ভারতের একটি মসজিদে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। মসজিদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও করছেন তারা।
বিহারের নালন্দার মাঢ়ি নামক একটি গ্রামের ঘটনা এটি। আজ থেকে সত্তর/আশি বছর আগে, এই গ্রামে বাস ছিলো অসংখ্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর।
কিন্তু ধীরে ধীরে নানা কারণে কমতে থাকে তাদের সংখ্যা। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময়ে, বেশিরভাগ মুসলিম পাড়ি জমিয়েছিলো পাকিস্তানে।
সেই থেকে অত্র এলাকায় ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে ইসলাম ধর্মের লোকজনের সংখ্যা। ১৯৮০ সালের পর, একেবারেই মুসলিম শূন্য হয়ে যায় গ্রামটি।
কিন্তু রয়ে যায় শত বছর ধরে ব্যবহার করা একটি মসজিদ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজন চলে গেলে, ধীরে ধীরে ঐ মসজিদটিও পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে থাকে।
বর্তমানে গ্রামটিতে রয়েছে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। যাদের প্রত্যেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের।
অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকায় ও খুব পুরনো হওয়ার কারণে, মসজিদটি বিবর্ণ হয়ে গিয়ে একপ্রকার ভূতুড়ে মনে হতো।
তাই কয়েকজন গ্রামবাসী মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা শত বছরের পুরনো এই ঐতিহ্য, এবং হাজারো মানুষের স্মৃতি, এভাবে বিলীন হতে দিবেন না।
সকলে একসাথে মিলে মসজিদটিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেন। পাশাপাশি কয়েকজনে মিলে এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে ফেলেন।
১৯৮১ সাল থেকে মসজিদটিকে যত্ন সহকারে টিকিয়ে রেখেছে বাসিন্দারা। বর্তমানে মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বেশ কয়েকজন।
তারা প্রতিদিনই ঝাড়ু দেওয়া, ধৌত করা সহ, সবকিছুর দায়িত্ব পালন করে। আর এইসব কিছুর খরচ গ্রামের সকলে মিলে বহন করে থাকেন।
পূর্বে যারা গ্রামে বাস করতেন, তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখতে, তাদের ধর্ম পালন করারও নিয়ম রয়েছে গ্রামটিতে।
মসজিদটিতে প্রতি ওয়াক্তেই আজান দেওয়া হয়, সকলে মিলে জামায়াতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন।
কিন্তু সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায়, তারা মুসলিমদের মতো আজান দিতে পারেন না। তাই পেনড্রাইভে সেইভ করা আজান স্পিকারে বাজিয়ে, সবাইকে নামাজের জন্য দাওয়াত দেওয়া হয় সেখানে। এরপর সকলে মিলে নামাজ আদায় করেন।
আজানের ধ্বনিতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা বিরক্ত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম এখানকার বাসিন্দারা। তাদের মতে,
গ্রামে শুধু দুটি জাতি রয়েছে, তারা হলো নারী ও পুরুষ। তাছাড়া হিন্দু ও মুসলিমদের শিরায় একই রক্ত বয়ে চলছে। তাই আজান বা ইসলামের ঐতিহ্য রক্ষা করতে, তাদের কারোই কোনো সমস্যা হয় না।
গ্রামবাসী বলেন, এই মসজিদ শুধু তাদের ঐতিহ্যই নয় বরং তাদের আত্মা, যেখানে মাথা ঠেকালে তারা শান্তি পান।
এমনকি এখানকার লোকজনেরা কোনো শুভ কাজ করার আগে, অবশ্যই সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দোয়া প্রার্থনা করেন। এরপর তাদের প্রার্থনার স্থান মন্দিরে যান।
গ্রামে কোনো বিবাহ হলে, নতুন যুগল মসজিদে গিয়ে আশির্বাদ নিয়ে আসে। মোট কথা গ্রামটির বাসিন্দাদের কাছে, এই মসজিদ যেন সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ একটি সম্পদ।
তাই তারা বলেন, এই মসজিদ এবং আজানের প্রতি তাদের প্রচণ্ড বিশ্বাস রয়েছে। সেই বিশ্বাস থেকেই সমস্ত ঐতিহ্য রক্ষা করার চেষ্টা করছেন তারা।
মসজিদটি, কে, কখন নির্মাণ করেছিলেন তা কারোই সঠিক জানা নেই। এমনকি এর কোনো নামও নেই। স্থানীয়রা শ্রদ্ধাবোধ থেকে এটিকে দরগা বলে সম্বোধন করেন।
ধারণা করা হয়, প্রায় দুইশত বছর আগে নির্মিত হয়েছিলো মসজিদটি। কিন্তু পুরনো হলেও, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ দেখে আঁচ করা যায়, কতোটা পরম যত্নের সাথে মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ চলছে।
তথ্যসূত্রঃ অনালাইন প্লাটফর্ম