেন, এরকম একজন প্রকাশক কীভাবে এমনটি করতে পারেন? আমি মনে করে এ ধরনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে শাস্তির আওতায় এনে লেখালেখির জগতটাকে পরিশীলিত করা দরকার।”

উল্লেখ্য, দিকদর্শন-গ্রন্থকুটির প্রকাশনীর মালিক রতন পালের বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকি এবং টাকা পাচার সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের কমিটিতে ছিলেন, যদিও সরাসরি রাজনীতি করার ইতিহাস তার নেই। সন্ত্রাসের মদদদাতা না হলেও পুরনো ঢাকাতে সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়েই তিনি চলতে বাধ্য হয়েছেন। বইয়ের জগতটাকে বিষিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি পুরোধা না হলেও একজন।

সামাজিক কাজ বলতে— লক্ষাধিক গীতা বণ্টন তিনি করেছেন। এছাড়া হিন্দু মহাজোটের মতো উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠনগুলোতে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। হিন্দুত্ববাদের সাথে প্রকাশক আর.সি. পালকে সংযুক্ত করেছেন উগ্র সাম্প্রদায়িক মনস্ক এবং কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত সাবেক শিক্ষক হিরেন্দ্রনাথ সমাদ্দার। উল্লেখ, ২০১৩ সালে শাহবাগে সংগঠিত গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে আর.সি. পাল অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলে বলে বেড়াতেন। দেখার বিষয়— এখন তিনি কী বলে বেড়ান?

কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে বই করে ইচ্ছেমতো একটি নাম বসিয়ে দেন

কেটেছেঁটে কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে কিছু একটা বানিয়ে এক জনের নাম বসিয়ে দিলে হয়ে যায় বই। এরকম অনেক বইয়ে প্রকাশক আর.সি. পাল নিজের নামও বসিয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের মনোরঞ্জন করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিভিন্ন সুযোগ।

আর.সি. পাল
এমনকি নিজের নামেও এরকম বইগুলো করে প্রকাশনী এবং লেখালেখি জগতের এক ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
গ্রন্থকুটির
এরকম অনেক বইয়েই তিনি নিজের নাম বা অন্য কারো নাম বসিয়ে দিয়েছেন কোনো ধরনের বাছবিচার ছাড়াই।

 

 

কিছু বিতর্কিত বই

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ ভাবনা
বইটির মূল পরিকল্পনাকারীকে বাদ দিয়ে, তার ভাবনাকে স্থান না দিয়ে আওয়ামী সরকারের ২০৪১ ভিশনের আলোকে বইটি লেখানোর উদ্যোগ নেয় প্রকাশ রতন পাল।