বাংলাদেশে হিন্দু উগ্রবাদের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত কে এই হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস?

হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস
বাংলাদেশে আরএসএস-এর প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক কুশালবরণ চক্রবর্তী (ডানে) এবং অধ্যাপক হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের (বামে) নাম বারে বারে উঠে আসে। ছবিঃ ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

হিন্দু সংস্কার আইনের বিরোধিতাকারী সাবেক কলেজ শিক্ষক হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক কুশলবরণ চক্রবর্তীর নাম হিন্দু উগ্রবাদের মদদদাতা হিসেবে বারে বারে উঠে আসে। তারা বাংলাদেশে আরএসএস-এর অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত। এদের পিছনে দীর্ঘদিন ধরে টাকা ঢেলে আসছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।

সম্মিলিত সনাতন পরিষদ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মিলিত সনাতন পরিষদের ব্যানারে হিন্দু পারিবারিক আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগের বিরোধিতা করেন প্রবীণ এবং চিন্তাভাবনায় আদিম অধ্যাপক হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। ছবিঃ ঢাকা পোস্ট।

তিনি হিন্দু সংস্কার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, এবং বারে বারে হিন্দু রীতিনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোতে বাধ সাধেন।  সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সভাপতি হিসেবে তিনি বলেন, শাস্ত্রীয় বিধান মতে সম্প্রীতিপূর্ণ পারিবারিক বন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায় শান্তিতে ঘর-সংসার করে আসছে। তাই প্রচলিত হিন্দু আইন পরিবর্তন করে এ সংক্রান্ত নতুন আইনের কোনো প্রয়োজন নেই।

হিন্দু মহাজোট
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের আরএসএসপন্থী নেতাদের সাথে অধ্যাপক হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। অনেকের মতো এই হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসই আরএসএস-এর বাংলাদেশ শাখার অন্যতম থিংক ট্যাক। ছবিঃ বাংলা নিউজ।

এর আগে ২০২১ সালে হিন্দু মহাজোট সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর ভাষায় হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কারের বিরোধিতা করে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং স্ত্রী শাহীন আনামের প্রতি বিষোদগার করে।

কট্টরপন্থী এবং উগ্রবাদে বিশ্বাসী এ নেতারা বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার বছরের ঐক্য এবং ঐতিহ্যকে বিলীন করার অপচেষ্টা নিয়ে হিন্দুদের ঘরে ঘরে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’।

সংস্থাটির কর্ণধার শাহীন আনাম এবং তার স্বামী দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে এ চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করেছিলো বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। উক্ত সংবাদ সম্মেলনেও উগ্রবাদী এবং দারিদ্র্য তথা বর্ণপ্রথা জিইয়ে রেখে হিন্দু ধর্মকে নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশকারী এবং খায়েশ পূরণকারী হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন।

অথচ পাশের দেশ ভারতে হিন্দু পারিবারিক আইনের সংস্কার করে আইন হয়েছে অনেক আগে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে পিতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ে উভয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করে।

প্রচলিত হিন্দু আইনে নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। ছেলেরা বাবার সম্পত্তি পেলেও মেয়েরা পায় না। সম্পত্তিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের কোনো ধরনের উত্তরাধিকার না থাকা, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও অধিকার না থাকা, শত নির্যাতনেও বিচ্ছেদের বিধান না থাকার মতো বৈষম্য দূর করতে দেশে প্রচলিত হিন্দু আইনগুলো সংস্কার প্রয়োজন বলে অনেকদিন ধরে দাবী রয়েছে।

হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এবং প্রকাশক রতন পাল সহ অন্যান্য কয়েকজন ব্যবসায়ীর পৃষ্ঠপোষকতায় একদল কট্টর এবং উগ্রবাদী হিন্দু নেতারা দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিরোধিতা করে আসছেন। ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকলেও সমাজের নানান স্তরে এরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে আসছেন নিজেদেরকে প্রয়োজনীয় এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত সুযোগসুবিধার মধ্যে রেখে।

ভিডিও লিংকে কুশলবরণ চক্রবর্তী এবং হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে দেখা যাচ্ছেঃ