১৩৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী ইন্দ্রমোহন সুইটস্-এর উত্তরাধিকার কে?

খুলনা

ইন্দ্রমোহন সুইটসের শুরুটা হয়েছিল খুলনার ভৈরব নদের তীরে হেলাতলা রোডের এক গোলপাতার ঘরে, ১৮৯০ সালে। শুরু করেছিলেন ইন্দ্রমোহন দে। ১৮৯০ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার ধূলসরা গ্রাম থেকে খুলনার বড় বাজারে আসেন কিশোর ইন্দ্রমোহন দে। তখন ভৈরব নদের পাড়ে বসতো সাহেবের হাট নামে একটি হাট। এখানেই শুরু ইন্দ্রমোহন ‍সুইটস্-এর যাত্রা। সাহেবের বাজার তখন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী-বণিকদের ভিড়ে জমজমাট থাকতো। 

খুলনা
খুলনার ঐতিহ্যবাহী ইন্দ্রমোহন সুইটস্।

সাতক্ষীরার সন্দেশ, বগুড়ার দই, কিংবা কুমিল্লার রসমালাইয়ের মতো অঞ্চলের নামে নয়, বরং নিজ নামে সমৃদ্ধ ইন্দ্রমোহন সুইটস্। নিজের কারিগরী দক্ষতা এবং সততা দিয়ে ইন্দ্রমোহন সুইটস্ নাম করেছিলো। তিনি কোনো নাম দিয়ে শুরু করেছিলেন না। তবে কালে কালে তার নামেই তার মিষ্টি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে তার ছেলে বেনিমাধব দে ‘ইন্দ্রমোহন সুইটস্’ নামে দোকান শুরু করেন।

মান ধরে রাখতে যার তার কাছে স্বত্বের ঠিকাদারি দিয়ে ব্যবসা বাড়াতে চাননি ইন্দ্রমোহনের ছেলে বেনিমাধব বাবু। এ কারণেই ইন্দ্রমোহনের পানতুয়া খেতে দেশ বিদেশ থেকে আজও মানুষ আসে খুলনার ইন্দ্রমোহন সুইটস্-এ।

পাঁচ পদের মিষ্টি নিয়ে আজও ইন্দ্রমোহন আদী মৌলিকত্ব ধরে রেখেছে।মিষ্টির পদের সংখ্যা যেমন বাড়ায় না, পাশাপাশি ইন্দ্রমোহন সুইটস্ মিষ্টিও বানায় প্রতিদিন পরিমিত।

ফলে পুরনো ক্রেতারা এখনো আস্থা রাখেন ইন্দ্রমোহন সুইটস্-এ।

তবে দোকানটির টিকে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে— দোকানটির উত্তরাধিকার এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার দায়-দায়িত্ব এবং আগ্রহ নিয়ে।

৪৫ বছরের কর্মচারী কমল চন্দ্র শীল কেন ‘ইন্দ্রমোহন সুইটস্’ নিজের মনে করে পরিচালনা করতে পারছেন না, সে কথা বলতে গিয়েও বললেন না। অবশেষে জানা গেলো যে, ইন্দ্রমোহন সুইটস্-এর স্বত্ব নেওয়ার দাবী করছেন গোপী কিষান মুন্ধড়া নামে খুলনার একজন বড় ব্যবসায়ী।

গোপী কিষান-এর ভাই শরৎ মুন্ধড়া বললেন, ইন্দ্রমোহন সুইটস্-এর স্বত্বাধিকারী বেনিমাধব দে দোকানের স্বত্ব তাদের কাছে বিক্রয় করেছেন। তবে কমল চন্দ্র শীল বলছেন, তার মালিক স্বত্ব বিক্রি করেননি। তিনি যেহেতু দেশে থাকেন না, ফলে আমি এককভাবে চালাতে চাইলে কোনো বাধা আছে মনে করি না।

তিনি আক্ষেপের সুরে আরো বললেন, লাভের ৬০% আমার দিয়ে দেওয়া লাগে। কাকে দিতে হয় সেটি কারিগর এবং দোকানটির বর্তমান পরিচালক কমল চন্দ্র শীল আর বললেন না।

কমল চন্দ্র শীল-এর সহযোগী কারিগর কমল ঘোষ বললেন, আমিও চল্লিশ বছর ধরে এই দোকানে আছি। স্বত্ব দিতে চাইলে মালিক আমাদেরই দিতে পারে। অন্য কাউকে তিনি দেবেন না বলে আমাদের বিশ্বাস।

ইন্দ্রমোহন সুইটস্
১৩০ বছরের মিষ্টির দোকান খুলনার `ইন্দ্রমোহন সুইটস` মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার তার স্ত্রী ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে ইন্দ্রমোহন সুইটসে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির স্বাদ নিয়েছিলেন। সে সময় মিলার কারিগর কমল চন্দ্র শীলকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন কারিগর কমল চন্দ্র শীল। তিনি যাননি ‘ইন্দ্রমোহন সুইটস্’ টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব অনুভব করেছিলেন বলে।