“ভুল হলেও অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি”

পানি উন্নয়ন বোর্ড

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী

কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৪ ফেব্রুয়ারি (২০২৫) দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন কমিশনের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র।

মামলার আসামিরা হলেন পাউবোর যান্ত্রিক ওয়ার্কশপ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুব্রত অগ্নিহোত্র, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলাশ এন্টারপ্রাইজের মালিক আনোয়ার হোসেন বাবুল ও পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী রায়হান আলী।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে— দুদকের একটি তদন্ত টিম ২১ জানুয়ারি অনুসন্ধান পরিচালনা করে দেখতে পায় নগরীর জোড়াগেটে অবস্থিত যান্ত্রিক ওয়ার্কশপ নির্মাণে কাজ শেষ না করেই ১৫ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র বলেন,

দুদকের ঢাকা অফিসের নির্দেশ মোতাবেক দুদকের খুলনা অফিস অভিযান পরিচালনা করে অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি করা হয়েছে। ঢাকা অফিসে কে অভিযোগ করেছে আমি অবগত নই।

অভিযুক্ত প্রকৌশলী সুব্রত অগ্নিহোত্র বলছেন, প্রয়োজন মোতাবেক অনেক কাজই আমাদের করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান না করেই কাজ করতে হয়। পরে সমন্বয় করা হয়। খুলনা অঞ্চলে স্লুইস গেট নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রয়োজন হয়। আমার কোনো কাজেই কখনো কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি।  অগ্রিম বিলে সই করার কারণে এক্ষেত্রে একটি ভুল আমার হয়েছে, তবে অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আপনারা গেলে দেখতে পাবেন— যথাযথভাবে কাজটি সমাপ্ত হয়েছে।

দুদক অর্থ আত্মসাতের মামলা করলেও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অগ্রীম বিল উত্তোলন এবং কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বলছেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। বিল অগ্রীম নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ শেষ হতে কয়েকদিন বাকী থাকলেও জিনিসপত্র ক্রয় করা হয়েছিলো। তারপরও এক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি প্রকৌশলী সুব্রত এবং রায়হানের ওপর কোনো দায় চাপাতে রাজি হননি।

সুব্রত অগ্নিহোত্র
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ। অর্থ আত্মসাতের কথা নোটিশে উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে খুলনা নাগরিক সমাজ (খুনাস)-এর সদস্য লতা আহমেদ বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে সহনশীলতার নীতির পক্ষপাতী আমরা নই। সর্বোচ্চ শাস্তিই হওয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আমাদের পর্যালোচনা বলছে— এক্ষেত্রে অধিদপ্তর অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে এতটা কঠোর না হলেও পারতো। একই দৃষ্টান্ত সবক্ষেত্রে আমরা পাচ্ছি না। আমাদের হাতে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে— এরকম অনেক কেস স্টাডি রয়েছে, যারা পূর্ণ বেতনে চাকরিরত রয়েছেন। এক্ষেত্রে অন্য কোনো মহলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আছে কিনা খতিয়ে দেখা দরকার।

ফলোআপ নিউজ-এর অনুসন্ধান বলছে— দুদকের মামলা হলে সাময়িক বরখাস্তের দৃষ্টান্তও রয়েছে। তবে মামলা হলেই বরখাস্ত করতে হবে, এরকম কোনো আইন নেই। মূলত সংশ্লিষ্ট বিভাগই সিদ্ধান্তটি নিয়ে থাকে। চাকরির প্রবিধানমালা-২০১৩-এর ধারা ৪৮-এর ভিত্তিতে ৫৫ (১) অনুযায়ী গুরুদণ্ডের সম্ভাবনা থাকলে চাইলে বিভাগ তার কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে— প্রদত্ত মামলায় গুরুদণ্ডের সম্ভাবনা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, আদৌ হয়েছে কিনা?

গুরুদণ্ডের সম্ভাবনা থাকলেও প্রবিধান অনুযায়ী বিভাগ চাইলে এক্ষেত্রে কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পরিবর্তে ছুটি প্রাপ্যতার সাপেক্ষে ছুটিতে যেতে নির্দেশ প্রদান করতে পারে। অনেকক্ষেত্রে সেটি করাও হয়ে থাকে।

জোড়াগেটে অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্কশপ পরিদর্শন শেষে

এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে কিছু পুরাতন স্থাপনাসহ জায়গাটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়েছিলো। পরিণত হয়েছিলো মাদকসেবিদের আস্তানায়। হত এক বছর যাবত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে জায়গাটিকে সচল করা হয়েছে বলে তারা জানালেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ যান্ত্রিক ওয়ার্কশপে কর্মরত (দেখাশোনার দায়িত্বে) রয়েছেন আলতাফ হোসেন। হেলপার আলতাফ হোসেন বলেন, আমি এখানে দুই বছর ধরে আছি। আগে এটি পরিত্যাক্তই ছিলো মনে হয়। বর্তমান প্রকৌশলী স্যার স্থাপনাগুলো মেরামত করে জায়গাটি ব্যবহার উপযোগী করেছেন।

খুলনা যান্ত্রিক ওয়ার্কশপ
ছবি-১ঃ ২ বছর আগেও জায়গাটি এমন জলাবদ্ধ হয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকতো। ছবি-২ঃ গেট বদল করে রং করে সুন্দর করা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে প্রবেশের জন্য রাস্তাটিও। ছবি-৩ঃ এই ওয়ার্কশপটিকে ঘিরেই (মেরামতের কাজ নিয়ে) সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ। ছবি-৪ঃ জরাজীর্ণ গেস্ট হাউজ কাম অফিসটিকে পুননির্মাণ করা হয়েছে। ছবি-৫ঃ ওয়্যার হাউজটিকেও মেরামত করা হয়েছে। ছবি-৬ঃ ভেতরে এখন দু’জন লোক সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকায় জায়গাটি এখন আর অপকর্মে ব্যবহৃত হয় না।

 

 

ব্যবহার উপযোগী করা হলেও জায়গা এবং স্থাপনাগুলো ব্যবহার হচ্ছে কিনা এবং হবে কিনা— সেটিই সচেতন নাগরিক সমাজের বড় প্রশ্ন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানালেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যে ধরনের কাজ করে থাকে সে তুলনায় এটি খুব ছোট কাজ। কিন্তু অনিয়ম তো অনিয়মই, আমলে নিতে হবে। একইসাথে নবাগত এবং জুনিয়র কর্মকর্তাদের ভুলত্রুটি অনেকক্ষেত্রে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেও দেখতে হয়।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।